জাতীয় কবির ‘জন্ম দিন আজ’
প্রকাশ: ২০১৬-০৫-২৫ ১০:৩৭:৪৪
এক কথায় বিকল্পহীন অনন্য জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। বাঙালি নবজাগরণের অগ্রদূত প্রখ্যাত কবি ও সাহিত্যিক এবং সুর শ্রষ্টা এই ক্ষণজন্মা মানুষটির আজ (১১৭ তম) জন্ম দিন। ১১ জৈষ্ঠ ১৩০৬ বঙ্গাব্দে ১৮৯৯ সালের আজকের এই দিনে (২৫ মে) পশ্চিমবঙ্গের চুরুলিয়া গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন।
তাঁর বিখ্যাত বিদ্রোহী কবিতার দুটি লাইন ছিল এমন, “ আমি চির বিদ্রোহী বীর –বিশ্ব ছাড়ায়ে উঠিয়াছি একা চির উন্নত শির !” এই কবিতাটি লেখার জন্য তৎকালীন বৃটিশ সরকার নজরুলকে গ্রেফতার করে জেলে নিয়েছিল।
এরকম হাজারো কবিতা ও সাহিত্য দিয়ে বাংলা ভাষাকে সমৃদ্ধ করেছেন তিনি। গেয়েছেন তারুন্যের জয়গান। স্বাধীনতা যুদ্ধের পর ১৯৭২ সালে ভারত থেকে কবি নজরুল কে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দিয়ে দেশে নিয়ে আসে সরকার। ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট ঢাকায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তাঁর শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মসজিদের পাশে সমাহিত করা হয় এই জাতীয় কবি কে।
বিংশ শতাব্দীর অন্যতম জনপ্রিয় অগ্রণী যিনি বাংলা সাহিত্য, সমাজ ও সংস্কৃতি ক্ষেত্রের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব হিসেবে উল্লেখযোগ্য। বাঙালী মণীষার এক তুঙ্গীয় নিদর্শন নজরুল। পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ– দুই বাংলাতেই তাঁর কবিতা ও গান সমানভাবে সমাদৃত। তাঁর কবিতায় বিদ্রোহী দৃষ্টিভঙ্গির কারণে তাঁকে বিদ্রোহী কবি নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তাঁর কবিতার মূল বিষয়বস্তু ছিল মানুষের ওপর মানুষের অত্যাচার এবং সামাজিক অনাচার ও শোষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ।
নজরুল একাধারে কবি, সাহিত্যিক, সংগীতজ্ঞ, সাংবাদিক, সম্পাদক, রাজনীতিবীদ এবং সৈনিক হিসেবে অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে সর্বদাই ছিলেন সোচ্চার। তাঁর কবিতা ও গানে এই মনোভাবই প্রতিফলিত হয়েছে। অগ্নিবীণা হাতে তাঁর প্রবেশ, ধূমকেতুর মতো তাঁর প্রকাশ। যেমন লেখাতে বিদ্রোহী, তেমনই জীবনে কাজেই “বিদ্রোহী কবি”, তাঁর জন্ম ও মৃত্যু বার্ষিকী বিশেষ মর্যাদার সঙ্গে উভয় বাংলাতে প্রতি বৎসর উদযাপিত হয়ে থাকে।
নজরুল এক দরিদ্র মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার প্রাথমিক শিক্ষা ছিল ধর্মীয়। স্থানীয় এক মসজিদে সম্মানিত মুয়াযযিন হিসেবেও কাজ করেছিলেন। কৈশোরে বিভিন্ন থিয়েটার দলের সাথে কাজ করতে যেয়ে তিনি কবিতা, নাটক এবং সাহিত্য সম্বন্ধে সম্যক জ্ঞান লাভ করেন। ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কিছুদিন কাজ করার পর তিনি সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নেন। এসময় তিনি ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ সংগ্রামে অবতীর্ণ হন। প্রকাশ করেন বিদ্রোহী এবং ভাঙার গানের মত কবিতা; ধূমকেতুর মত সাময়িকী।
জেলে বন্দী হয়ে লিখেন রাজবন্দীর জবানবন্দী, এই সব সাহিত্যকর্মে সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতা ছিল সুস্পষ্ট। বাংলা কাব্যে তিনি এক নতুন ধারার জন্ম দেন। এটি হল ইসলামী সঙ্গীত তথা গজল, এর পাশাপাশি তিনি অনেক উৎকৃষ্ট শ্যামা সংগীত ও হিন্দু ভক্তিগীতিও রচনা করেন। নজরুল প্রায় ৩০০০ গান রচনা এবং অধিকাংশে তিনি নিজেই সুরারোপ করেছেন। যেগুলো এখন নজরুল সঙ্গীত বা “নজরুল গীতি” নামে পরিচিত এবং বিশেষ জনপ্রিয়।
মধ্যবয়সে তিনি বৃটিশ সরকারের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে ‘পিক্স ডিজিজে’ আক্রান্ত হন। এর ফলে আমৃত্যু তাকে সাহিত্যকর্ম থেকে বিচ্ছিন্ন থাকতে হয়। একই সাথে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। বাংলার মাটিতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ‘কাজী নজরুল ইসলাম’।
সানবিডি/ঢাকা/এসএস