৩০ বিদেশীর সম্পদ জব্দে ১১ দেশে চিঠি
আপডেট: ২০১৬-০৫-৩০ ০৯:৩৮:৩৫
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় ৩০ বিদেশী নাগরিক ও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর কাছে চিঠি পাঠিয়েছে সিআইডি (পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ)। সম্প্রতি ১১ দেশে এ চিঠি পাঠানো হয়। সিআইডি সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। সূত্র বলছে, শনাক্ত হওয়া বিদেশী নাগরিকদের গ্রেফতার এবং এদের ও প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্পদ জব্দ করার জন্য ইন্টারপোলের কাছে আজ আনুষ্ঠানিক সহায়তা চাওয়া হবে। একই সঙ্গে ইন্টারপোলের রেড ওয়ারেন্ট জারি ও তালিকায় এদের নাম অন্তর্ভুক্তির দাবিও জানানো হবে। ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলায় এ নিয়ে আজ বৈঠক করবে সিআইডি।
এজন্য রোববার ৫ সদস্যের একটি দল সেখানে গেছে। সিআইডি বলছে, যে ১১ দেশে চিঠি পাঠানো হয়েছে ওইসব দেশের কোথাও অভিযুক্তরা রয়েছেন, আবার কোথাও আলামত রেখে এসেছেন। এ দেশগুলোকে তদন্তের আওতায় আনা হয়েছে। এসব দেশের প্রতিনিধিরাও আজকের বৈঠকে থাকবেন। এ প্রসঙ্গে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আবদুল্লা হেল বাকী রোববার বলেন, সন্দেহভাজনরা যেসব দেশে অবস্থান করছে সেখানে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
এছাড়া কোথাও কোথাও আবার আলামত রয়েছে। সবমিলে ম্যানিলার বৈঠকে ১১ দেশের প্রতিনিধি অংশ নেবে। এতে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ চুরির ঘটনায় সবার সহযোগিতা চাওয়া হবে। প্রাথমিক তদন্তে রিজার্ভ চুরির সঙ্গে যেসব নাগরিকের সম্পৃক্ততার প্রমাণ মেলে তার মধ্যে রয়েছেন- ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশনের (আরসিবিসি) জুপিটার শাখার ব্যবস্থাপক মায়া সান্তোস দেগুইতো, সহকারী অ্যাঞ্জোলা তোরেস ও আরেক বন্ধু। রয়েছেন এ শাখার চার হিসাবধারী মাইকেল ফ্রান্সিসকো ত্রুদ্ধজ, জেসি ক্রিস্টোফার লাগোরাস, আলফ্রেড ভারগারা ও এনরিকো তায়েদ্রো ভাসকুয়েজ। চীনের নাগরিক ও ফিলিপাইনের ক্যাসিনো ইস্টার্ন হাওয়াই লেইজার কোম্পানির মালিক কাম সিং অং ওরফে কিম অং, আরসিবিসির চেয়ারপারসন হেলেন ওয়াই ডি, অর্থ স্থানান্তর প্রতিষ্ঠান ফিলরেম সার্ভিস কর্পোরেশনের প্রেসিডেন্ট সালুদ বাউতিস্তা, ফিলিপাইনের ব্যবসায়ী উইলিয়াম গো সো, এছাড়া নতুন করে নাম আসা ফিলিপাইনের আরও তিন ব্যক্তি এবং ম্যাকাও শহরের দুই নাগরিক।
শ্রীলংকার কথিত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন শালিকা ফাউন্ডেশনের ছয় পরিচালকের ব্যাংক হিসাব এরই মধ্যে জব্দ করা হয়েছে। ফাউন্ডেশন পরিচালকের জাপানি বন্ধু সাসুকি তাদাসির ব্যাংক হিসাব জব্দ করতেও প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করা হয়েছে। সিআইডি সূত্র জানায়, শালিকার ছয় পরিচালক ও এক মধ্যস্থতাকারীও রয়েছে ৩০ জনের তালিকায়।
এরা হলেন- পরিচালক এইচ জি শালিকা পেরেরা, মায়োরিন রানাসিংহে, প্রদীপ রোহিথা, শান্তা নালাকা ওয়ালাকুলুয়ারসি, সঞ্জিভা তিশা বান্দারা ও সিরানি ধাম্মিকা ফেরানান্দো। পেরেরার সঙ্গে মধ্যস্থতাকারী জয়াদেবা। এসব নাগরিকদের দেশত্যাগের ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে শ্রীলংকায়। অভিযুক্তদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে যে প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয় সিআইডি সে প্রস্তুতি নিয়েছে। এসব বিদেশীর নথি তৈরি করে যেখানে প্রত্যেকের জীবনবৃত্তান্ত রেখেছে। রয়েছে ছবি।
সবকিছু আজ ম্যানিলার বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে। অবশ্য এর আগেই এ নিয়ে ইন্টারপোলকে জানিয়েছে সিআইডি। ইন্টারপোলের পক্ষেও স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, তারাও প্রস্তুত। সিআইডির এক কর্মকর্তা বলেন, রিজার্ভ চুরির ঘটনায় সুবিধাভোগী অভিযুক্তরা প্রায় সবাইকেই শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। কেউ কেউ আসল নাম গোপন করেছে। নকল নাম ব্যবহার করলেও তদন্তে তাদের প্রকৃত নাম জানা গেছে। এখন তাদের বিষয়ে আরও তথ্য জানতে ইন্টারপোলের সহায়তা প্রয়োজন।
