আইপিএলে ব্যক্তিগত পদক জিতলেন যারা
আপডেট: ২০১৬-০৫-৩০ ০৯:৪৫:৪৬
সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের শিরোপা জয়ের মধ্য দিয়ে রবিবার (২৯ মে) রাতে পর্দা নামল ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) টি২০ ক্রিকেটের নবম আসরের। গত ৯ এপ্রিল শুরু হয়েছিল এই আসর। দীর্ঘ এক মাস ২০ দিন ৮ দলের ব্যাট-বলের লড়াই শেষে প্রথমবারের মতো শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট মাথায় পড়ল ডেভিড ওয়ার্নারের নেতৃত্বাধীন হায়দ্রাবাদ। টান টান উত্তেজনার ফাইনালে বিরাট কোহলির রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুকে ৮ রানে হারিয়েছে দলটি।
এদিকে, দলীয় সাফল্যের পাশাপাশি আসর শেষে ব্যক্তিগত সাফল্যে শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট ছিনিয়ে নিয়েছেন বেশ ক’জন ক্রিকেটার। এদের কেউ ব্যাটে সেরা হয়েছেন, কেউ বা বল হাতে। আবার কেউ সেরা হয়েছেন দৃষ্টিনন্দন ফিল্ডিংয়ে, কেউ পদক জিতেছেন অলরাউন্ড নৈপুণ্যে।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ (ফাইনাল) :
রবিবার রাতে এম চেন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে ব্যাট-বল দুই বিভাগেই উজ্জ্বল ছিলেন সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের হয়ে খেলা অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার বেন কাটিং। ব্যাট হাতে মাত্র ১৫ বলে ৩৯ রান করার পর বল হাতে ২ উইকেট নিয়ে হায়দ্রাবাদকে চ্যাম্পিয়ন হতে সাহায্য করেছেন তিনি। তাই তো ফাইনালে ম্যাচ সেরার (ম্যান অব দ্য ম্যাচ) পদকটিও জিতেছেন তিনি।
সেরা উদীয়মান খেলোয়াড় :
আসরজুড়ে দ্যুতি ছড়িয়েছেন অসংখ্য তরুণ ক্রিকেটার। তবে সেরা উদীয়মান খেলোয়াড়ের পুরস্কারটি জিতে নিয়েছেন বাংলাদেশের ‘কাটার মাস্টার’ খ্যাত তরুণ পেসার মুস্তাফিজুর রহমান। অনলাইনে ভক্তদের রায়ে ৮৩.২ শতাংশ ভোট পেয়েছেন তিনি। মুস্তাফিজের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর হয়ে খেলা ভারতীয় ক্রিকেটার লোকেশ রাহুল পেয়েছেন ৬.৩ শতাংশ ভোট।
আসরের শুরু থেকে শেষ অব্দি বল হাতে সফল ছিলেন মুস্তাফিজ। বিশ্বসেরা ব্যাটসম্যানদেরও ঘোল খাইয়ে ছেড়েছেন তিনি। মোট ৬১ ওভার বোলিং করে ৬.৯০ ইকোনোমি রেটে ১৭ উইকেট নিয়েছেন মুস্তাফিজ। সেরা উইকেটশিকারী বোলারদের তালিকায় তিনি রয়েছেন পঞ্চমস্থানে। অন্যদিকে, কম করেও ২০ ওভার বোলিং করেছেন এমন বোলারদের মধ্যে তার ইকোনোমি রেটই সেরা। মুস্তাফিজের এমন সাফল্যমাখা বোলিং হায়দ্রাবাদের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পিছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
সেরা রান সংগ্রহকারী :
এই পদকটি জিতে নিয়েছেন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর অধিনায়ক বিরাট কোহলি। বর্তমান বিশ্বে কেন তাকে সেরা ব্যাটসম্যান বলা হয়, এবারের আইপিএলে তা প্রমাণ করে দেখিয়েছেন ভারতের এই তারকা ক্রিকেটার। আসরে মোট ১৬ ম্যাচে ব্যাটিং করে ৯৭৩ রান করেছেন কোহলি। এর মধ্যে রয়েছে ৪টি সেঞ্চুরি ও ৭টি হাফসেঞ্চুরি। কোহলির ব্যাটে চড়েই মূলত লিগ পর্বে বাদ পড়ার শঙ্কায় পড়া বেঙ্গালুরু শেষ অব্দি রানার্স আপ হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে। সর্বাধিক রান সংগ্রহ করার স্বীকৃতি হিসেবে ‘অরেঞ্জ ক্যাপ’ পদকটি তাই কোহলির হাতেই উঠেছে।
আসরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৮৪৮ রান করেছেন চ্যাম্পিয়ন সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নার। কোনো সেঞ্চুরির দেখা না পেলেও মোট ৯টি হাফসেঞ্চুরি করেছেন তিনি।
