২০২৩ সালে রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহত ৯৬, বিচারবহির্ভূত হত্যা ৩৩

সানবিডি২৪ প্রতিবেদক প্রকাশ: ২০২৩-১২-৩১ ২১:৪৯:১০


২০২৩ সালে সারাদেশে রাজনৈতিক সহিংসতায় ৯৬ জন, গণপিটুনিতে ৭৩ জন এবং বিচারবহিরর্ভূত হত্যাকাণ্ডে ৩৩ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস)।

রোববার (৩১ ডিসেম্বর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এইচআরএসএস জানায়, দেশের ১২টি জাতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ এবং এইচআরএসএস’র তথ্য অনুসন্ধানী ইউনিটের তথ্যের ভিত্তিতে ২০২৩ সালের মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

এইচআরএসএস জানায়, এ বছর উদ্বেগজনকভাবে রাজনৈতিক সহিংসতার ৯৩৩টি ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৯৬ জন ও আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৯ হাজার ২৫৮ জন। যার অধিকাংশই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অন্তর্কোন্দল, নির্বাচনী সহিংসতা এবং বিএনপির পদযাত্রা ও সমাবেশকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের পাল্টা শান্তি সমাবেশ-কেন্দ্রিক সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনা ঘটে।

তাছাড়া আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর দ্বারা ৮ হাজার ৫৫৬ জন রাজনৈতিক কর্মী গ্রেপ্তারের শিকার হন, তাদের মধ্যে বিএনপি-জামায়াতের ৮ হাজার ২৭৭ জন। একই সময়ে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে কমপক্ষে ৪৫৬টি মামলায় ১৪ হাজার ৪০০ জনের নাম উল্লেখ করে এবং আরও ৫৮ হাজার ৯৪০ জনকে অজ্ঞাত আসামি হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়।

এইচআরএসএস জানায়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সরকার দলীয় নেতাকর্মীদের দ্বারা বিরোধী দলীয় কমপক্ষে ৬২৮টি সভা-সমাবেশ আয়োজনে বাধা প্রদানের ঘটনা ঘটেছে। এসময় তাদের সঙ্গে সংঘর্ষে ৩ হাজার ৩৯১ জন আহত এবং সমাবেশ-কেন্দ্রিক ৬ হাজার ৫০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ছাড়াও, নির্বাচনী সহিংসতার ২৫৬টি ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৯ জন এবং আহত হয়েছেন কমপক্ষে ১ হাজার ৪৩৯ জন। শুধু ডিসেম্বর মাসেই নির্বাচনী সহিংসতার ১৮৭টি ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৫ জন এবং আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৯০২ জন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, এ বছর ১৯৪টি হামলার ঘটনায় হত্যা, নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হয়েছেন ৩৬৭ জন সাংবাদিক। ২ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন অন্তত ১৮৬ জন, লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন ৮৬ জন, হুমকির শিকার হয়েছেন ২৬ জন, গ্রেপ্তার ১১ জন ও ৫৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। একই সময়ে আশঙ্কাজনকভাবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও সাইবার নিরাপত্তা আইনের অধীনে দায়ের করা ৫৮টি মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন ৬০ জন এবং অভিযুক্ত করা হয়েছে ১৮৮ জনকে। এ ছাড়া, ‘সংখ্যালঘু’ সম্প্রদায়ের ওপর ২৭টি হামলার ঘটনায় আহত হয়েছেন ৪৩ জন এবং ১৭টি মন্দির, ৩১টি প্রতিমা ও ২৫টি বসতবাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। মার্চ মাসে পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনায় ১ জন নিহত ও অন্তত ৬০ জন আহত হয়েছেন। এ হামলার ঘটনায় কমপক্ষে ১০১টি বাড়ি ও ৩০টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।

এইচআরএসএস জানায়, ‘গণপিটুনির’ ১১৩টি ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৭৩ জন এবং আহত হয়েছেন ৮৮ জন। এ সময়ে ১৯৮টি শ্রমিক নির্যাতনের ঘটনায় পুলিশের গুলিতে ৩ জনসহ নিহত হয়েছেন ৪০ জন এবং আহত হয়েছেন ৩৫০ জন। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ এবং শ্রমিকদের সুরক্ষামূলক সরঞ্জামের অভাবে দুর্ঘটনায় ১৪৮ জন শ্রমিক তাদের কর্মক্ষেত্রে মারা গেছেন।

প্রতিবেদনে জানানো হয়, ২০২৩ সালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দ্বারা বিচারবহিরর্ভূত হত্যাকাণ্ডের ৩১টি ঘটনার শিকার হয়েছেন ৩৩ জন। যাদের মধ্যে ৭ জন তথাকথিত ক্রসফায়ার-বন্দুকযুদ্ধের নামে, ৭ জন নির্যাতনে এবং ১৪ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে থাকা অবস্থায় ৫ জন মারা গেছেন। এ ছাড়াও, কারা হেফাজতে ৮৪ জন মারা গেছেন। শুধু ডিসেম্বর মাসেই কারা হেফাজতে ১৫ জন মারা গেছেন, যার মধ্যে বিএনপি-জামায়াতের ৮ জন।

সংস্থাটি জানায়, চলতি বছরের পুরোটা জুড়েই দেশে নাগরিক এবং রাজনৈতিক অধিকার লঙ্ঘনের প্রবণতা দেখা গেছে। শান্তিপূর্ণ সমাবেশে বাধা, মিথ্যা মামলা, গণগ্রেপ্তার, রাজনৈতিক গ্রেপ্তার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বেআইনি ও বর্বর আচরণের ঘটনাগুলো দেশের মানুষকে উদ্বিগ্ন করছে। উল্লেখযোগ্যভাবে সাংবাদিকরা হামলা, মামলা ও গ্রেপ্তারের সম্মুখীন হয়েছেন। সীমান্তে নিরীহ বাংলাদেশিরা ভারতীয় বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের (বিএসএফ) হাতে হত্যা ও নির্যাতনসহ বিভিন্ন ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন।

এইচআরএসএস’র পক্ষ থেকে সরকারকে মানবাধিকার রক্ষায় দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে এবং দেশের সব সচেতন নাগরিক, সাংবাদিক, রাজনৈতিক নেতা ও দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংগঠনগুলোকে আরও সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানানো হয়।

এএ