ট্রাম্পের মা ছিলেন অভিবাসী গৃহকর্মী!
প্রকাশ: ২০১৬-০৫-২২ ১৩:৫৩:৫৯
আমেরিকার আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টির মনোনয়ন প্রত্যাশী ডোনাল্ড ট্রাম্প অভিবাসীদের বিষয়ে প্রতিনিয়ত নেতিবাচক মন্তব্য করে আসছেন। কিন্তু ট্রাম্পের মা-ই আমেরিকায় অভিবাসী ছিলেন।
ট্রাম্পের মা মেরি অ্যান নি ম্যাকলেওড ১৯৩০ সালে স্কটল্যান্ড থেকে গৃহকর্মীর কাজ করতে আমেরিকায় যান। সেখানে ১৯৩৬ সালে সফল ব্যবসায়ী ফ্রেড ট্রাম্পকে বিয়ে করে স্থায়ীভাবে আমেরিকায় থেকে যান।
আমেরিকার অভিবাসন নথি থেকে জানা যায়, আজ থেকে ৯০ বছর আগে ভাগ্যের সন্ধানে স্কটল্যান্ড থেকে ট্রাম্পের মা মেরি অ্যান নি ম্যাকলেওড মাত্র ৫০ ডলার হাতে নিয়ে আমেরিকার মাটিতে পা রাখেন। আমেরিকার অভিবাসন নথি থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
অভিবাসী বিরোধী ট্রাম্প তার বক্তব্যে একাধিকবার বলেছেন, তার মা আমেরিকায় বেড়াতে এসেছিলেন। কিন্তু আর ফিরে যাননি। দেশটির অভিবাসন বিষয় নথিতে দেখা যাচ্ছে, তার মা স্বেচ্ছা অভিবাসনে এসে ছিলেন। তিনি আমেরিকার নাগরিকত্ব প্রত্যাশী ছিলেন। তিনি মাত্র ৫০ ডলার নিয়ে আমেরিকার গৃহকর্মীর কাজ করতে এসেছিলেন। আসার সময়ই আর ফিরে না যাওয়ার লিখিত আবেদন করেছিলেন।
এক অভিবাসী নারীর সন্তান আমেরিকার অভিবাসীদের বিষয়ে তার নির্বাচনী প্রচারণার ওয়েবসাইটে লিখেছেন, ‘অতিরিক্ত অভিবাসী আসায় বেতন কমে যাচ্ছে। বেকারত্ব সৃষ্টি হচ্ছে। এটি দরিদ্র ও কর্মজীবী আমেরিকানদের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করছে। অভিবাসী ও তার সন্তানরা মাঝারি বেতনে কাজ করে।’
ট্রাম্পের মা আমেরিকায় অভিবাসী ছিলেন এ ব্যাপারে আর কোনো সন্দেহ নেই। ট্রাম্পের মা শুধু দারিদ্র্যের জন্য স্কটল্যান্ড ছাড়েননি। তিনি সামাজিক চাপে নিজ দেশ ছাড়তে বাধ্য হন। কারণ ট্রাম্পের খালা ক্যাথারিন রেইড ১৯২০ সালে অবিবাহিত অবস্থায় সন্তান জন্ম দিয়েছিলেন। তারপর ক্যাথরিন আমেরিকায় চলে যান। পরবর্তীতে ক্যাথারিন তার তিন বোনকে আমেরিকায় নিয়ে যান। ট্রাম্পের নানা ছিলেন জেলে।
১৯৩০ সালে ম্যাকলেওড গ্লাসগো বন্দর থেকে জাহাজে করে আমেরিকা পৌঁছান। জাহাজে করে তার আমেরিকা পৌঁছতে ৯ দিন লেগেছিল। সেই জাহাজের কাগজপত্রে তিনি উল্লেখ করেছেন, তিনি গৃহকর্মী হিসেবে আমেরিকা যাচ্ছেন। অসুস্থ হলেও দেশে ফিরতে চান না। তিনি আমেরিকার নাগরিক হতে চান।
ট্রাম্পের মা ম্যাকলেওড ১৪ বছর বয়সে আমেরিকা যান। আমেরিকা পৌঁছানোর ছয় বছর পর সফল আবাসন ব্যবসায়ী ফ্রেড ট্রাম্পকে বিয়ে করেন ম্যাকলেওড। ফ্রেড ট্রাম্পও এক অভিবাসীর সন্তান। ফ্রেড ট্রাম্পের বাবা জার্মানি থেকে আমেরিকায় গিয়েছিলেন।
তবে ফ্রেড ট্রাম্পের সঙ্গে ম্যাকলিওডের কীভাবে পরিচয় হয়েছিল তা জানা যায়নি। সম্ভবত ম্যাকলেওডের বোন ক্যাথারিনের মাধ্যমে ফ্রেডের সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল।
ট্রাম্পরা পাঁচ
১৯৪০ সালের আদমশুমারিতে দেখা যায়, ম্যাকলেওড ১৯৩৫ সালের এপ্রিল মাসেই ফ্রেড ট্রাম্পের পরিবারের সঙ্গে বাস করতেন। ১৯৩৬ সালের জানুয়ারি মাসে ম্যাডিসন অ্যাভিনিউ প্রেসবাইটারিয়ান চার্জে ফ্রেডের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। ম্যানহাটানের কারলাইলে হোটেলে ২৫ জন অতিথি নিয়ে তাদের বিয়ের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
ট্রাম্পের বাবা-
ম্যাকলেওড আমেরিকায় যাওয়ার ১২ বছর পরও নাগরিকত্ত্ব পায়নি। তবে আমেরিকায় দেরিতে নাগরিকত্ত্ব পাওয়া কোনো অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। ট্রাম্পের প্রথম স্ত্রী ইভানাও তাদের বিয়ের এগার বছর পর পর্যন্ত নাগরিকত্ত্ব পাননি।
ম্যাকলিওড ফ্রেডের ঘরে পাঁচ সন্তানের জন্ম দেন। বিয়ের পর ম্যাকলেওডকে এক আইরিশ গৃহকর্মীকে নিয়ে বিশাল পরিবার দেখা শোনা করতে হতো।
ট্রাম্পের মেঝো ভাই ৪২ বছর বয়সে মদ্যপানে মারা যান। ট্রাম্পের বোন ম্যারিয়ান ব্যারি জর্জ। আরেক বোন এলিজাবেথ ব্যাংকার। ট্রাম্পের দুই বছরের ছোট রবার্ট তার বাবার ফার্মের প্রেসিডেন্ট।
ট্রাম্পের মা ২০০০ সালে ৮৮ বছর বয়সে লং আইল্যান্ডের জিউস মেডিকেল সেন্টারে মারা যান। তার মাত্র এক বছর আগে ট্রাম্পের বাবা ৯৩ বছর বয়সে মারা যান।
খালি হাতে আমেরিকায় আসা ম্যাকলেওডের সন্তানের আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।