পুঁজিবাজারে গত ১৪ বছরে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে: বিএসইসি চেয়ারম্যান

সানবিডি২৪ প্রতিবেদক প্রকাশ: ২০২৪-০৮-২৫ ১৯:৫৭:১২


‘পুঁজিবাজারে গত ১৪ বছরে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে’ উল্লেখ করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ বলেন, ‘১৪ বছরের ঘাটতি ১৪ মাসেও রিকভার করা সম্ভব কি না, সেটা নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে। বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে অতীতে যেসব কর্মকাণ্ড হয়েছে সেগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে খতিয়ে দেখতে হবে। বিশেষ করে সংস্থার গত ১০ বছরের কার্যক্রম ব্যাপকভাবে পর্যালোচনা করা হবে। একইসঙ্গে ভবিষ্যতে যেকোনো ধরনের অনিয়ম ঠেকাতে প্রয়োজনীয় সংস্কার করা হবে।’

রোববার (২৫ আগস্ট) রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বিএসইসি অডিটরিয়ামে সাংবাদিকদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক মতবিনিম সভায় তিনি এসব কথা বলেন। এসময় বিএসইসি কমিশনার ড. এটিএম তারিকুজ্জামান এবং মো. মহসিন চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।

খন্দকার রাশেদ মাকসুদ বলেন, ‘যারা পুঁজিবাজারে অনিয়ম করেছে তাদের শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার কেউ অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকলে তাদেরও শাস্তি পেতে হবে। আমাদের এমন এক সিস্টেম তৈরি করতে হবে, যেন কারসাজিকারীরা বাজারকে পূর্বের মতো পরিস্থিতিতে আবার ফেলতে না পারে। যে সব বিষয়ে অভিযোগ আছে সবগুলো আমরা তদন্ত করে দেখবো।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রথম কাজ হলো মার্কেটে গভর্ন্যান্স ফিরিয়ে আনা। গত ১৪ বছর ধরে চলা অনিয়মে আমরা অনেক পিছিয়ে গেছি। এই পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে ভালোই সময় লাগবে। তবে আমরা যদি ফোকাসড থাকি, সবাই একসাথে কাজ করি, তবে আশা করা যায় আমরা এ সমস্যা তাড়াতাড়ি কাটিয়ে উঠব।’

বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়াতে হলে বাজারের ট্রান্সপারেন্সি আরও বাড়াতে হবে। ঘোলা পানি বা ময়লা পানি দেখে কেউ আগ্রহ দেখায় না। কিন্ত পানি যখন স্বচ্ছ থাকে পরিষ্কার থাকে, তখন মানুষ সেই পানিতে আগ্রহী হয়ে উঠে। ট্রান্সপারেন্সি বাড়লে বাজারে কারসাজিকারীরা আর কোন প্রভাব ফেলতে পারবে না।

বাজার মধ্যস্থতাকারী কোম্পানি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমরা বাজার মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতেও বেটার কর্পোরেট গভর্ন্যান্স নিয়ে ভাবছি। ব্রোকারেজ হাউজ, মার্চেন্ট ব্যাংকসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোতে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের ক্ষেত্রেও স্বচ্ছতা বাড়াতে হবে।’

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে খন্দকার রাশেদ মাকসুদ বলেন, ‘সূচকের ওঠা-নামা দেখা নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাজ না। আমরা এগুলো দেখব না। আমরা বাজারের সমস্যাগুলোকে চিন্থিত করে সেগুলো সমাধানের কাজ করব। বাজারে ফ্লোর প্রাইস, সার্কিক ব্রেকারসহ যেসব বিধি-নিষেধ প্রয়োগ রয়েছে, সেগুলোকে আমরা রিভিউ করব। যত দ্রুত সম্ভব এই কাজগুলো আমরা করব।’

এসময় বিএসইসি কমিশনার ড. এটিএম তারিকুজ্জামান বলেন, ‘পুঁজিবাজারের জন্য মিউচুয়াল ফান্ড গুরুত্বপূর্ণ। একইসঙ্গে সেটা বিনিয়োগকারীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আমরা দেখেছি, পুঁজিবাজারে মিউচুয়াল ফান্ডে কিছু কিছু অনিয়ম হয়েছে। মিউচুয়াল ফান্ড সংক্রান্ত আইন বা বিধি-বিধানের ক্ষেত্রের বৈষম্যতা ছিল। আগামীতে সেটা আমরা দূর করার চেষ্টা করব। সেই বৈষম্যমূলক আইন ও বিধি-বিধানগুলো রিভিউ করা হবে। মিউচুয়াল ফান্ডে যেসব বৈষমতা হয়েছে, আমরা তা চিহ্নিত করে সমাধান করব।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের আইন অনেক আছে। সেগুলো কতখানি মার্কেট ফ্রেন্ডলি বা ইনভেস্টর ফ্রেন্ডলি করা যায় তা আমাদের রিভিউ করতে হবে। তাহলে বৈষম্য কথাটা আর থাকবে না। সুষ্ঠু, সুন্দর, সুশৃঙ্খল ও সুশাসন নিশ্চিত সম্পন্ন পুঁজিবাজার গড়ে তোলার লক্ষ্যে আইনের প্রয়োগ সঠিক থাকতে হবে। আমরা জোর দিয়ে বলছি, পুঁজিবাজারে সুশাসন নিশ্চিত করা হবে। শুধু মুখে বলা নয়, কাজ করে দেখিয়ে দেওয়া হবে। তাহলে পুঁজিবাজারে বৈষম্যতা দূর হবে এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরে আসবে।’

এর আগে সকালে ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরামের (সিএমজিএফ) সঙ্গে এক সৌজন্য বৈঠকে পুঁজিবাজারকে আস্থার জায়গায় নিয়ে যেতে চান বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। এসময় বাজারে পুরোপুরি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার জন্য আগামী চার বছর কাজ করার কথাও জানান। এ জন্য পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকদের সহযোগিতা চান বিএসইসির চেয়ারম্যান।

বৈঠকে বিএসইসির চেয়ারম্যান ছাড়াও দুই কমিশনার মোহসীন চৌধুরী এবং ড. এটিএম তারিকুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া সিএমজেএফ সভাপতি গোলাম সামদানী ও সাধারণ সম্পাদক আবু আলীসহ সংগঠনটির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যরা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

বিএইচ