সিটিসেল নিয়ে আদালতের সিদ্ধান্ত বৃহস্পতিবার
প্রকাশ: ২০১৬-১১-০১ ১৭:০৫:৪২
দেশের প্রথম মোবাইল অপারেটর সিটিসেলের কার্যক্রম আবার শুরু করতে পারবে কি না, সিটিসেলের তরঙ্গ বন্ধ রাখতে সরকারের আদেশ স্থগিত হবে কি না,- সে বিষয়ে সর্বোচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত জানা যাবে বৃহস্পতিবার।
এ বিষয়ে সিটিসেলের আবেদনের ওপর শুনানি করে মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার নেতৃত্বে আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ আদেশের এই দিন ঠিক করে দেয়।
সিটিসেলের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ; সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার মোস্তাফিজুর রহমান খান। বিটিআরসির পক্ষে ছিলেন মাহবুবে আলম ও ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। তাদের সহযোগিতা করেন ব্যারিস্টার খন্দকার রেজা-ই-রাকিব।
দুই পক্ষের মধ্যে দেনা-পাওনা নিয়ে বিরোধ হলে সমাধান কীভাবে হবে- সে বিষয়টি বৃহস্পতিবার আদালতের সামনে বিস্তারিতভাবে জানাতে বলা হয়েছে বিটিআরসির আইনজীবী শেখ ফজলে নূর তাপসকে।
শুনানিতে তাপস বলেন, এখানে পাওনা টাকার অংক খুবই সুনির্দিষ্ট। লাইসেন্স ফি, তরঙ্গ ফি- এগুলো নিয়ে বিরোধের অবকাশ নাই। আমরা যে ফি নির্ধারণ করেছি, সে অনুসারে অন্য মোবাইল অপারেটররাও টাকা দিয়ে যাচ্ছে।
আদালত এ সময় অন্য মোবাইল ফোন অপারেটরদের অর্থ পরিশোধের বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাইলে তাপস তা পরে আদালতের সামনে তুলে ধরবেন বলে জানান।
পরে সিটিসেলের আইনজীবী মোস্তাফিজুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, আপিল বিভাগের আগের রায়ে বলা হয়েছিল, দাবিকৃত টাকার যে অংশ আমরা স্বীকার করি, তার দুই তৃতীয়াংশ আমাদেরকে জমা দিতে হবে। আমরা সেই আদেশ প্রতিপালন করে দুই-তৃতীংয়াংশ টাকা দেই। এই টাকা দেওয়ার পরও তরঙ্গ স্থগিত করে, কার্যযক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়, আমাদেরকে টেলিকমিউনিকেশন ইকুইপমেন্ট ব্যবহার না করতে বলা হয়।
আমরা আদালতে বলেছি, আদালতের আদেশ আমরা মেনেছি। বিটিআরসি থেকে কাজটা করা ঠিক হয়নি। বিটিআরসির পক্ষ থেকে বক্তব্য ছিল- দুই তৃতীয়াংশ মানে দাবিকৃত অর্থের দুই তৃতীয়াংশ।
সিটিসেলের আইনজীবী বলেন, তার মক্কেল কোম্পানির ১০ মেগাহার্টজ তরঙ্গ বরাদ্দ পাওয়ার কথা থাকলেও কার্যত ঢাকায় ৬ মেগাহার্টজ এবং ঢাকার বাইরে ২ মেগাহার্টজের কিছু বেশি তরঙ্গ দেওয়া হয়েছে। তার মানে আমাকে প্রতিশ্রুত তরঙ্গ কখনো দেওয়া হয়নি। বিটিআরসির নিয়মই হচ্ছে লাইসেন্স ফি, তরঙ্গ বরাদ্দ ফির একটা নির্দিষ্ট অংশ আগে দিতে হয়। বাকি অংশ কিস্তিতে ব্যবসা করে দিতে হবে।… আমার পুরো তরঙ্গ যদি না দেওয়া হয়, তাহলে আমি ব্যবসা করব কী করে? অর্থ দেব কী করে?
সুতরাং যতক্ষণ পুরো তরঙ্গ আমাদেরকে দেওয়া না হচ্ছে, ততক্ষণ জরিমানা, সুদ-জরিমানা এগুলো গুণতে পারবে না। তারা বড়জোর যে তরঙ্গ দিয়েছে, তার অনুপাতে টাকা দাবি করতে পারে। সেটাই আমরা স্বীকার করি।
সরকারের পাওনা পৌনে পাঁচশ কোটি টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় গত জুলাই মাসে সিটিসেলের কার্যক্রম বন্ধ করার উদ্যোগের কথা জানায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি। পরের মাসে তাদের নোটিসও দেওয়া হয়।
এরপর ৯ অগাস্ট দুই মাসের মধ্যে দুই দফায় টাকা পরিশোধসাপেক্ষে সিটিসেলকে কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেয় আপিল বিভাগ।
রেজা-ই-রাকিব সেদিন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ১৭ অগাস্টের আগ পর্যন্ত সিটিসেলের কাছে বিটিআরসির পাওনা ৪৭৭ কোটি টাকা দুই দফায় পরিশোধ করতে হবে। তাছাড়া ১৭ অাগস্টের পর থেকে প্রতিদিন বিটিআরসি আরও ১৮ লাখ টাকা করে পাওনা হচ্ছে। প্রতিদিনের এই টাকা অবিলম্বে পরিশোধের নির্দেশ দিয়ে আদালত বলেছে, টাকা না পেলে বিটিআরসি যে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারবে।
এরপর গত ২০ অক্টোবর সিটিসেলের তরঙ্গ স্থগিত করার পর ওইদিন সন্ধ্যায় বিটিআরসির কর্মকর্তারা র্যাব-পুলিশ নিয়ে মহাখালীতে সিটিসেলের প্রধান কার্যালয়ে ঢুকে তরঙ্গ বন্ধের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করেন।
টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম সেদিন জানান, একমাসের প্রথম কিস্তিতে নির্ধারিত ৩১৮ কোটি ৪২ লাখ টাকার মধ্যে সিটিসেল মাত্র ১৩০ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে।
এরপর সিটিসেল তরঙ্গ বাতিলের সিদ্ধান্ত স্থগিত বা পুনরায় তরঙ্গ বরাদ্দের নির্দেশনা চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে যায়। ২৫ অক্টোবর চেম্বার আদালত বিষয়টি ৩১ অক্টোবর শুনানির জন্য পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়ে দেয়।
সিটিসেল বলছে, বিটিআরসি ৪৭৭ কোটি টাকা পাওনা থাকার কথা বললেও তাদের হিসাবে এই অংক ২৩০ কোটি টাকা, যার দুই-তৃতীয়াংশ, অর্থাৎ ১৪৪ কোটি টাকা ইতোমধ্যে তারা আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী পরিশোধ করেছে।
১৯৮৯ সালে বাংলাদেশের প্রথম মোবাইল ফোন অপারেটর হিসেবে লাইসেন্স পায় বাংলাদেশ টেলিকম লিমিটেড (বিটিএল), যা পরে মালিকানার হাতবদলে সিটিসেলে পরিণত হয়।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এ কোম্পানির ৩৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ শেয়ারের মালিক বিএনপি নেতা মোরশেদ খানের প্যাসিফিক মোটরস লিমিটেড।
এছাড়া সিঙ্গাপুরের সিংটেল এশিয়া প্যাসিফিক ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড এর ৪৫ শতাংশ এবং ফার ইস্ট টেলিকম লিমিটেড ১৭ দশমিক ৫১ শতাংশ শেয়ারের মালিক।