দু’ফোটা আনন্দ অশ্রুর গল্প
প্রকাশ: ২০১৬-০৫-১৭ ১৩:২৭:০৪
তিনি আসবেন বলে সেদিন প্রকৃতির সাজ ছিল অন্যরকম। ঈশানকোণে কালবৈশাখীর মেঘরাশি সেদিন থমকে ছিল বটে, তবে পরমুহূর্তেই কেটে যায়। সকাল থেকেই ঝড়ো হাওয়া, মুসলধারে বৃষ্টি। প্রকৃতির বারিধারায় রাজধানীর পিচঢালা পথ তখন পানিতে টইটুম্বর।
যেন স্বজন হারানো বেদনার অশ্রুতে প্রকৃতিও শরীক হয়েছে। জাতির জন্মদাতাকে হারিয়ে সেদিন বাংলা মা শোকের পাথর বুকে চেপে স্তব্ধ হয়েছিলেন। আজ যেন পিতা হারানো কন্যাকে কাছে পেয়ে ডুকরে কেঁদে উঠলেন।
সে ছিল আবেগের কান্না, বাংলা মাকে ফিরে পাবার কান্না। যে কান্নায় অশ্রু ঝরলেও, আবেগের ঘনঘটায় তা আনন্দ অশ্রুতে রূপ নেয়।
আজ ১৭ মে। ১৯৮১ সালের এই দিনে বাঙালির আরেকটি ইতিহাসের জন্ম। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনার দেশে ফেরার দিন।
আজ থেকে পয়ত্রিশ বছর আগের কথা। সেদিনের রাজনীতি আটকে ছিল সামরিক জান্তার বাহুবলে। দেশ-বিদেশের ষড়যন্ত্র তখনও বিদ্যমান। জাতির জনককে হারিয়ে বাঙালি তখন দিশেহারা। গণতন্ত্র তখন নির্বাসিত। পথের কাঁটা সর্বত্রই বিছানো।
তবে কোনো বাধা আর প্রতিকূলতাই তাকে আটকাতে পারেনি সেদিন। সকল ভয় আর রক্তচক্ষু জয় করেই শেখ হাসিনা সেদিন বাংলা মায়ের কোলে ঠাঁই নিয়েছিলেন।
আজকের এই দিনে জননেত্রী শেখ হাসিনা ছয় বছর প্রবাস জীবন থেকে দেশে প্রত্যাবর্তন করার পর তাঁকে এক নজর দেখার জন্য কিশোর, তরুণ, যুবক, বৃদ্ধ নির্বিশেষে অগণিত মানুষ বাস, ট্রাক, লঞ্চ, স্টিমার ও ট্রেনযোগে দেশের দূরদূরান্ত থেকে ঢাকায় এসে সমবেত হয়।
এদিন সামরিকতন্ত্রের বিরুদ্ধে অধিকারবঞ্চিত মুক্তিপাগল তথা গণতন্ত্রকামী লাখো জনতার কণ্ঠে গগনবিদারী শ্লোগান ওঠে, ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’, ‘বঙ্গবন্ধুর রক্ত বৃথা যেতে দেব না’, ‘আদর্শের মৃত্যু নেই, হত্যাকারীর রেহাই নেই, শেখ হাসিনার আগমন, শুভেচ্ছা স্বাগতম’।
কুর্মিটোলা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে শেরেবাংলানগর পর্যন্ত জনসমুদ্র। রাজধানীর সব পথ মিশে গিয়েছিল বিমানবন্দরে। সবার লক্ষ্য ছিল বিমানবন্দর যা, শাসক মহলের কাছে তো ছিল কল্পনার অতীত।
১৯৮১ সালের ১৪, ১৫ ও ১৬ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিল অধিবেশনে শেখ হাসিনা দলের সভাপতি নির্বাচিত হন। পরে ওই বছর ১৭ মে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আসেন এবং মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ আয়োজিত সমাবেশে অংশ নেন।
বিশাল সংবর্ধনায় ভাষণকালে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডসহ পরবর্তীকালের বিভিন্ন হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই। বিচার চাই জনগণের কাছে, আপনাদের কাছে। বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার বিচার করবে না। ওদের কাছে বিচার চাইবো না। আপনারা আমার সঙ্গে ওয়াদা করুন, বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আমরা বঙ্গবন্ধুসহ অন্যান্য নেতার হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণ করবো।’
আজ এক রাজনৈতিক পরিণত বয়সে শেখ হাসিনা। পরিণত বয়সে বাংলাদেশ। স্বাধীনতার সাড়ে চার দশকে এসে আজকের বাংলাদেশ যেন বঙ্গবন্ধু তনয়া শেখ হাসিনাতেই অধিক নির্ভার, অধিক রক্ষিত।