রাবির ২২তম সিনেট অধিবেশন অনুষ্ঠিত
প্রকাশ: ২০১৬-০৫-১৯ ১৯:২৭:৪৫
পরিবর্তিত সময়ের প্রয়োজন ও চাহিদার সাথে সঙ্গতি রেখে দক্ষ হৃদয়ালু আর বিবেকবান মানবসম্পদ তৈরি করতে চাই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটের ২২তম অধিবেশনে সভাপতির অভিভাষণে উপাচার্য প্রফেসর মুহম্মদ মিজানউদ্দিন এ কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, ‘একটি দেশের শক্তিঘর হিসেবে কাজ করে সে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয় হবে এমন একটি স্থান যেখানে চারদিক থেকে সব ধরনের জ্ঞান অর্জন, জ্ঞান সৃষ্টি ও জ্ঞান চর্চার জন্য লোক আসবে। ধীশক্তির নিরাপদ প্রসার ও কল্পনার দ্বার হবে উন্মুক্ত। জিজ্ঞাসাকে করা হবে উৎসাহিত। মনের সাথে মন এবং জ্ঞানের সাথে জ্ঞানের মিথষ্ক্রিয়ায় আবিষ্কারকে করা হবে যাচাই, নিখুঁত এবং ত্রুটিমুক্ত। পারস্পরিক শিক্ষা যা সমাজ অগ্রগতির এক অবিরাম উপাদান- তার চর্চাভূমি হবে বিশ্ববিদ্যালয়।’
উপাচার্য তাঁর বক্তব্যে আরও বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়নে যুগান্তকারী এক দর্শন হচ্ছে, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ‘ভিশন ২০২০’ নামে ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকল্পে দেশের সকল সেক্টরকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পরিচালিত ‘অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন’ (ধ২র) কর্মসূচির আওতায় দেশের নাগরিকের দোরগোড়ায় সরকারি সেবাসমূহ ডিজিটাল কৌশলে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। গত ৩০ মার্চ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং ‘ধ২র কর্মসূচি-ওও’-এর মধ্যে প্রাথমিক পর্যায়ে এক বছর এক মাসের জন্য একটি সমঝোতা স্মারক চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। এর মাধ্যমে ‘ভিশন ২০২০’- ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকল্পে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সরাসরি অবদান রাখার সুযোগ তৈরি হলো।
উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবিষ্যৎ উন্নয়ন ও সংস্কার পরিকল্পনা প্রসঙ্গে বলেন, আগামীতে শেখ রাসেল মডেল স্কুলের নতুন ভবন, ৪র্থ বিজ্ঞান ভবন, ৪র্থ কলা ভবন, মতিহার হল ও কৃষি অনুষদ ভবনের বাকি কাজ সম্পন্ন, ১০ তলা বিশিষ্ট আবাসিক ভবন, ২০ তলা বিশিষ্ট সেন্ট্রাল সায়েন্স বিল্ডিং, আইসিটি ভবন, পার্ক, সঙ্গীত ও নাট্যকলা বিভাগের কালচারাল সেন্টার, আধুনিক ড্রেনেজ ব্যবস্থা নির্মাণ, বৈদ্যুতিক ও কাঠের কাজের জন্য ওয়ার্কশপ স্থাপন, ক্যাফেটেরিয়ার আধুনিকায়ন, অভ্যন্তরীণ প্রধান রাস্তাসমূহ প্রশস্তকরণ, ক্যাম্পাসের জন্য ৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন কম্বাইন্ড পাওয়ার স্টেশন স্থাপন ইত্যাদির পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প সরকারের অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে ২৫ বছর মেয়াদি একটি মাস্টার প্লান প্রণয়নের জন্যও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয় সিনেট ভবনে দিনব্যাপী এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এদিন সকাল ১০টায় জাতীয় পতাকা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে সভার কর্মসূচি শুরু হয়। এরপর মরহুম বিশিষ্টজনদের স্মরণে শোক প্রস্তাব গ্রহণ ও তাদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ও রূহের মাগফিরাত কামনায় এক মিনিট নীরবতা পালন ও মোনাজাত করা হয়।
সিনেটর এই সভায় ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরের ৩৯১ কোটি ৪৮ লক্ষ টাকার সংশোধিত বাজেট এবং ৪৯০ কোটি ৬১ লক্ষ টাকার ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরের মূল বাজেট প্রস্তাব অনুমোদিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর সায়েন উদ্দিন আহমদ এই বাজেট পেশ করেন। বাজেট সংক্রান্ত আলোচনায় সিনেটরবৃন্দ বাজেটে শিক্ষা ও গবেষণা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি, অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে আয় বৃদ্ধি এবং আনুষঙ্গিক খাতে ব্যয় সংকোচনসহ বেশ কিছু পরামর্শ দেন।
এই সভায় অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুমোদন করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য প্রফেসর চৌধুরী সারওয়ার জাহান এ পর্বে প্রারম্ভিক বক্তব্য দেন। এছাড়া কয়েকজন সিনেটরের প্রশ্ন, প্রস্তাব ও অভিমত নিয়ে আলোচনা করা হয়।
সভায় ৫৫ জন সিনেটর উপস্থিত ছিলেন। সভাটি সঞ্চালনা করেন সিনেটের সচিব বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রফেসর মুহাম্মদ এন্তাজুল হক। প্রসঙ্গত, ২০০১ সালের পর ২০১৫ সালের ১৮ মে সিনেটের ২১তম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়।
সানবিডি/ঢাকা/হৃদয়/আহো