হামলাকারীদের অনুশোচনা নেই, শুধু শেষ হয়ে যায় আক্রান্তরা
প্রকাশ: ২০১৬-০৫-২০ ১৯:৫২:৩১
গ্রামটির নাম নাজিরপাড়া। কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার ক্রাইম জোন খ্যাত এলাকাটির বেশির ভাগ বাসিন্দা নানা অপরাধে জড়িত। ইয়াবা মানবপাচার সহ এমন কোন অপরাধ কর্মকান্ড নেই যা এই গ্রামের লোকজন করেনা। কারণ তারা অপরাধী;অপরাধ করতে উৎসাহ পায়। মামলা তাদের জন্যে মামুলি ব্যাপার। ইয়াবা তথা ‘বাবার’ দাপটে এরা থাকে উৎফুল্ল।
ভুট্টো বাহিনীর টিকিও চুইতে পারেনি পুলিশ প্রশাসন। তারা ( হামলাকারীরা) এখন খুঁজে উল্টো পুলিশ কে! অবৈধ টাকায় কেনা অনেক পুলিশও। এই নাজিরপাড়াই নির্মমভাবে পেঠানো হয় পাঁচ জন সাংবাদিককে। গত ১৩ মে বিকেল সাড়ে ৫টায় ঘটে যাওয়া ভয়ঙ্কর ঘটনাটা আজও বুকের ভিতরে আঁকড়ে রেখেছে পুরো দেশের বিবেকবান মানুষ।
কক্সবাজারের সীমান্ত এলাকা টেকনাফ থানার নাজিরপাড়া গ্রামেই চিহ্নিত ইয়াবা কারবারী ও সন্ত্রাস বাহিনীর নেতা ভুট্টো বাহিনীর হাতে অত্যাচারের শিকার সেই ‘সময় টিভির স্টাফ রিপোর্টার সুজাউদ্দিন রুবেল, তার ক্যামেরাপার্সন ফয়েজ, ইন্ডিপেনডেন্ট টিভির জেলা প্রতিনিধি তৌফিকুল ইসলাম লিপু, তার ক্যামেরাপার্সন শরীফ, ৭১ টিভির ক্যামেরাপার্সন বাবু দাশসহ পাঁচ সাংবাদিক’। ভুট্টো বাহিনীর লোকজন নির্মমভাবে নির্যাতনের পর স্কুল মাঠেই ফেলে রাখা হয়েছিল পাঁচটি দেহ। লুট করে নিয়ে যায় ল্যাপটপ, ক্যামেরা, মোবাইল সেট।
পুলিশ খবর পেয়ে এগিয়ে না আসলেও স্থানীয় সাংবাদিকরা আহত সাংবাদিকদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করান। হয়তু সাংবাদিক সদস্যরা এগিয়ে না এলে আমরা এই পাঁচ সাংবাদিকের মৃত দেহই পেতাম। ধন্যবাদ জানাই সেই দিন মানবতার খাতিয়ে যে সব সাংবাদিক এগিয়ে এসে আহত সাংবাদিকদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন।
পাঁচ সাংবাদিকের উপর বর্বতার ঘটনায় ১৯ জনকে আসামী করে আহত ইন্ডিপেনডেন্ট টিভির জেলা প্রতিনিধি তৌফিকুল ইসলাম লিপু বাদী হয়ে টেকনাফ থানায় দায়ের করা হয় দ্রুত বিচার আইনে মামলা।
এ এক নিষ্টুরতার সত্যি কাহিনী৷ শুধু দেশ নয়, বিশ্বের কাছে যে পরিচিত ১৩ মে বিকেলে কক্সবাজারের টেকনাফ নাজিরপাড়ায় ‘পাচঁ সাংবাদিক’ এর উপর সশস্ত্র হামলা নামে৷ ঘটনার পর থেকেই আহত সাংবাদিকদের পাশে রয়েছে সমস্ত গণমাধ্যম কর্মী। সবার ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের প্রেরণা৷আর হামলাকারীদের আতঙ্ক।
