ইন্টারনেটে যা কিছু প্রথম

প্রকাশ: ২০১৬-০৫-২৭ ১৮:২৪:৩৩


যন্ত্রে যেমন প্রাণ প্রতিষ্ঠা করেছে বিদ্যুৎ, কম্পিউটার প্রযুক্তিতে ঠিক একইভাবে ইন্টারনেট দিয়েছে নতুন মাত্রা। প্রধান উদ্দেশ্য যোগাযোগ হলেও বর্তমানে মানুষের জীবনের এমনই অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছে যে ইন্টারনেট সংযোগ এবং এর মাধ্যমে পাওয়া সেবা ছাড়া একটি দিনও চলে না। বর্তমানের বিশ্বব্যাপী জালের মতো ছড়িয়ে থাকা এই ইন্টারনেটের শুরুটা কিন্তু খুবই সাদামাটাভাবে হয়েছে। পেছনে ফিরে তাকালে অনেকটা হাস্যকর মনে হয়। শুরুর সেই দিনগুলোতে ইন্টারনেট এবং আনুষঙ্গিক সেবা কেমন ছিল, তা নিয়েই এই আয়োজন।

71a005ad1b97574cfa44044a88148459-1প্রথম কম্পিউটার ভাইরাস
বব থমাস নামের এক কম্পিউটার প্রোগ্রামার ১৯৭১ সালে ‘ক্রিপার ভাইরাস’ নামে কম্পিউটার প্রোগ্রাম তৈরি করেন, যা আক্রান্ত কম্পিউটারের পর্দায় ‘আমি ক্রিপার, পারলে আমাকে ধর’ বার্তা দেখাত। এই প্রোগ্রামটিই প্রথম কম্পিউটার ভাইরাসের স্বীকৃতি পায়। পরবর্তী সময়ে ‘রিপার’ নামে আরেকটি কম্পিউটার প্রোগ্রাম তৈরি করে নেটওয়ার্ক থেকে ভাইরাসটি সরিয়ে ফেলা হয়।

প্রথম ই-মেইল
আধুনিক ই-মেইলের জনক রে টমলিনসন ১৯৭১ সালে প্রথম ই-মেইল পাঠিয়েছিলেন। নিজের কাছে পাঠানো ওই ই-মেইলে ঠিক কী লিখেছিলেন, তা তাঁর মনে নেই। তবে কি-বোর্ডের ইংরেজি অক্ষরের প্রথম সারির সব কটি বোতাম অর্থাৎ ‘QWERTYUIOP’ লিখেছিলেন বলে মনে করেন। প্রথম সে ই-মেইলের আগেও কিন্তু ই-মেইল চালু ছিল। তবে তা কোনো নেটওয়ার্কের অধীন সব কম্পিউটারের পাঠাতে হতো। নির্দিষ্ট কাউকে, নির্দিষ্ট ঠিকানায় পাঠানোর সুযোগ ছিল না।

প্রথম স্প্যাম ই-মেইল
স্প্যাম ই-মেইল অনেকটা বিভীষিকার মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে আলাদা ফোল্ডারে এসব ই-মেইল জমা হলেও আগে সে সুযোগ ছিল না। ১৯৭৮ সালের ৩ মে ‘ডিজিটাল ইকুইপমেন্ট করপোরেশন’-এর নামে ৩৯৩টি ঠিকানায় একসঙ্গে প্রথম স্প্যাম ই-মেইল পাঠানো হয়। ই-মেইলটি সব বড় হাতের ইংরেজি অক্ষরে লেখা হয়েছিল বলে প্রথমেই সবার কাছে অদ্ভুত ঠেকে।

প্রথম ডোমেইন নেম
১৯৮৫ সালের ১৫ মার্চ সিম্বলিকস কম্পিউটিং কোম্পানির ওয়েবসাইটের জন্য symbolics.com নিবন্ধন করে প্রতিষ্ঠানটি। এটিই ছিল প্রথম ডোমেইন নেম। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, সাড়ে ২৭ কোটির বেশি ডোমেইন নেম নিবন্ধন করা হয়েছে।

