সাইবার নিরাপত্তা আইনের মামলা মিথ্যা প্রমাণিত হলে শাস্তি পাবে বাদী

সানবিডি২৪ প্রতিবেদক প্রকাশ: ২০২৩-০৯-১০ ২০:১৫:১১


সাইবার নিরাপত্তা আইনে দ্বায়েরকৃত মামলা মিথ্যা প্রমাণিত হলে সে জন্য বাদীকে শাস্তি পেতে হবে। মিথ্যা মামলা দায়েরকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করে সাজার বিধান যুক্ত করার সুপারিশ জানিয়ে জাতীয় সংসদে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। সুপারিশে বলা হয়েছে, মিথ্যা মামলার শিকার হওয়া ব্যক্তি লিখিত অভিযোগ দিলে আদালত তা আমলে নেবে।

রোববার (১০ সেপ্টেম্বর) সাইবার নিরাপত্তা বিল-২০২৩ পাসের সুপারিশ করে সংসদে প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সংসদীয় কমিটির সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার সংসদীয় কমিটির বৈঠকে সাংবাদিক নেতাদের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে এ সংক্রান্ত সুপারিশ চূড়ান্ত করে কমিটি। বিলের ৩২ নম্বর ধারা বাদ দেওয়াসহ কয়েকটি ধারায় শব্দগত পরিবর্তন আনার সুপারিশ করা হয়েছে। তবে স্বাধীন গণমাধ্যমের জন্য বিলের ৪২ ধারা বড় হুমকি উল্লেখ করে সাংবাদিক নেতারা প্রবল আপত্তি জানানো সত্ত্বেও ওই ধারা বহাল রাখা হয়েছে।

বিলের ৪২ ধারায় বিনা পরোয়ানায় তল্লাশি ও গ্রেপ্তারের ক্ষমতা দেওয়া আছে পুলিশকে।

এখানে সংশোধনী এনে বলা হচ্ছে, এই ধারায় সাব ইন্সপেক্টর পর্যায়ের কর্মকর্তার জায়গায় পুলিশ পরিদর্শক (ইনপেক্টর) পর্যায়ের কর্মকর্তা বিনা পরোয়ানায় তল্লাশি ও গ্রেপ্তার করতে পারবেন।

সংশোধিত বিলের মিথ্যা মামলা সংক্রান্ত ৩৪ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি অন্য কারো ক্ষতিসাধনের উদ্দেশ্যে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে এই আইনের অন্য কোনো ধারার অধীন মামলা বা অভিযোগ দায়ের করার জন্য ন্যায্য বা আইনানুগ কারণ না জেনেও মামলা বা অভিযোগ দায়ের করেন বা করান, তাহলে তা হবে একটি অপরাধ। এই অপরাধে মামলা বা অভিযোগ দায়েরকারী ব্যক্তি এবং যিনি অভিযোগ দায়ের করিয়েছেন ওই ব্যক্তি মূল অপরাধটির জন্য যে দণ্ড নির্ধারিত রয়েছে সে দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

আরো বলা হয়েছে, যদি এই আইনের একাধিক ধারায় কোনো মামলা বা অভিযোগ করেন, তাহলে ওই ধারায় বর্ণিত অপরাধগুলোর মধ্যে মূল অপরাধের জন্য যে দণ্ডের পরিমাণ বেশি হয় সেটাই দণ্ডের পরিমাণ হিসাবে নির্ধারণ করা যাবে।

কোনো ব্যক্তির লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে ট্রাইব্যুনাল এই অপরাধের অভিযোগ গ্রহণ ও মামলার বিচার করতে পারবেন বলে বিলে যুক্ত করা হয়েছে।

এ ছাড়া বিলের ২১ ধারায় শব্দগত পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় সংগীত বা জাতীয় পতাকার বিরুদ্ধে কোনো প্রকার প্রপাগান্ডা ও প্রচারণা সংক্রান্ত অপরাধের কথা বলা আছে। এখানে ‘পতাকার বিরুদ্ধে কোনো প্রকার প্রপাগান্ডা’ এর স্থলে ‘পতাকা সম্পর্কে বিদ্বেষ, বিভ্রান্তি ও কুৎসামূলক’ শব্দ প্রতিস্থাপন করা হবে।

কমিটি বিলের ৩২ ধারা বাতিলের প্রস্তাব করেছে। এ ধারায় অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট যুক্ত করা হয়েছিল। এটি ডিজিটাল মাধ্যমে কেউ অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টভুক্ত অপরাধ করলে তার সাজার বিধান করতে যুক্ত করা হয়।

বিলের ৮ ধারায়ও সংশোধনী আনা হচ্ছে। ডিজিটাল মাধ্যম থেকে তথ্য–উপাত্ত অপসারণ ও ব্লক করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে এই ধারায়। এখানে আগে বলা ছিল যদি আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ‘প্রতীয়মান’ হয় ডিজিটাল বা ইলেকট্রনিক মাধ্যমে প্রকাশিত বা প্রচারিত কোনো তথ্য-উপাত্ত দেশের বা এর কোনো অংশের সংহতি, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা, ধর্মীয় মূল্যবোধ বা জনশৃঙ্খলা ক্ষুণ্ন করে, বা জাতিগত বিদ্বেষ ও ঘৃণার সঞ্চার করে, তা হলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ওই তথ্য-উপাত্ত অপসারণ বা ব্লক করার জন্য মহাপরিচালকের মাধ্যমে বিটিআরসিকে অনুরোধ করতে পারবে। এখানে ‘প্রতীয়মান’ শব্দের জায়গায় ‘তথ্য–উপাত্ত বিশ্লেষণ সাপেক্ষে, বিশ্বাস করার কারণ থাকে যে’ প্রতিস্থাপন করা হবে।

বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন রহিত করে সাইবার নিরাপত্তা আইন করা হচ্ছে। গত ৫ সেপ্টেম্বর সাইবার নিরাপত্তা বিল সংসদে তোলা হয়। এরপর বিলটি পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়। চলতি অধিবেশনেই বিলটি পাস হবে।

এএ