চিহ্নিত ইয়াবা ব্যবসায়ী ভুট্টো ও তার সহযোগীদেরকে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবীতে দলমত নির্বিশেষে আন্দোলন সংগ্রাম আর লড়াইয়ের এই কাহিনি দেশের গন্ডি ছাড়িয়ে বিদেশেও৷ আন্দোলনরতরা বার বারই বক্তব্যে লড়াইয়ের কথা তুলে ধরেছেন৷ কিন্তু কী তার লড়াই? তার উত্তর, এই লড়াই সংবাদকর্মীদের সম্মানের, অধিকারের, ন্যায় বিচারের৷
১৩ মে শুক্রবার ভোর রাতে ১৫/২০ জন মুখোশধারী ডাকাতদল টেকনাফ নয়াপাড়া রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পের আনসার ব্যারাকে ঢুকে আনসার সদস্যদের রশি দিয়ে বেঁধে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ১৫ মিনিটের মধ্যে ১১টি অস্ত্র ও ৬৭০টি কার্তুজ লুট করে নিয়ে যায়। এসময় দায়িত্বরত আনসার পিসি কমান্ডার আলী হোসেন এগিয়ে আসলে এক পর্যায়ে ডাকাতদল ক্ষুদ্ধ হয়ে আলী হোসেনের উপর গুলি বর্ষণ করে। এতে ঘটনাস্থলে নিহত হন তিনি। সকালে পুলিশ, বিজিবি, র্যাব ও আনসার সদস্যরা ক্যাম্পে অবস্থান নিয়ে যৌথ অভিযান শুরু করে।
এদিকে, ওই ঘটনা কাভার করা জন্য ঘটনাস্থলে যান সাংবাদিকরা। ঘটনার ১৫ ঘন্টার ব্যবধানে শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে টেকনাফ সদর ইউনিয়নের নাজিরপাড়া স্কুল মাঠে পাঁচ সাংবাদিকের উপর নগ্ন হামলার ঘটনা ঘটে। সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের তালিকাভূক্ত শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী নাজিরপাড়ার বাসিন্দা নুরুল হক ভূট্টোর নেতৃত্বে তার দলবল এ হামলা ঘটনা ঘটনো হয় বলে নিশ্চিত করেন আহত সাংবাদিকরা। পুলিশের দ্বারস্থ হয় তারা৷ কিন্তু সাহায্য করেনি পুলিশ ৷ উল্টে ঘটনা জানাজানি হতেই, ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করেন টেকনাফ থানার ওসি আবদুল মজিদ। একই দিন রাতে আহত সাংবাদিকদের আনা হয় কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে। সেখানে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যতেষ্ট সহযোগীতার হাত বাড়ান। আহতদের হাসপাতালে দেখতে যান জেলা প্রশাসক মোঃ আলী হোসেন, কক্সবাজার সদর মডেল থানার অপারেশন অফিসার আবদুর রহিম, সাংবাদিক মহল, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
এই নুরুল হক ভুট্টো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ি শুধু নয়, তার বিরুদ্ধে মানবপাচার, সন্ত্রাসী কর্মকান্ড, খুন, ধর্ষণ, জমিদখল সহ এমন কোন ঘটনা নেই সে নিজে কিংবা তার বাহিনী দ্বারা ঘটাচ্ছে না।
