গভর্নর-বিএসইসি চেয়ারম্যনের নিয়োগে আর্থিকখাতে আশার আলো দেখছেন বিশেষজ্ঞরা

পুঁজিবাজার ডেস্ক আপডেট: ২০২৪-০৮-১৫ ১৮:৪৪:৪৯


দেশের আর্থিকখাতে দীর্ঘদিন থেকে মন্দা বিরাজ করছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ডলার সঙ্কট, রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় স্থির, তলানীতে রিজার্ভ, মিশ্র রফতানি প্রবৃদ্ধি, খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি, রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়া এবং বিদেশি ঋণ পরিশোধের চাপসহ আর্থিক খাতের সব সূচকই নিম্নমুখী। নানা অনিয়ম-দুর্নীতিতে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রতি মানুষের আস্থায় চিড় ধরেছে। বিশেষ করে শেয়ার বাজারের প্রতি মানুষের কোন ধরণের আস্থা নেই। অথচ আর্থিকখাতের মধ্যে একটি বড় খাত হচ্ছে শেয়ার বাজার। বিদেশে শিল্প স্থাপন হয় শেয়ার বাজার থেকে ঋণ নিয়ে, ব্যাংক থেকে নয়। কিন্তু বাংলাদেশে এখনও সে পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। বরং প্রতিনিয়ত বিনিয়োগকারীরা বাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। ছোট-বড়-মাঝারি কোনোরকম বিনিয়োগকারীরই এখন আর আস্থা নেই।

সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি) এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মধ্যে যে সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছে; তারা মিলেমিশে জনগণের রক্ত চুষে খাচ্ছে। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ভারতে পলায়ন করলে সরকারের পতন হয়। আর তাই সম্প্রতি গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা অনেক বেড়েছে। এই ধারাবাহিকতায় পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ড. এম মাশরুর রিয়াজকে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ গত মঙ্গলবার বিকেলে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। চার বছরের জন্য তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়। গত ৮ অগস্ট প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস-এর নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করার পর আর্থিকখাতের নেতৃত্বে বড় ধরণের পরিবর্তন আসছে ধারণা করেছিল আর্থিকখাত সংশ্লিষ্টরা। এই ধারাবাহিকতায় ইতিমধ্যে গভর্নর পদে নিয়োগ পেয়েছেন আর্থিকখাতের দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ব্যক্তিত্ব অর্থনীতিবীদ ড. আহসান এইচ মনসুর। ড. আহসান এইচ মনসুর বর্তমানে বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক। আগে তিনি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি দেশের আর্থিক খাতের একজন বিশ্লেষক হিসেবে সুপরিচিত।

আর্থিক খাতের রিপোর্টারদের সংগঠন ইআরএফ’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক এসএম রাশিদুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন আওয়ামী সরকারের চাটুকররা এখনও লেগে আছে অন্তর্বর্তী সরকারকে বিপদে ফেলার জন্য। তিনি গভর্নর ও বিএসইসি চেয়ারম্যানের এর পদে দু’জন অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ব্যক্তিকে নিয়োগ দেওয়ায় অন্তর্বর্তী সরকারকে সাধুবাদ জানান। পাশাপাশি তাদের প্রতি মানুষের যে আস্থা দেখছেন তাতে দ্রুতই আর্থিকখাত ঘুরে দাড়াবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

আর্থিক খাতের বিশ্লেষক ও দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক এএম বাহাউদ্দিন বলেন, শেয়ারবাজার নিয়ে বিনিয়োগকারীরা দীর্ঘদিন আস্থাহীনতায় ছিলো। ড. মাসরুর রিয়াজ অত্যন্ত যোগ্য ও অভিজ্ঞ। তিনি এই পদে আশায় আগামীর শেয়ারবাজার নিয়ে আমি আশাবাদী।
এএম বাহাউদ্দিন বলেন, ড. মাসরুর রিয়াজ এর বাবা প্রখ্যাত সাংবাদিক মরহুম রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ দৈনিক ইনকিলাব গ্রুপের প্রকাশিত স্বনামধন্য দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফের প্রথম সম্পাদক। তিনি জাতীয় প্রেসক্লাবের একাধিকবার নির্বাচিত সভাপতি ছিলেন। অবিভক্ত সাংবাদিক ইউনিয়নের বারবার নির্বাচিত সভাপতিও ছিলেন। পাশাপাশি বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টাও ছিলেন। সর্বোপরি একজন দেশপ্রেমিক মানুষ ছিলেন। তার সন্তান ড. মাশরুর রিয়াজও বিএসইসিতে সুশাসন ফিরিয়ে এনে শেয়ারবাজারের প্রতি মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনবেন।

তথ্য মতে, ড. মাশরুর রিয়াজ বিশ্বব্যাংকের কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও)। একই সঙ্গে বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র ইকোনোমিস্ট ও প্রোগ্রাম ম্যানেজার হিসেবে পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল এবং দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে কাজ করেছেন। যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার ইউনিভার্সিটি থেকে উন্নয়ন অর্থনীতিতে তিনি পিএইচডি করেছেন। পরে এমবিএ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ অরলিয়ন্স ইউনিভার্সিটি থেকে। একই সঙ্গে ইংরেজি অর্থনীতির দৈনিক ফাইন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের উদ্যোক্তা শেয়ারহোল্ডার। অর্থনীতিবিদ ড. মাসরুর রিয়াজকে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান পদে গত মঙ্গলবার নিয়োগ দিয়েছে সরকার। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ (এফআইডি) বিএসইসির চেয়ারম্যান পদে চার বছর মেয়াদে তাকে নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। প্রেসিডেন্টের আদেশক্রমে উপসচিব ফরিদা ইয়াসমিন স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন, ১৯৯৩ এর ধারা ৫ ও ৬ এর বিধানাবলী প্রতিপালন করত: উক্ত আইনের ধারা-৫(২) অনুসারে তার নিয়োগের তারিখ থেকে পরবর্তী ৪ বছরের জন্য বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দেয়া হলো।

ড. এম মাশরুর রিয়াজ নরসিংদী জেলার মনোহরদীর নারান্দী গ্রামের সন্তান। তার বাবা প্রখ্যাত সাংবাদিক মরহুম রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ছিলেন। যিনি সাংবাদিকতায় অবদানের জন্য ১৯৯৩ সালে একুশে পদক পান। একই সঙ্গে দ্য ডেইলি স্টারের ডেপুটি এডিটর এবং ১৯৯১ সালে দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফের সম্পাদক ছিলেন। এছাড়াও তিনি নিউজ টুডের সম্পাদক এবং দ্য ফাইন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের প্রধান সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টাও ছিলেন।

প্রসঙ্গত, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ভারতে পলায়ন করলে সরকারের পতন হয়। বিএসইসির চেয়ারম্যান প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াত–উল–ইসলাম গত ১১ আগস্ট রোববার আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মো. আবদুর রহমান খানের কাছে পদত্যাগপত্র পাঠান। গত সোমবার তা গ্রহণ করে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।

সূত্র- দৈনিক ইনকিলাব

 

এসকেএস