বেগম পত্রিকার ইতিবৃত্ত
প্রকাশ: ২০১৬-০৫-২৩ ২১:৫৪:৩৬
যে সময়টিতে নারীদের ছবি তোলা নিয়ে অনেকের আপত্তি ছিল, সে সময়ে নারীদের জন্য একটি সচিত্র সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশ করা মোটেও সহজ কাজ ছিল না। ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ বিভক্ত হবার কিছুদিন আগে কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত হয় ‘বেগম পত্রিকা’। এর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন তৎকালীন সওগাত পত্রিকার সম্পাদক নাসির উদ্দিন।
বেগম পত্রিকার প্রথম সম্পাদক ছিলেন কবি সুফিয়া কামাল। তার সাথেই কাজ করতেন নাসির উদ্দিনের একমাত্র কন্যা নূরজাহান বেগম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী দীর্ঘকাল ধরেই বেগম পত্রিকার সাথে পরিচিতি।
অধ্যাপক চৌধুরী বলেন পিতা এবং কন্যা সমাজে নারীদের অগ্রগতি যেভাবে চিন্তা করতেন, ঠিক সে বিষয়গুলো বেগম পত্রিকায় প্রতিফলিত হতো। অধ্যাপক চৌধুরী বলেন শুরু থেকেই বেগম পত্রিকায় নারীদের গৃহকর্মের কথা , ছবি এবং তাদের নানা সমস্যার কথা প্রকাশিত হতো।
নূরজাহান বেগমের জন্ম ১৯২৫ সালে এখনকার চাঁদপুর জেলায়। ১৯৪২ সালে বেগম রোকেয়া প্রতিষ্ঠিত কলকাতার সাখাওয়াত মেমোরিয়াল হাইস্কুল থেকে তিনি মেট্রিকুলেশন পাশ করেন। এরপর ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত কলকাতার লেডি ব্রেবোর্ন কলেজে পড়াশুনা করে বি এ পাশ করেন নূরজাহান বেগম।
ভারতবর্ষ বিভক্ত হবার পরে ১৯৫০ সালে বেগম পত্রিকার অফিস ঢাকায় চলে আসে। নতুন ঠিকানা হয় বর্তমানে পুরনো ঢাকার পাটুয়াটুলিতে। গত ৬৬ বছর ধরে এখানেই আছে বেগম পত্রিকা।
১৯৬০ এবং ১৯৭০’র দশকে প্রতি সপ্তাহে বেগম পত্রিকার প্রচার সংখ্যা ছিল ২৫ হাজারের মতো। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ডাকযোগে এই পত্রিকা পৌঁছে যেত। কিন্তু বেগম পত্রিকার সে জৌলুস এখন আর নেই।
অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলছেন বেগম পত্রিকা শুধু নারীদের উদ্দেশ্যে করেই গোড়াপত্তন হলেও এর পাঠক শুধু নারীরাই ছিলেন না। ধীরে ধীরে এই পত্রিকা পুরুষদের মধ্যেও জনপ্রিয় হয়ে উঠে। নূরজাহান বেগমের বাবা নাসির উদ্দিন একজন প্রথিতযশা সাংবাদিক ছিলেন।
অধ্যাপক চৌধুরী বলেন, নূরজাহান বেগম শুধু উত্তরাধিকার সূত্রে নয়, নিজের মেধা এবং যোগ্যতা দিয়ে তিনি বেগম পত্রিকাকে গড়ে তুলেছেন।
১৯৫২ সালে নূরজাহান বেগমের বিয়ে হয় লেখক, সাংবাদিক ও শিশু সংগঠক রোকনুজ্জামান খানের সাথে। অনেকের কাছেই তিনি ‘দাদাভাই’ নামে পরিচিত ছিলেন। নূরজাহান বেগম এমন একটি পত্রিকার ইতিহাস রেখে গেলেন যেটি এ অঞ্চলে বহু নারীকে স্বাধীনভাবে চিন্তা করতে শিখিয়েছে।
সানবিডি/ঢাকা/আহো