সীমান্ত জনপদের সচেতন মহল বলেন, একের পর এক অপরাধ কর্মকান্ড ঘটান ভুট্টো বাহিনী। আক্রান্তরা আর তাদের পরিবার শেষ হয়ে যায়৷ কিন্তু বিন্দুমাত্র অনুশোচনা হয় না একের পর এক অপরাধ করে যাওয়া অপরাধী ভুট্টোর মতো ওই লোকেদের৷ তারা একের পর এক ঘটনা সংগঠিত করে৷ আর এই অন্যায় আটকানোর অন্যতম পথ শাস্তি ৷ কারণ, ওই অপরাধীরা জানে তাদের কোনও শাস্তি নেই পুলিশ তাদের টিটিকও ছুতে পারে না পুলিশের সাথে তাদের গলায় গলায় ভাব। অপরাধ করেও এলাকায় বুক ফুলিয়ে ঘুরবে তারা ভুট্টোরা৷ কাঁদবে শুধু অত্যাচারিতরা ৷ এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে হাজার প্রতিকূলতা সত্ত্বেও রুখে দাঁড়িয়েছেন সাংবাদিকসহ সকল পেশার মানুষ।
আজ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে শুধু কক্সবাজার জেলা নয়, সমগ্র দেশের সাংবাদিকরা। তবে এঘটনায় বিরোধিতা করেন কয়েকজন সংবাদ কর্মী। তারা ইয়াবা ব্যবসায়িদের পক্ষ নেন। কিন্তু এদের কর্মকান্ডে বিব্রত নন প্রগতিশীল সাংবাদিক সমাজ। প্রতিদিন দেশের কোথাও না কোথাও প্রতিবাদ সভা, বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন হচ্ছে। দাবী জানানো হচ্ছে কুখ্যাত ইয়াকা কারবারী ভুট্টোসহ তার বাহিনীর লোকজনকে গ্রেফতার করতে। ওসি আবদুল মজিদকে প্রত্যাহারের দাবী উঠছে ।
এধরনের নির্মমতার বিষয়ে প্রথমে মামলা নিতে চাননি প্রশাসন। গ্রামের অন্য নির্যাতিতা নিরীহদের মতোই মুখ বন্ধ রাখতে চেয়েছিল সাংবাদিক মহলকেও৷ কিন্ত এর দুইদিন পরেই টেকনাফ থানা পুলিশ মামলা নিতে বাধ্য হন। মামলা নিলেও আসামী গ্রেফতার কিংবা লুন্ঠিত মালামাল উদ্ধারে গড়িমসিহ করে পুলিশ। এরপর আর চুপ থাকতে পারেনি জেলার সাংবাদিক সমাজ । আন্দোলন সংগ্রাম অব্যাহত রাখেন তারা। এ পর্যন্ত পুলিশ মাত্র ৩ জন আসামীকে গ্রেফতার করতে পেরেছে। অতচ দুর্দান্ত ভুট্টো প্রকাশ্যে এলাকায় রয়েছে। পুলিশের চোখে সে সহ অন্যান্য দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসীরা পলাতক রয়েছে।
আহত সাংবাদিকদের কথায়,‘আমরা ওদের জেলে ভরতে চাই ৷ যথাযত শাস্তি পাক তা দেখতে চাই’৷
এদিকে, সারা দেশে সমস্ত গণমাধ্যমকর্র্মীদের আন্দোলন, সংগ্রাম আর প্রতিবাদে নাড়িয়ে দিয়েছে পুরো প্রশাসনের ভিত৷ সেই নাজিরপাড়া গ্রাম যেখানে ভুট্টোর মতো অপরাধী পুরুষরা মনে করতো, সমস্যা হলেই তা মেটাতে পুলিশের সঙ্গে আতাঁত করা উচিত৷
কারণ,অপরাধ কর্মকান্ড করে বলেই পুলিশের সাথে অপরাধীদের গোপন সমঝোতা নাজিরপাড়া নামক এই গ্রামের অপরাধী লোকের এহেন মানসিকতায় হতবাক আন্দোলনকারী পুরো দেশের সাংবাদিক মহলও৷ তবে আন্দোলনকারী সাংবাদিকদের আশা, সাংবাদিকরাই পারবে এর বদল ঘটাতে৷ অন্য অপরাধীদের শিক্ষা দিতে।
সানবিডি/ঢাকা/আহো