এফবিসিসিআই সভাপতি
ব্যাংকগুলো ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ঝামেলা মনে করে
সানবিডি২৪ প্রতিবেদক প্রকাশ: ২০২৩-১২-১৮ ১৯:৪৬:৩৯
ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের (এমএসই) বিকাশে রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকা প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই ও ডিসিসিআই’র নেতারা। তারা মনে করেন, এসএমই খাতের উন্নয়নের সঙ্গে দেশের প্রকৃত অর্থনৈতিক উন্নয়ন নির্ভর করছে। এ খাতকে উপেক্ষা করে উন্নয়ন সম্ভব নয়। সঠিক বিকাশের জন্য এসএমই খাতের জন্য আলাদা মন্ত্রণালয় গঠনেরও দাবি জানিয়েছেন তারা।
সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) রাজধানীর পল্টনে অর্থনীতি বিটের সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) কার্যালয়ে ‘এসএমই খাতে সম্ভাবনা এবং চ্যালেঞ্চসমূহ’ শীর্ষক সেমিনারে উল্লিখিত অভিমত ব্যক্ত করেন ব্যবসায়ী নেতারা।
ইআরএফ সভাপতি মোহম্মদ রেফায়েত উল্লাহ মৃধার সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেমের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআই’র প্রেসিডেন্ট মাহবুবুল আলম। অন্যান্যের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. মো. মাসুদুর রহমান, ডিসিসিআই প্রেসিডেন্ট ব্যারিস্টার মোহাম্মদ সামীর সাত্তার এবং ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো.মেহমুদ হোসাইন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ন্যাশনাল ব্যাংকের ইভিপি মো. শহীদুল ইসলাম।
এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, আমাদের অর্থনীতিতে এসএমই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এজন্য ব্যাংকগুলোর যতটা এগিয়ে আসা উচিত, সেভাবে এগিয়ে আসছে না। নানা কারণ দেখিয়ে তারা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ঋণ দিতে আগ্রহ প্রকাশ করছে না। উপরন্তু, ব্যাংকগুলো ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ঝামেলা মনে করে। অথচ, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা সময়মতো ঋণ পরিশোধ করে থাকেন।
তিনি বলেন, কিছু কিছু ব্যাংক ঋণ দিতে আগ্রহ প্রকাশ করলেও ঋণের জন্য তারা যেসব দলিলের কথা উল্লেখ করে, সেগুলো ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের পক্ষে সরবরাহ করা সম্ভব নয়। ফলে,সেসব ব্যাংকের কাছ থেকেও সহায়তা পাচ্ছে না। তাই, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত থেকে ঋণ নিতে হয়। এ ব্যবস্থা এসএমই খাত বিকাশের জন্য উপযোগী নয়। ব্যাংক ব্যবস্থায় ‘মাইন্ডসেট’ পরিবর্তন করা প্রয়োজন।
জাপান-কোরিয়ার উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন ,দেশ দুটি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের ওপর নির্ভর করে বৃহৎ শিল্পের বিকাশ ঘটিয়েছে। যেমন: জাপানের টয়োটা কোম্পানি, তাদের গাড়ির বিভিন্ন অংশের জন্য এসএমই’র ওপর নির্ভর করে। এ ব্যবস্থা আমাদের দেশে বিকাশ লাভ করলে শিল্প খাতের উন্নয়নের পাশাপাশি দেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
এফবিসিআই’র সভাপতি দেশে এসএমই খাতের বিকাশে নারীদের সম্পৃক্ততা আরও বাড়ানোর পাশপাশি এ খাতের উদ্যোক্তাদের সোর্স ট্যাক্স প্রত্যাহারের দাবি জানান।
এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. মো. মাসুদুর রহমান বলেন, এসএমই খাতে আমরা অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক পিছিয়ে রয়েছি। এ খাতের মোট অর্থায়নের ৭০ শতাংশ আসে ব্যাংকবহির্ভূত খাত থেকে। ফলে, একটি পণ্য উৎপাদনে যে ব্যয়, তার বড় একটি অংশ সুদসহ ঋণের কিস্তি পরিশোধে ব্যয় হয়ে যায়।
তিনি বলেন, ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণের সুদ যদি ৯ শতাংশ হয়, তাহলে অপ্রাতিষ্ঠানিক সুদের হার হয় ২৭ থেকে ৩০ শতাংশ। ফলে, উদ্যোক্তার উৎপাদন ব্যয় অনেক বেশি হয়। এছাড়াও তাদের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করার তেমন সুযোগ নেই। এ অবস্থায় ব্যাংকগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। ইতোমধ্যে এসএমই ফাউন্ডেশন নানা ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে। বিশেষ করে, ই-কমার্সের সঙ্গে জড়িত নারী উদ্যোক্তাদের বিষয়ে ফাউন্ডেশন বেশকিছু উদ্যোগ নিয়েছে, যা খুব শিগগির দৃশ্যমান হবে।
ডিসিসিআই প্রেসিডেন্ট ব্যারিস্টার মোহাম্মদ সামীর সাত্তার বলেন, দারিদ্র্য বিমোচন এবং শিল্প বিকাশে এসএমই খাতের উন্নয়ন এখন সময়ের দাবি। যেসব দেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে গেছে, তারা শুরুতে এসএমই খাতকে গুরুত্ব দিয়েছিল বলেই আজ তারা এগিয়ে গেছে। এসএমই খাতের এক্সচেঞ্জ অব ফাইন্যান্স বাড়ানোর ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোকে উদ্যোগ নিতে হবে। সম্ভাবনা থাকা সত্বেও আর্থিক সুযোগ না পাওয়ায় অনেকেই শুরুতেই ছিটকে পড়ছে।
তিনি বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আমাদের দেশের এসএমই খাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অথচ, আর্থিক খাত এবং সরকারি সহযোগিতা যে হারে পাওয়া উচিত ছিল, সেটা এসএমই খাত পায়নি। এসএমই খাতের উন্নয়ন করা না হলে, সে চাপ পুরো অর্থনীতির ওপর পড়বে। এ কারণে এ খাতে আর্থিক সহযোগিতা বাড়াতে হবে। আন্তর্জাতিক বাজার বাড়াতে হবে। পাশাপাশি এ খাতে দক্ষ উদ্যাক্তা গড়ে তুলতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিতে হবে।
ন্যাশনাল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মেহমুদ হোসাইন বলেন, ন্যাশনাল ব্যাংক এসএমই খাতে দীর্ঘদিন ধরেই কাজ করছে। এ খাতে যতটা সহযোগিতা দেওয়ার প্রয়োজন, সেটা হয়ত নানা কারণে আমরা দিতে পারছি না। তবে, খুব শিগগির এ খাতে আমাদের সহযোগিতা বাড়ানো হবে।
এএ