প্রথম সার্চ ইঞ্জিন
প্রথম ওয়েবসাইট তৈরির আগেই ১৯৯০ সালে ‘আর্কি কুয়েরি ফর্ম’ নামের সার্চ ইঞ্জিন তৈরি করেন অ্যালেন এমট্যাজ নামের এক ব্যক্তি। ফাইল ট্রান্সফার প্রটোকলে (এফটিপি) থাকা যে টেক্সট ফাইলগুলো সবার জন্য উন্মুক্ত ছিল, কেবল সেগুলো থেকেই তথ্য সংগ্রহ করে প্রদর্শন করত এটি। সার্চ ইঞ্জিনটি এখনো http://archie.icm.edu.pl ঠিকানায় সচল আছে। ইংরেজি শব্দ ‘আর্কাইভ’ থেকে ‘ভি’ বাদ দিয়ে এর নামকরণ করা হয়।

প্রথম ওয়েবসাইট
ইউরোপীয় পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্র সার্নের জন্য ১৯৯১ সালের ৬ আগস্ট কিছু লেখা এবং হাইপার লিংকের সমন্বয়ে প্রথম ওয়েবসাইট তৈরি করেন টিম বার্নার্স লি। এ জন্য ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের জনক হিসেবে স্বীকৃতি পান টিম। ওয়েবসাইটটি এখনো সচল আছে। ঠিকানা:http://info.cern.ch/hypertext/WWW/TheProject.html।

5d143fab743bd963c64fe79b93c5056c-2ওয়েবসাইটে প্রথম ছবি
১৯৯২ সালের ১৮ জুলাই টিম বার্নার্স লি সার্নের ওয়েবসাইটেই প্রথম ছবি আপলোড করেন। সার্নের এক প্যারোডি গায়ক দলের ছোট্ট স্ট্যাম্পের আকারের সে ছবি লোড হতেই এক মিনিটের বেশি সময় নিয়েছিল।

প্রথম সোশ্যাল নেটওয়ার্ক
১৯৯৫ সালের ১৭ নভেম্বর ক্লাসমেটস ডটকম নামে প্রথম সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট চালু হয়। যুক্তরাষ্ট্রের র‍্যান্ডি কনর‍্যাডস নামের এক ব্যক্তির তৈরি ওই ওয়েবসাইটটি মূলত প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের পুনর্মিলনীর জন্য ব্যবহার করা হতো। বর্তমানে সবচেয়ে বড় সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট ফেসবুকে প্রতি মাসে ১৫৯ কোটি ব্যবহারকারী ঢুঁ মারেন।

মোবাইল ফোনে প্রথম ওয়েব ব্রাউজার
১৯৯৬ সালের ৫ আগস্ট নকিয়া ৯০০০ কমিউনিকেটর মোবাইল ফোনে প্রথম মোবাইল ব্রাউজার যোগ করা হয়। সে সময় মোবাইল ফোনটির দাম ছিল ৮০০ ডলার। কমিউনিকেটর সিরিজের সর্বশেষ মোবাইল ফোনটি ২০০৭ সালে বের করে নকিয়া।

ইউটিউবে প্রথম ভিডিও
২০০৫ সালের ২৩ এপ্রিল ‘মি অ্যাট দ্য জু’ শিরোনামে ইউটিউবে প্রথম ভিডিও আপলোড করেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত জাবেদ করীম। এদিকে শুধু দক্ষিণ কোরীয় পপ গায়ক সাইয়ের গ্যাংনাম স্টাইল গানটি ইউটিউবে ২৫০ কোটির বেশিবার দেখা হয়েছে।
এরপরের ঘটনাগুলোকে আর ইতিহাস বলা চলে না। কমবেশি সবারই জানা। নতুন নতুন অনেক সেবার উন্মোচন করে ইন্টারনেটে অভিজ্ঞতা বদলে দিচ্ছে নতুন সব প্রতিষ্ঠান।

সানবিডি/ঢাকা/আহো