সেরা উইকেটশিকারী :
এই পদক জিতে নিয়েছেন চ্যাম্পিয়ন সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের ভারতীয় পেসার ভুবনেশ্বর কুমার। মোট ১৭ ম্যাচে (ফাইনালসহ) ৬৬ ওভার বোলিং করে ৪৯০ রান খরচায় ২৩ উইকেট নিয়েছেন ভুবনেশ্বর। গোলাপি ক্যাপের মালিক তাই তিনিই হয়েছেন।
দ্বিতীয়স্থানে থাকা রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর লেগস্পিনার যুবেন্দ্র চাহালের সংগ্রহ ১৩ ম্যাচে ৪৯.১ ওভার বোলিং করে ৪০১ রান খরচায় ২১ উইকেট।
সেরা ক্যাচ :
রাউন্ড রবিন লিগে কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিপক্ষে স্লিপে দাঁড়িয়ে দুর্দান্ত এক ক্যাচ ধরেছিলেন গুজরাট লায়ন্স দলের অধিনায়ক সুরেশ রায়না। কলকাতার সুর্যকুমার যাদবের ব্যাট থেকে আসা বলটি বাতাসে ভেসে রায়নার মাথার উপর দিয়ে চলে যাচ্ছিল বাউন্ডারির দিকে। স্লিপে দাঁড়ানো রায়না অনেকটা শুণ্যে লাফিয়ে শরীরটাকে পিছন দিকে বাঁকিয়ে এক হাতে সেই বলটি তালুবন্দী করেন। শেষ অব্দি এবারের আইপিএলে সেটাই সেরা ক্যাচের পুরস্কার এনে দিয়েছে সুরেশ রায়নাকে। আইপিএলের ৯ বছরের ইতিহাসে এটি অন্যতম সেরা ক্যাচ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
মোস্ট ভ্যালুয়েবল প্লেয়ার বা সবচেয়ে মূল্যবান খেলোয়াড় :
এই পদকও জিতে নিয়েছেন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর অধিনায়ক বিরাট কোহলি। এমনিতে টি২০ ক্রিকেটে সেঞ্চুরি করা চাট্টিখানি কথা নয়। সেখানে এবারের আইপিএলে (এক আসরেই) ৪টি সেঞ্চুরি করেছেন কোহলি। সঙ্গে রয়েছে ৭টি হাফসেঞ্চুরি। মোট ৯৭৩ রান করেছেন। ইতিহাসের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে টি২০ ক্রিকেটের এক আসরেই এক হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করার দ্বারপ্রান্তেই পৌঁছে গিয়েছিলেন তিনি। সর্বোপরি অধিনায়ক হিসেবে ব্যাট হাতে দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন কোহলি।
লিগ পর্বে থেকেই বিদায় নেওয়ার শঙ্কায় পড়েছিল বেঙ্গালুরু। সেখান থেকে দলকে ফাইনাল পর্যন্ত টেনে এনেছে কোহলির ব্যাট। সব মিলিয়ে তাই এবারের আসরের সবচেয়ে মূল্যবান ক্রিকেটারের পদকটি বিরাট কোহলির হাতেই উঠেছে।
এ ছাড়া অন্যান্য ক্যাটাগরিতে যারা পদক জিতেছেন তারা হলেন-
ফাইনালে সর্বাধিক ছক্কা : ক্রিস গেইল (রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু; ৮ ছক্কা)
আসরে সর্বাধিক ছক্কা : রিবাট কোহলি (রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু; ৩৮টি)
সর্বাধিক সেঞ্চুরি : রিবাট কোহলি (রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু; ৪টি)
সর্বাধিক চার বা বাউন্ডারি : ডেভিড ওয়ার্নার (সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ; ৮৮টি)
সর্বাধিক হাফসেঞ্চুরি : ডেভিড ওয়ার্নার (সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ; ৯টি)
দ্রুততম সেঞ্চুরি (৪৩ বলে) : এবি ডি ভিলিয়ার্স (রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু; গুজরাট লায়ন্সের বিপক্ষে)
দ্রুততম হাফসেঞ্চুরি (১৭ বলে) : ক্রিস মরিস (দিল্লি ডেয়ারডেভিলস, গুজরাট লায়ন্সের বিপক্ষে) এবং কিরন পোলার্ড (মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স, কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিপক্ষে) ফ্রিচার্জ বোল্ট সিজন অ্যাওয়ার্ড (সর্বাধিক ক্যাচ) : এবি ডি ভিলিয়ার্স (১৯ ক্যাচ)