সম্পূর্ণ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সিট বরাদ্দ হয়নি নবীন শিক্ষার্থীদের
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি প্রকাশ: ২০২৪-০২-০২ ১৫:৪২:৩১
সম্পূর্ণ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে খ্যাত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ৫২ তম আবর্তনদের নতুন হলে সিট বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। গত ১ ফেব্রুয়ারি(বৃহস্পতিবার) ৫২ তম আবর্তনে ক্লাস শুরু হয়। তাদের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার ৭ মাস পর নতুন হল চালু হয়েছে ঠিকই, কিন্তু আসন পায়নি ৫২ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। তাদের ঠাঁই হয়েছে গণরুমেই।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শিক্ষার্থীদের আশ্বাস দিয়েছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় নবনির্মিত হলগুলো চালু করে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে (৫২ ব্যাচ) ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের সেখানে আসন বরাদ্দ দেওয়া হবে। হল চালু হলেই সশরীরে ক্লাস শুরু হবে। থাকবে না কোনো গণরুম। কিন্তু বর্তমানে ক্লাস শুরু হওয়ার পর পরিস্থিতি সম্পূর্ণ বিপরীত।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে (৫২ ব্যাচ) স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষা চলতি বছরের ১৮ জুন শুরু হয়ে ২২ জুন শেষ হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে আসন সংকট থাকায় গত ৩০ নভেম্বর থেকে অনলাইনে ক্লাস শুরু হয়। কিন্তু অনলাইনে ক্লাস করতে অনাগ্রহ প্রকাশ করে শিক্ষার্থীরা। তখন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল, নবনির্মিত ছয়টি হলের মধ্যে সচল না হওয়া বাকি চারটি হল খুলে দিয়ে তাদের সেখানে আসন বরাদ্দ দিয়ে সশরীরে ক্লাস শুরু হবে।
কিন্তু ক্লাস শুরুর দেড় মাস পরেও হল চালু না হওয়ায় গত ১৬ জানুয়ারি অনলাইন ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে শিক্ষার্থীরা। বাধ্য হয়ে কর্তৃপক্ষ নবনির্মিত হলগুলোর মঞ্চে থেকে ছেলেদের জন্য শহীদ তাজউদ্দীন হল ও মেয়েদের জন্য রোকেয়া হল গত ২৩ জানুয়ারি শিক্ষার্থীদের জন্য খুলে দেয়। চারজনের কক্ষে থাকতে হচ্ছে ১০-১২ জনকে, দুজনের কক্ষে থাকতে হচ্ছে ছয়-১০ জনকে।
গত ৩১ জানুয়ারি শিক্ষার্থীদের হলে আসন বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু নতুন চালু হওয়া দুটি হলে ৫২ ব্যচের কোনো শিক্ষার্থীকে আসন বরাদ্দ দেয়নি। ফলে তাদের থাকতে হচ্ছে পুরনো হলগুলোর গণরুমে। চারজনের কক্ষে থাকতে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থী রাকিব আহমেদ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলেছিল নতুন হল খুলে সেখানে আমাদের আসন বরাদ্দ দেবে। এরকম আশ্বাস দিয়ে সাত মাস পর আমাদের ক্যাম্পাসে এনে গণরুমে জায়গা করে দিয়েছে।
সরেজমিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেদের আটটি হল পরিদর্শনে দেখা গেছে, ‘চার আসন বিশিষ্ট কক্ষে ১০ থেকে ১৪ জন, দুই আসন বিশিষ্ট কক্ষে ছয় থেকে ১০ জন শিক্ষার্থী কক্ষের মেঝেতে তোষক বিছিয়ে গাদাগাদি করে থাকছে। এদিকে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের (৫২ ব্যাচ) শিক্ষার্থীদের আবাসিক হলে আসন নিশ্চিত না করে গণরুমে তোলার প্রতিবাদে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন রেজিস্ট্রার ভবনের সামনে মানবন্ধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক কর্মী ও প্রগতিশীল শিক্ষার্থীরা।
নবীন শিক্ষার্থীদের গণরুমে তোলা প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নূরুল আলম বলেন, ‘তাড়াহুড়ো করে আমরা নতুন দুটি হল চালু করেছি। এজন্য ৫২ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের সেখানে আসন বরাদ্দ দিতে পারিনি। আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি আমরা সচল না হওয়া নবনির্মিত দুটি হলের চাবি হস্তান্তর করব স্ব স্ব হল প্রভোস্টের কাছে। এরপর লোকবল নিয়োগ হলেই হল চালু করে দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের সেখানে আসন বরাদ্দ দেব।’ উল্লেখ্য ২০২২ সালের নবনির্মিত হলগুলোর কাজ শেষ করার কথা থাকলেও তা ২০২৩ সালে শেষ হয়। কিন্তু এখনো বাকি হলগুলোতে আসন ব্যবস্থা ও কর্মকর্তা কর্মচারী নিয়োগ প্রক্রিয়া। এ কারণে শিক্ষার্থীদের সব হলে এখনো বরাদ্দ দিতে পারেনি।’
এনজে