রাজনৈতিক নেতাদের মুক্তি দিয়ে পুনঃতফসিল ঘোষণার দাবি

আপডেট: ২০২৩-১১-২৮ ২১:০৫:০৮


বিএনপিসহ রাজনৈতিক নেতাদের মুক্তি দিয়ে পুনরায় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন বিশিষ্টজন। নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণেরও আহ্বান জানানো হয়েছে। ইসির উদ্দেশে বক্তারা বলেছেন, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন সবচেয়ে শক্তিশালী। কমিশন চাইলে রাজনৈতিক নেতাদের মুক্তির বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে পারে। সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে নির্বাচনী তফসিলও পুনঃনির্ধারণ করা প্রয়োজন।

মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) রাজধানী পান্থপথে ‘দৃকপাঠ’ ভবনে ‘আবারো সাজানো নির্বাচনঃ নাগরিক উৎকণ্ঠা’ শীর্ষক একটি আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। মৌলিক অধিকার সুরক্ষা কমিটি এই সভার আয়োজন করে। নির্বাচন বিশেষজ্ঞ বদিউল আলম মজুমদারের সভাপতিত্বে সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল।

আলোচনায় বক্তব্য রাখেন নারীপক্ষের প্রতিষ্ঠাতা শিরিন হক, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক ফারুখ ফয়সাল, নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী ও ব্রতীর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন মুরশিদ, সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক, তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ। সভায় আইনজীবি, মানবাধিকারকর্মী, সামাজিক আন্দোলনেরকর্মী ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন দৃকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলোকচিত্রী শহিদুল আলম।

মূল প্রবন্ধে আসিফ নজরুল বলেন, বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর বিরুদ্ধে নির্বিচারে মামলা দায়ের, বিচারিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে সাজাপ্রদান ও নির্যাতনের মাধ্যমে সরকার দুটো লক্ষ্য অর্জন করতে চাচ্ছে। এক, নির্বাচনী প্রতিযোগিতায় বিএনপির অংশগ্রহনের সুযোগ রুদ্ধ করা। দুই: সাজানো নির্বাচনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও আন্দোলনের শক্তিকে ধুলিসাৎ করা। একাজে পুলিশ, জনপ্রশাসন, ফৌজদারী বিচার ব্যবস্থাসহ রাষ্ট্রর প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করছে সরকার। নির্বাচনের এই আয়োজন এমনকি ২০১৮ ও ২০১৮ সালের চেয়েও নগ্ন, বেপরোয়া ও উদ্ধত। এই নির্বাচনের ফলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক, অথনৈতিক ও সামাজিক সংকট ঘনীভূত হবে, এর সমর্থনকারী দেশগুলো বাংলাদেশ থেকে নানাভাবে আরো বেশী অন্যায্য সুবিধা নেয়ার সুযোগ পাবে।

শারমিন মুরশিদ বলেন, নির্বাচনকালীন সরকার আমাদের মনঃপুত না হলেও, নির্বাচন কমিশন সবচেয়ে শক্তিশালী। তাদের উচিত হবে অনৈতিক ও অযৌক্তিকভাবে যাঁদেরকে রাজবন্ধী হিসেবে আটকে রাখা হয়েছে তাদেরকে মুক্তি দেওয়া যাতে করে একটি সুষ্ঠূ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হতে পারে। নির্বাচনী তফসিল পুনঃনির্ধারণ করা, কেননা পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নেই। বর্তমানে যেই পরিস্থিতি তাতে নির্বাচন মেনে নেওয়া যাচ্ছে না। গনতন্ত্র মানে আলোচনা এবং আলোচনার সুযোগ দিতে হবে, সুসংগঠিত হয়ে সকলকে নিয়ে নির্বাচন করতে হবে।

বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে শাহদীন মালিক বলেন, সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টে প্রবেশের সময়ে গেটে আমার গাড়ি থামানো হয়েছে। গাড়িতে সুপ্রিম কোর্টের পরিচয় সংবলিত স্টিকার এবং আইনজীবীর কালো গাউন থাকার পরেও আমাকে চেক করে ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়া হয়েছে। জুনিয়র আইনজীবীরা বলছেন, নিরাপত্তার নামে তাদের কাগজপত্র পোশাক সব পরীক্ষা করা হয়। এটা শুধু সুপ্রিম কোর্টের অবস্থা নয়। সারাদেশেই হয়তো একই অবস্থা। বিজিবি, আনসার, পুলিশ, র‍্যাব সকল আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী মিলিয়ে ১০-১২ লাখের মতো প্রায়। এরশাদের আমলেও এতো সংখ্যক ছিল না। এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়নি।

অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ বলেন, বাংলাদেশের সব মানুষই উদ্বিগ্ন। বর্তমানে ভয়াবহ একটি পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে যেখানে মুখোশ পড়ে বাড়ি বাড়ি হামলা করা হচ্ছে, পুলিশ কিছু করছে না, কোনো মামলা হচ্ছে না। ২৮ অক্টোবর-এর পর সব শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এগুলো দেখে মনে হচ্ছে আগের থেকেই ধাপে ধাপে পরিকল্পিত ছিল যাতে কেউ কোনো কথা না বলতে পারে। সরকার সবসময় বলছে তারা খুবই জনপ্রিয় এবং জনগণ তাদের সঙ্গে আছে। তাহলে তাদের এমন একটি অবস্থা তৈরি করা উচিৎ যাতে জনগণ উৎসবমুখর পরিবেশে আনন্দের সঙ্গে ভোট দিতে পারে, নির্বাচন প্রক্রিয়া স্বচ্ছ হয়, আদালত-বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের ভূমিকা রাখতে পারে। মিথ্যাচার ও প্রতারণা না করে সরকার যদি নির্বাচিত হয়ে আসে তাহলে কারও কোনো অসুবিধা থাকবে না।

শিরিন হক বলেন, দেশের পরিস্থিতি নিয়ে সবাই উদ্বিগ্ন। নির্বাচন তার একটি ছোট অংশ। সরকারের সংলাপ নিয়ে ধারাবাহিক উপেক্ষা দেখে বোঝা যায় একতরফা নির্বাচনের মানসিকতা তাদের অনেক আগে থেকেই ছিল। তাদের এই পরিকল্পনা দেখে আমরা ভীত, আমাদের তরুণ সমাজ হতাশাগ্রস্ত।

বদিউল আলম মজুমদার বলেন, বর্তমান সরকারের বৈধতা প্রশ্নবিদ্ধ। ২০১৪ সালে আমাদের মাথায় আসেনি। তখন সংবিধান সংশোধনের মধ্যে দিয়ে যে সরকার এসেছে তা এখনো টিকে আছে এবং এটা অসংবিধানিক। এখন যে নির্বাচনের পরিকল্পনা হচ্ছে তা শুধু নিয়ন্ত্রিত বা সাজানো নির্বাচন নয়, তা একতরফা নির্বাচন। সঠিক, সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হলে ভোটার, বেছে নেওয়ার সুযোগ, যথার্থ বিকল্প ও বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা দরকার।

এএ