রকেট গতিতে এগোচ্ছে না ডাচ-বাংলার ‘রকেট’
আপডেট: ২০১৬-১০-১৭ ১৪:২২:২০
ঢাক-ঢোল পিটিয়ে নাম পরিবর্তন করেও গতি পাচ্ছে না ডাচ-বাংলা ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম ‘রকেট’। অন্য মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ধারে কাছেও যেতে পারছে না এটি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সর্বশেষ আর্থিক লেনদেনের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে রকেটের এমন দূরাবস্থার কথা জানা গেছে।
মোবাইল ব্যাংকিং হচ্ছে শাখাবিহীন ব্যাংকিং ব্যবস্থা। যার মাধ্যমে স্বল্প খরচে আর্থিক সেবা পৌঁছে যায় ব্যাংকিং সুবিধা বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর কাছে। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ব্যাংকিং ও আর্থিক সেবা (টাকা জমা দান, উত্তোলন, পণ্য বা সেবা ক্রয়ের মূল্য পরিশোধ, বিভিন্ন ধরনের বিল পরিশোধ, বেতন/ভাতা বিতরণ, সরকারি বেতন ও ভাতাদি বিতরণ, বৈদেশিক আয় থেকে টাকা উত্তোলন) দেওয়াই হচ্ছে মোবাইল ব্যাংকিং। মোবাইল অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের প্রস্তাবিত সেবাগুলো পাওয়া যায়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যমতে, ডাচ-বাংলা ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রমের (রকেট) হিসাব রয়েছে প্রায় ৮৬ লাখ। এর মধ্যে লেনদেন করেন মাত্র ২৪ লাখ গ্রাহক। এসব গ্রাহক ওই মাসে প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা লেনদেন করলেও একই সময়ে বিকাশের লেন-দেনের পরিমাণ প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা। প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা বেশি লেনদেন হয়েছে বিকাশে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১১ সালের ৩১ মার্চ ডাচ-বাংলা ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিং চালু করলেও তেমন সাড়া মেলেনি। নানাভাবে গ্রাহকদের অ্যাকাউন্ট খোলানো হলেও তা ব্যবহার করেন না তারা। যে কারণে প্রায় ৬২ লাখ হিসাবে কোনো লেন-দেনই হচ্ছে না।
গত ২০ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড জানায়, আগামী দু’বছরের জন্য বাংলাদেশের সবগুলো হোম সিরিজের টাইটেল স্পন্সর হচ্ছে ডাচ-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড। বাংলাদেশ-আফগানিস্তান ওয়ানডে ক্রিকেট সিরিজের মাধ্যমেই জানা যায়, ব্যাংকটি মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রমের নাম পরিবর্তন করে ‘রকেট’ করেছে।
সূত্র জানায়, পিছিয়ে পড়া ডাচ-বাংলা ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রমকে বেগবান ও জনপ্রিয় করতেই নতুন নাম (রকেট) দেওয়া হয়। এরপর মোটা অংকের টাকা ঢেলে বাংলাদেশ-আফগানিস্তান ও বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড সিরিজের স্পন্সর হয়ে জনপ্রিয়তা ধরার চেষ্টা চলছে।
তবে গ্রাহকের মাঝে সাড়া ফেলতে না পেরে এ বিষয়ে ব্যর্থ হচ্ছে ব্যাংকটি। এখনও মোট মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রমের ৮০-৮৫ শতাংশ অন্য কোম্পানিগুলোর দখলে রয়েছে।
নতুন করে নতুন নামে জনপ্রিয়তা অর্জনের এ চেষ্টাকে ভালোভাবে নেননি অনেক গ্রাহক। তারা বলেছেন, ‘নামটি রকেট দিয়ে বিজ্ঞাপনে বলা হচ্ছে, আমাকে ১০ টাকা রকেট করো’। কেউ কেউ বলেছেন, ‘এটি অন্য কোম্পানির বিজ্ঞাপনের নকল করা হয়েছে। ডাচ-বাংলা ব্যাংক প্রথম নামে মার খেয়ে নতুন নামে এসেও খুব ভালো করতে পারছে না’।
ই-মেইলেও বেশ কয়েকজন জানতে চেয়েছেন, হঠাৎ করেই ‘রকেট’ নামটি কেন জনতার সামনে? বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকেও আলোচনা চলছে।
আবজাল হোসেন লিখেছেন, ‘ডাচ-বাংলা ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম ভালো করতে পারেনি। ব্যবসার প্রসারে ভালো নামের সঙ্গে সেবার মানেরও উন্নয়ন করতে হয়, যেটি তারা করতে ব্যর্থ হয়েছে। ব্যাংকের চেয়ারম্যানকে উদ্ধৃত করে তিনি লিখেছেন, নামটি সহজ করতেই এ উদ্যোগ। কিন্তু খেলার মাঠে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের রকেট দেখে বোঝার উপায় নেই, কাগুজে রকেটের ছবি দিয়ে তারা কি বোঝাতে চেয়েছেন?’
আবার হেলাল উদ্দিন লিখেছেন, ‘ডাচ-বাংলা ব্যাংকের জন্য মায়া লাগতো, আহারে দেশের প্রথম মোবাইল ব্যাংকিং সেবা নিয়েও তারা পিছিয়ে আছে শুধুমাত্র একটি সুন্দর নাম সিলেকশনের জন্য। তাদের অনেক পরে এসেও তর তর করে এগিয়ে গেছে ‘বিকাশ’, শুধু সহজ নামকরণের কারণে। যাক, এখন আর শুনতে হবে না কিংবা দেখতে হবে না, এখানে ডিবিবিএল (DBBL) করা যায়। তারা রি-ব্র্যান্ডিং করেছে, নাম দিয়েছে ‘রকেট’। নামটা যেমন সুন্দর, লোগোটিও সে রকম। কালার কম্বিনেশনও হয়েছে পারফেক্ট। রকেটের জন্য শুভ-কামনা’। ডাচ-বাংলা ব্যাংকের ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কেএস তাবরেজ এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।