পায়রায় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়তে আগ্রহী সৌদি: সালমান এফ রহমান

আপডেট: ২০২৪-০২-০৭ ১০:৩৬:১১


প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান জানিয়েছেন, বাংলাদেশের পায়রা সমুদ্রবন্দরে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরিতে আগ্রহ দেখিয়েছে সৌদি আরব।

মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) তিন দিনের সৌদি আরব সফর শেষে দেশে ফিরে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) সংবাদ সম্মেলনকক্ষে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী সৌদি আরবকে একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল দিতে চান। সেই প্রস্তাবে তারা আগ্রহী।

সালমান এফ রহমান আরও বলেন, সৌদি আরবের একটি বেসরকারি খাত আমাদের আগেই প্রস্তাব দিয়েছিল। সেটি যেকোনো কারণে আগাচ্ছে না। ফলে তাদের বিনিয়োগমন্ত্রী বলেছেন, ওই কোম্পানি না এগোলে, উনি পায়রাতে অর্থনৈতিক অঞ্চল করার বিষয়ে আগ্রহী।

বিনিয়োগ উপদেষ্টা বলেন, সৌদি আরবে জয়েন্ট ভেনচারে ইউরিয়া সার কারখানা তৈরি করতে চায় বাংলাদেশ, এতে দেশটি সায় দিয়েছে। গত মার্চে আমরা সৌদিতে জয়েন্ট ভেনচারে আমরা একটি ইউরিয়া সার কারখানা করার প্রস্তাব দিয়েছিলাম। তারা সেখানে গ্যাস দেবে। উৎপাদিত ইউরিয়ার শতভাগ আমরাই আমদানি করে নিয়ে আসব। আগামী ২৫ থেকে ৩০ বছর পর্যন্ত এভাবে উৎপাদনটা হবে। তারা এটার সম্ভাব্যতা যাচাই করবে। আমাদের বলেছে, তারা প্রস্তাবটি নিয়ে আগাতে চায়। তারা বলেছে, দুটি পথ আছে। গ্যাস অথবা অ্যামোনিয়া যেকোনো একটি দিয়ে উৎপাদন হবে। কোনটির মাধ্যমে করলে বাণিজ্যিকভাবে বেশি লাভবান হওয়া যাবে সেটি তারা দেখবে। তারপর সিদ্ধান্ত জানাবে। মার্চ মাসের মধ্যে এটার সম্ভাব্যতা যাচাই শেষ হবে। সরকার টু সরকার নয়, এখানে বেসরকারি খাতেরও যুক্ত হওয়ার সুযোগ রয়েছে।

সালমান এফ রহমান বলেন, সভায় কিছু বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি, ইসলামের নামে যে সন্ত্রাসবাদ হয় সেটার বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান থাকবে। সন্ত্রাসীদের কোনো ধর্ম নেই। ইসলামের বদনাম করার জন্য তারা এসব করে। এই সংস্থার মাধ্যমে ইসলামিক দেশগুলোর মধ্যে যে সহযোগিতা আছে সেটি আরও বেগবান করার বিষয়ে সবাই একমত। সেখানে জোরালোভাবে বলা হয়েছে ফিলিস্তিন এবং গাজায় যা হচ্ছে অস্ত্রবিরতি করানো দরকার। সবাই নিন্দা জানিয়েছে এবং সমস্যার সমাধান করতে বলেছে।

তিনি বলেন, ইস্টার্ন রিফাইনারির সেকেন্ড ইউনিট করার জন্য আমরা সৌদির আরামকোকে একটা প্রস্তাব দিয়েছিলাম। সেটা তারা স্টাডি করে বলেছে শুধু রিফাইনারি করতে চায় না। তাদের বিজনেস স্টাডিটা হয়েছে, রিফাইনারির সঙ্গে আপস্ট্রিম আর ডাউন স্ট্রিম দুটোই করতে চায়। তারা আরও ভ্যালু-অ্যাডিশন করতে চায়। আমরা এই প্রস্তাবে একমত হয়েছি। তাহলে এখন একটা পেট্রোকেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি হবে। এতে আমাদের পোশাক খাতেরও উপকার আছে। আমরা এখন প্রায় ৯০ শতাংশ কটন রপ্তানি করি। কিন্তু শতভাগ ম্যানমেইড ফাইবারের আমাদের রপ্তানি খুবই কম। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারের ৮০ শতাংশই ম্যানমেইড। এখন আমরা ৫০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি করেছি শুধু কটনের সেগমেন্ট থেকে। এই খাত আমরা ভালোভাবে দখল করতে পেরেছি। ম্যানমেইড কটন চায়নার ডমিনেশনে ছিল। চায়না থেকে অনেক বিনিয়োগ বাংলাদেশে চলে আসছে। এখন আরামকো এখানে যদি পেট্রোকেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি করে তাহলে আমাদের পোশাকের জন্য ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজের অনেক বড় সুবিধা হবে। তারা খুবই আগ্রহী। এখন তারা নতুন করে পুরো প্রস্তাবটা চেয়েছে।

শেভরন বিবিআনাতে নতুন বিনিয়োগ করার ব্যাপারে তিনি বলেন, তারা বলছে এখানে আমরা ভাবছি গ্যাস আছে। কিন্তু ড্রিলিং না করা পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। ফলে আমরা এখানে নতুন বিনিয়োগ করতে চাই। তারা গভীর সমুদ্রে তেল, গ্যাস অনুসন্ধানেও আগ্রহী। আমাদের অর্থনৈতিক যে উন্নতিটা হবে, সেখানে জ্বালানি খাত খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি আরও বলেন, ফুড সিকিউরিটির বিষয়ে সৌদি আরব বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। মূলত তারা বাংলাদেশে সবজি, মাছ বা অন্য কোনো খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন করবে, তারা সেটি তাদের দেশে নিয়ে যাবে। তারা ফিজিবল স্টাডি করে দেখবে, বাংলাদেশে কোন ক্ষেত্রে তাদের বিনিয়োগ করা সম্ভব হবে। বাংলাদেশের ও সৌদি আরবের ধান গবেষণা প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে গবেষণা করে লং গ্রেড রাইস উৎপাদনের বিষয়েও আলোচনা হয়েছে বলে জানান তিনি।

ইসলামিক মিলিটারি কাউন্টার টেররিজম কোয়ালিশনে (আইএমসিটিসি) বাংলাদেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে প্রতিনিধিত্ব হিসেবে যোগ দেন সালমান এফ রহমান। সভায় জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে সমন্বিত করণীয় বিষয়ে সদস্য দেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রীদের দ্বিতীয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়া সৌদি আরবে বিনিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে সে দেশের জ্বালানিমন্ত্রী, বিনিয়োগমন্ত্রী, শিল্পমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন সালমান এফ রহমান।

বিএইচ