কারখানা শ্রমিকদের বিক্ষোভে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অচল

জেলা প্রতিনিধি প্রকাশ: ২০২৪-১১-১০ ১২:৩১:২৮


গাজীপুরে বকেয়া বেতন পরিশোধ ও কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে মহানগরীর বাসন এলাকায় এলাকায় শ্রমিকেরা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছে। গাজীপুর মহনগরের টঙ্গী, স্টেশন রোড, বোর্ড বাজার থেকে চান্দনা চৌরাস্তাসহ রাজেন্দ্রপর পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার সড়কে যানজট লেগে আছে। কোথাও কোথাও থেমে থেমে চলছে যানবাহন। তাদের বিক্ষোভে ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-কিশোরগঞ্জ, ঢাকা-টাঙ্গাইল এবং ঢাকা-সিলেট মহাসড়কসহ আশপাশের আঞ্চলিক সড়কগুলোতে তীব্র যানযট দেখা গেছে।

শনিবার (০৯ নভেম্বর) সকাল ৯টা থেকে শ্রমিকেরা বিক্ষোভ শুরু করেন। দাবি আদায়ে রোববারও সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ চলমান রেখেছেন তারা।

আন্দোলরত শ্রমিকেরা বলেন, আমাদের পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গেছে। পুলিশ ও প্রশাসন বারবার আমাদের বকেয়া বেতন পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিলেও বাস্তবে আমাদের দাবি মেটানো হয়নি। বাসা ভাড়া, দোকানের বাকি পরিশোধ করতে পারছি না। ঘরে খাবার নেই, সন্তানকে বাবার কাছে রেখে আমি বেতনের দাবিতে সারারাত সড়কে কাটিয়েছি। গত তিন মাস যাবত একটা টাকাও বেতন পাইনি। মালিকের আশ্বাসে এতোদিন অপেক্ষা করেছি। আর পারছিনা। বকেয়া বেতন না নিয়ে বাসায় ফিরব না।

কিশোরগঞ্জের জলসিড়ি পরিবহনের চালক আব্দুল আলীম বলেন সকাল ৯ টা থেকে রাজেন্দ্রপুর বাস দাঁড় করে বসে আছি। অনন্য পরিবহনের যাত্রী রফিকুল ইসলাম বলেন, আমি টঙ্গী এলাকার একটি প্রাীভেট হাসপাতালে চাকরি করি। শ্রমিকদের আন্দোলনে সড়ক অবরোধের কারণে গতকালও অফিসে যেতে পারিনি। আজো একই অবস্থা।

গতকাল শনিবার বিকাল ৩ টায় গাজীপুর শিল্প পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার মোশাররফ হোসেন বলেন, বিক্ষোভ চলমান করছে। এ আন্দোলন কবে শেষ হবে জানিনা। এ বিষয়টি নিয়ে মালিক পক্ষ ও শ্রমিকদের সাথে সমঝোতার চেষ্টা করেছি। একাধিকবার তারিখ দিয়েও মালিক শ্রমিকদের বকেয়া বেতন পরিশোধ করছেনা। পুলিশ, প্রশাসন, সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো আশ্বাস ও কথাই শুনতে নারাজ শ্রমিকরা। তাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তার সড়কেই অবস্থান করবেন বলে জানান।

রবিবার ভোর থেকে আন্দোলনরত শ্রমিকেরা কলম্বিয়া পোশাক কারখানা এলাকায় লাঠিসোঁটা হাতে নিয়ে সড়কের উভয় পাশে অবস্থান নিয়েছেন। দুই পাশের কয়েকটি বাস ও ট্রাক আড়াআড়িভাবে রেখে সড়কে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে রেখেছেন। অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলও চলাচল করতে দিচ্ছেন না শ্রমিকরা।

তারা বলেন, আমরা মানুষের দুর্ভোগ ও কষ্টের কথা বুঝতে পারছি। কিন্তু আমাদের কিছুই করার নেই। আমাদের কষ্টের কথাও সবাইকে বুঝতে হবে। আমরা শখ করে সড়কে রাত জেগে বসে থাকিনি। আমরা আমাদের বকেয়া বেতন পেলেই অবরোধ তুলে নেবো।

গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (ট্রাফিক) ইব্রাহিম খান বলেন, শ্রমিকদের মহাসড়ক অবরোধের কারণে সড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। মহাসড়কের দক্ষিণ দিকে টঙ্গী পর্যন্ত যানজট পৌঁছেছে। অনেক গাড়ি বিকল্প পথে চলাচল করছে। আমরা মালিক ও শ্রমিকপক্ষের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপির) অপরাধ বিভাগের উপ-কমিশনার (উত্তর) নাজির আহমেদ বলেন, আমরা শ্রমিকদের মানুষের দুর্ভোগের কথা শ্রমিকদের বুঝানোর চেষ্টা করেছি। মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রত তাদের বকেয়া আদায়ের ব্যবস্থা করা হবে বলেও আশ্বাস দেয়া হচ্ছে। মালিকপক্ষ শ্রমিকদের প্রতিশ্রতি দিয়ে না রাখায় তারা আমাদের কথায় বিশ^াস রাখতে পারছে না। তারপরও আমরা তাদের বোঝানোর চেষ্টা করছি।

বিএইচ