এ অবস্থায় সিআইডির কাছে যে ধরনের তথ্য আছে তা দিয়েই ওই ৩০ জনের নথি প্রস্তুত করা হয়। এসব সন্দেহভাজনকে ধরতে ইন্টারপোল সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে থাকা তাদের ডেস্ককে ইতিমধ্যে অবগত করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে রাখা বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়। প্রাপকের নামে ভুল করায় এর মধ্যে ২ কোটি ডলার শ্রীলংকার ব্যাংক ছাড় করেনি। এ অর্থ ফেরত আনা গেছে। ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার যায় ফিলিপাইনের আরসিবিসিতে। ওই টাকার বেশিরভাগই এখনও উদ্ধার করা যায়নি। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার তদন্ত করছে সিআইডি।
তদন্ত রিপোর্ট জমা দিয়েছেন ভারতীয় আইটি বিশেষজ্ঞ : বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির বিষয়ে তদন্ত রিপোর্ট জমা দিয়েছেন ভারতীয় আইটি বিশেষজ্ঞ রাকেশ আস্তানা। তবে এই রিপোর্টে কাদের দায়ী করা হয়েছে, কীভাবে এই ঘটনা ঘটেছে সে বিষয়ে গোপনীয়তা অবলম্বন করা হচ্ছে। রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ সভায় পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা করা হয়। প্রায় ৪ মাস পর রাকেশ আস্তানা সশরীরে পাওয়ার পয়েন্টের মাধ্যমে এসংক্রান্ত একটি পূর্ণাঙ্গ ডকুমেন্টারি বোর্ড সভায় উপস্থাপন করেন বলে দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে। চলতি বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি রিজার্ভ থেকে প্রায় ৮০০ কোটি টাক লোপাট হয়।
ঘটনা অনুসন্ধানে ভারতীয় নাগরিক রাকেশ আস্তানাকে আইটি বিশেষজ্ঞ হিসেবে নিয়োগ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। তিনি ভাড়া করেন আইটিবিষয়ক প্রতিষ্ঠান ফায়ার আইকে। এর আগে দুই দফায় পৃথক দুটি প্রতিবেদন জমা দেন তিনি। জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের সভাপতিত্বে সভায় সব পরিচালক, দু’জন ডেপুটি গভর্নর ছাড়াও রাকেশ আস্তানার পুরো টিম উপস্থিত ছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের পক্ষ থেকে রাকেশ আস্তানার কাছে জানতে চাওয়া হয় কীভাবে এত বড় সাইবার হ্যাকিং হল, কারা জড়িত, প্রকৃত বিচারে কাদের ভুল ছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো কর্মকর্তা জড়িত আছেন কিনা।
বিদেশীদের মধ্যে কোন দেশ এবং কারা জড়িত? তবে বোর্ড সভায় রাকেশ আস্তানা কাদেরকে দায়ী করেছেন সে বিষয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি তিনি। এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের তিন সদস্যবিশিষ্ট প্রতিনিধি দল রোববার ফিলিপাইনে ইন্টারপোলের সঙ্গে একটি বৈঠকে মিলিত হয়েছে বলে জানা গেছে। প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে রয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গোয়েন্দা ইউনিট বিএফআইইউর মহাব্যবস্থাপক দেব প্রসাদ দেবনাথ।
তার সঙ্গে রয়েছেন একই বিভাগের কর্মকর্তা মো. কামাল হোসেন ও আবদুর রব। রিজার্ভ চুরির পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ আজ : কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ চুরির ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ হচ্ছে আজ।
রোববার ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান পরিচালক জামাল উদ্দিন। এর আগে রিজার্ভ চুরি সংক্রান্ত সরকারের তদন্ত কমিটি এপ্রিল মাসে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে অন্তর্বর্তীকালীন রিপোর্ট জমা দেয়। এতে বলা হয়- বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ চুরির পেছনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দুর্বলতা ছিল। দায়িত্বে অবহেলা ছিল কয়েকজন কর্মকর্তার। উল্লিখিত ঘটনাসহ সুনির্দিষ্ট কয়েকটি দুর্বলতা শনাক্ত করে দেয়া ওই রিপোর্টে প্রায় এক মাসেরও বেশি সময় পর আজ চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়া হচ্ছে।