জবি শিক্ষার্থী দীপা হত্যার বিচারের দাবিতে মানববন্ধন
প্রকাশ: ২০১৬-১০-২৪ ১৭:৪৮:২৫
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) গণিত বিভাগের মাষ্টার্স শেষ সেমিষ্টারের শিক্ষার্থী দীপা রাণী নাথ হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী ও দীপার পরিবারের সদস্যরা । এ সময় তাঁরা দীপার স্বামী সুব্রত চেীধুরী ও দীপার শ্বশুর-শ্বাশুড়ীকে অবিলম্বে গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান।
সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাস্কর্য চত্বরের সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় দীপার বাবা দীজেন্দ্র লাল দেবনাথ বলেন, “আমার মেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পড়–য়া শিক্ষিত ,বুদ্ধিমতি,কর্মচাঞ্চল্যের অধিকারী সচেতন। সে সবসময় অপমৃত্যুর বিপক্ষে কথা বলত । সে কখনও আত্বহত্যা করতে পারে না। মৃত্যুর দিন বিকাল সাড়ে ৪ টায় আমি তার সাথে মোবাইলে কথা বলেছি ।
সে স্বাভাবিক ভাবে কথা বলেছে। কিন্তু সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টার দিকে দীপার স্বামী আমাকে দীপা আত্বহত্যা করেছে ও দীপার লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে আছে বলে জানায় । এটা কখনও আত্বহত্যা হতে পারে না এটা পরিকল্পিত হত্যাকান্ড ।” পরিবারের সদস্যদের দাবি, দীপা রাণী নাথ ও সুব্রত চেীধুরী প্রায় দেড় বছর আগে ২০১৫ সালের ৩০ জানুয়ারি প্রেমের সম্পর্কের মাধ্যমে বিয়ে করে । বিয়ের পর সুব্রতের বাবা-মা দীপাকে মেনে নেয়নি। তারা বিভিন্ন সময় দীপাকে যেীতুক,পড়াশুনা বন্ধ করা সহ নানান অজুহাতে দীপাকে শারীরিক ও মানসিক ভাবে নির্যাতন করত।
সর্বশেষ এ বছরের ২৩ জানুয়ারি স্বামী,শ্বশুর-শ্বাশুড়ীর হাতে শারীরিক ভাবে লাঞ্চিত হয়ে দীপা বাবার বাড়িতে চলে আসে। পরে দীপার স্বামী সুব্রত চেীধুরী দীপার বাবার হাতে পায়ে ধরে এবং পরবর্তীতে আর এমন ঘটনা হবে না বলে প্রতিশ্রুতি দিয়ে দীপাকে নিজের বাড়িতে নিয়ে আসে। সহপাঠীদের দাবি , দীপা রাণী গত ২০ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে শেষ বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছিল ।
সেদিনও দীপা রাণী তাঁদের সাথে হাসি-খুশির মধ্যে সময় কাটায়। মুর্ত্যুর কয়েকঘন্টা আগেও সে তার বাবার সাথে কথা বলে। কিন্তু ২১ অক্টোবর সন্ধায় দীপা রাণীর স্বামী জানায়, দীপা আত্বহত্যা করেছে এবং দীপার লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে রয়েছে। এটা কখনও হতে পারে । এটা পরিকল্পিত হত্যাকান্ড ও আত্বহত্যার নাটক। কারণ দীপা রাণী যখন আত্বহত্যা করেছে তখন তার স্বামী ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও বাসায় ছিল ।
দীপা রাণী যে রুমে আত্বহত্যা করেছে সে রুম আটকানো ছিল না। এবং দীপা রাণীর ফাঁসি দেওয়ার পর আইনানুগভাবে দীপা রাণীর স্বামী পুলিশকে খবর না দিয়ে নিজেই দীপা রাণীর লাশ ফাঁসির দড়ি থেকে নামিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজে নিয়ে যায়। এছাড়া হত্যাকান্ডের চিহ্ন মুছে ফেলতে দীপা রানীর স্বামী দীপা রাণীর লাশ ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী পুড়িয়ে ফেলার চাপ দেয়। এ সময় মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন দীপা রাণীর মা রুপালী দেবনাথ, দীপা রাণীর বড় বোন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ১ম ব্যাচের শিক্ষার্থী সুবর্ণা দেব নাথ, হিন্দু,বেীদ্ধ,খ্রীস্টান মহিলা ঐক্য পরিষদের ঢাকা মহানগরের সভাপতি সুপ্রিয়া ভট্রাচার্য,জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় গণিত বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ড. আইয়ুব আলী, প্রধান প্রকেীশলী সুকুমার চন্দ্র সাহা,শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি এফ এম শরীফুল ইসলাম , সাধারণ সম্পাদক এস এম সিরাজুল ইসলামসহ প্রমুখ।
দীপা রাণীর স্বামী সুব্রত চেীধুরীর সাথে যোগাযোগ করা হলে , দীপারাণীর হত্যাকান্ডের সর্ম্পকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জানান ,ময়না তদন্তের মাধ্যমে সঠিক তথ্য জানা যাবে। এ সম্পর্কে এখন কোন মন্তব্য করতে চাই না।এ বলে তিনি মোবাইল ফোনকেটে দনে।
কলাবাগান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলেন , দীপা রাণী হত্যায় একটি অপমৃত্যুর মামলা করা হয়েছে । । গ্রেফতার সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ময়না তদন্তের পর ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। এবং এ সম্পর্কে মন্তব্য করতে অপরাগ প্রকাশ করেন।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় গণিত বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ড. আইয়ুব আলী বলেন, দীপা রাণী অত্যন্ত মেধাবী কর্মচাঞ্চল্যের অধিকারী সচেতন ছিলেন, বিভাগের যে কোন অনুষ্ঠানে তার অংশগ্রহন থাকত উল্লেখযোগ্য তার হত্যার বিচার চাই,এটা কোন ভাবেই অপমৃত্যু হতে পারেনা ।
সানবিডি/ঢাকা/ ইসমাইল/এসএস