সরকার কালোবাজারিদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না: শিল্পমন্ত্রী
সানবিডি২৪ প্রতিবেদক প্রকাশ: ২০২৩-০৯-২৮ ১৭:১৪:০৩
শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেছেন, আলু-পটলের দাম নিশ্চয়ই বিদেশ থেকে ঠিক করা হয় না। এটা আমাদের দেশেই হয়। আমাদের লজ্জা লাগে, যখন কালোবাজারিরা বলে, দাম নিয়ে আমরা কী করব? সরকার এদের কোনোভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না।
তিনি বলেন, জনগণের যদি অংশগ্রহণ না থাকে, সমাজের যদি সহযোগিতা না থাকে, তাহলে এখানে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা কারো পক্ষে একা সম্ভব হবে না। কালোবাজারিরা পাগলা ঘোড়ার মতন চলতেই থাকবে! এসব কালোবাজারির মধ্যে কোনো মনুষ্যত্ববোধ কাজ করে না।
বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) তিন দিনব্যাপী ‘৯ম বাপা ফুডপ্রো ইন্টারন্যাশনাল এক্সপো ২০২৩’ মেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে শিল্পমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশ অ্যাগ্রো প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশন (বাপা) ও রেইনবো এক্সিবিশন অ্যান্ড ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সার্ভিসেস লিমিটেডের যৌথ উদ্যোগে এ মেলার আয়োজন করা হয়েছে।
কালোবাজারিদের প্রতি ব্যবসায়ীদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে শিল্পমন্ত্রী বলেন, বাজারকে অস্থিতিশীল রাখার জন্য যারা কাজ করছে, তাদেরকে ব্যবসায়ী বলা যাবে না, তারা কালোবাজারি। আর ব্যবসায়ীদেরও বলব তাদের আপনারা আপন মনে করবেন না। যারা গণমানুষকে কষ্ট দিচ্ছে, দুঃসময়ের সুযোগ নিচ্ছে, তারা কখনো দেশপ্রেমিক হতে পারে না। তাদের প্রতি ব্যবসায়ীদের সজাগ থাকতে হবে। এই কালোবাজারিরা যেন আমাদের তরুণ প্রজন্মের ব্যবসায়ীদের নষ্ট না করে দেয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
তিনি বলেন, আমার শিল্প মন্ত্রণালয় সবসময় ব্যবসায়ীদের জন্য খোলা। যেকোনো সহযোগিতার জন্য আমি আপনাদের আহ্বান জানাবো। ব্যবসায় যদি কোনো সমস্যা থাকে, তাহলে আপনারা ব্যবসায়ীরা সরকারের সঙ্গে বসুন, তা ট্যারিফ হোক বা যাই হোক, আমরা সমাধান করে দেব। সরকার ব্যবসায়ীদের আপন মনে করে।
নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেন, আজ বাংলাদেশের ফুড প্রসেসিং এবং প্যাকেজিং ইন্ডাস্ট্রি অনেক এগিয়ে গেছে। কাজুবাদাম থেকে শুরু করে আনারসসহ আজ বাংলাদেশে প্রায় সব ধরনের ফল পাওয়া যায়। আমি ব্যবসায়ীদের বলব, আপনারা বাংলাদেশের এসব ফল নিয়ে কাজ করুন। আপনারা যারা ব্যবসায়ী আছেন, এগুলোকে প্রসেসিং করুন। আজ বিশ্ব খুব ছোট, আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থাও উন্নত। সব মিলিয়ে আমরা আমাদের পণ্যগুলোকে বিশ্বের যেকোনো স্থানে পৌঁছে দিতে পারব, সেই সক্ষমতা আমাদের আছে। তাই আমি বলতে চাই, বাংলাদেশে ফুড প্রসেসিং এবং প্যাকেজিং সেক্টর বেশ সম্ভাবনাময়। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এই অ্যাগ্রোবেজড ফুড ইন্ডাস্ট্রির প্রতি খুবই আগ্রহী।
লিখিত বক্তব্যে মেলা কমিটির চেয়ারপারসন ও প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী আহসান খান চৌধুরী বলেন, বিশ্বায়নের এই যুগে প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করা ছাড়া কোনো খাতে উন্নয়ন করা সম্ভব না। কাজেই বাংলাদেশ যাতে কোনোভাবেই এ খাতে পিছিয়ে না যায়, সে বিষয়ে বাপা সদা সচেষ্ট। ফুড প্রসেসিং সেক্টর এবং এর সঙ্গে জড়িত সব প্রতিষ্ঠানের বিকাশ এবং সার্বিক সমন্বয় নিশ্চিত করার মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন আরও বেগবান করতে বাপা সদা সচেষ্ট।
তিনি বলেন, যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশের ফুড প্রসেসিং সেক্টরকে আন্তর্জাতিক মানে নিয়ে যেতে এ ধরনের মেলা সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে। আমরা আশাবাদী যে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এ মেলার পরিসর ক্রমে বাড়বে। আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর পারস্পরিক বাণিজ্যের প্রসার এবং আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে দেশীয় প্রতিষ্ঠানসমূহের পরিচয় করানো এই মেলার অন্যতম লক্ষ্য। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের এই ধারা বজায় রাখতে হলে প্রতি বছর এই মেলার আয়োজন খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানের উদ্ভাবিত প্রযুক্তির সঙ্গে আমাদের দেশি প্রতিষ্ঠানের একটা মেলবন্ধন হয়, যা উৎপাদন ব্যবস্থাকে এগিয়ে নিতে সক্ষম।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন, ঢাকায় নিযুক্ত ইতালির রাষ্ট্রদূত আন্তোনিও আলেসান্দো, এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মাহবুবুল আলম, বাপার সাধারণ সম্পাদক মো. ইকতাদুল হক, সাবেক সহ-সভাপতি শোয়ের হাসানসহ বাপার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
মেলা প্রতিদিন সকাল ১০টায় শুরু হয়ে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত চলবে। তিন দিনব্যাপী এই মেলায় প্রদর্শনী ছাড়াও কারিগরি সেশন রয়েছে, যেখানে দেশ-বিদেশের এই খাতের বিশেষজ্ঞরা উপস্থিত থাকবেন।
এ ছাড়া অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দেশীয় প্রতিষ্ঠানের বিজনেস ম্যাচিং সেশনের ব্যবস্থা থাকবে এই মেলায়। মেলা সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। মেলায় ইন্ডিয়া, চীন, জার্মানি, ইতালি, যুক্তরাষ্ট্র, সুইজারল্যান্ড, স্লোভেনিয়াসহ প্রায় ২০টি দেশের শতাধিক প্রতিষ্ঠান নিজেদের পণ্য এবং সেবা প্রদর্শন করছে।
এএ