মুন্সীগঞ্জে গৃহ নির্যাতনের শিকার ৬ বছরের শিশু

আপডেট: ২০১৬-১১-০২ ১৮:১০:০০


munshigangমুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার রামপাল ইউনিয়নের বল্লাল বাড়িতে সুবর্ণা (৬) নামের এক শিশু দিনের পর দিন গৃহ নির্যাতনের শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বুধবার সকাল ১১টার দিকে স্থানীয়রা শিশুটিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে মুন্সীগঞ্জ থানায় নিয়ে আসে।
স্থানীয় ও নির্যাতিত শিশুর সূত্রে জানা যায়, মা ভারতি বেগম মারা যাওয়ার পর শিশুটিকে বল্লাল বাড়ি এলাকার সিরাজ মাদবরের স্ত্রী কল্পনা বেগম পালক হিসাবে নিজের বাড়ি নিয়ে যায়। পরে শিশুটিকে নিয়ে বাসার কাজে নিয়োজিত করেন। মেয়টিকে দিয়ে দাসীর মতো করে সমস্ত কাজ করানো হতো। খাবার তেমন পেতনা শিশুটি, শোয়ার জন্য ছিল খাটের নিচের স্থান। ছিলনা মশাড়ী, পরনে কখনও জোটেনি ভাল কাপড়, পেটে মিলেনি সময় মত কোন খাবার। মেয়েটিকে দিনের পর দিন নির্যাতন করা হয়েছে, তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুত্বর যখমের চিহ্ন আছে। মাথায় কোপের আঘাত, ঘাড়ে ছেঁকা, গলায় মরধরের কাল দাগ, বুকে পোড়া দাগ, চোখে কালো দাগসহ একাধিক চিহ্ন।
শিশুটিকে নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষার জন্য শিশুটির খালা সমলা বেগম নিজের হেফাজতে নিতে চাইলে অভিযুক্ত কল্পনা তাকে অপমান করে তাড়িয়ে দেয়। দীর্ঘ প্রায় ২ বছর পর স্থানীয়রা শিশুটির নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা করেন। তবে শিশুটির ভবিষ্যৎ নিয়ে সংকিত স্থানীয়রা। কে তাকে দেখবে ? কার নিকট থাকবে এই এতিম শিশুটি। নির্যাতিত শিশুটি বানিয়া বাড়ির এলাকার শাহ আলমের মেয়ে। মেয়েটার বাবা শাহালমের খোঁজ করে জানা যায়, স্ত্রী মারা যাওয়ার পর সে অনত্র বিয়ে করে চলে গেছেন। দুপুর ২টার দিকে মুন্সীগঞ্জ থানায় গিয়ে দেখা যায়, সদর থানার ওসি ইউনুচ আলী তার দুপুরের খাবার শিশু বাচ্চাটিকে খাওয়াচ্ছেন। এবং শিশুটিকে সু-চিকিৎসা করার ব্যবস্থা করেন।
পাশের রুমের ভাড়াটে রানা জানান, বাচ্চা মেয়েটা বাসায় কাজ করে আসছিল। আবার শুনতাম তার নাকি মেয়ে । প্রতিদিন মারধর করা হত শিশুটিকে তখন ভাবলাম ঘটনাটি রহস্যজনক। আজ সকালে মেয়েটিকে যখন মরধর করেছিল তখন ছুটে গেলাম তখন জানতে পারলাম মেয়েটাকে কাজের লোক হিসেবে রাখা হয়েছে। পরে তাকে উদ্ধার করে চিকিৎসা করাতে নিয়ে আসি।
চিকিৎসক সৈবাল বসাক জানান, মেয়েটিকে দীর্ঘদিন ধরে শাররীক নির্যাতন করা হয়ে ছিল এবং তার চোখে এখন ইনফেকশন আছে।
নির্যাতিত শিশু সুবর্না জানান, আমার মা মারা যাওয়ার পর আমাকে ওই মহিলা নিয়ে আসে আমি তাকে মা বলতাম । আপনি আমাকে আর মাইরেন না আমি মরে যাব। তবুও সে আমাকে মারধর করে, মাথায়, পেটে, গলায়, হাতে ও কানে অনেক আঘাত করেছে দিনের পর দিন। কাজ করাতো কিন্তু খাবার দিতনা আমাকে। শুতে দিত খাটের নিচে। আমি এই নির্যাতনের বিচার চাই। আমাকে উনি দিনের পর দিন যেভাবে শাররিক নির্যাতন করেছে ঠিক তেমনি তাকে নির্যাতন করা হউক সেটাই আমি দেখতে চাই।
মারধরের কথা স্বীকার করে কল্পনা বেগম বলেন, ও আমার মেয়ে ওকে আমি মারবো কাটব সেটা আমার ব্যাপার। আপনার যদি মেয়ে হয়ে থাকে তাহলে তাকে দিয়ে বাসা বাড়ির সমস্ত কাজ করান কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঘরের মেয়ে ঘরের কাজ না করে কি অন্যের বাড়িতে কাজ করবে? । মাইরের কাজ করেছে  তাই মেরেছি।
মুন্সীগঞ্জ থানার ওসি ইউনুচ আলী বলেন, শিশুটিকে থানা হেফাজতে রাখা হয়েছে। শিশুটির প্রকৃত অভিভাবককে খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। অভিভাবক পেলে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।