বৃদ্ধ বাবার সাথে পাশের মসজিদে নামাজ পড়া কতই না পুণ্যের
প্রকাশ: ২০১৭-০১-১৬ ১৮:৩৩:৫৯
সবার বেড়ে গেল এক হাজার। আমাদের অফিসে (পিএনএসে) শুধু নামাজের জন্য এক হাজার টাকা করে বেতন বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি রাখা হয়েছে একজন ইমাম। যিনি জামাতে ইমামতি করবেন। কেউ নামাজ না পড়লে তার এক হাজার টাকা কর্তন করা হবে।
কথাটা শুনে খুবই ভালো লেগেছে। মনে মনে ধন্যবাদ জানালাম মালিকপক্ষকে। অথচ আমাদের প্রতিষ্ঠানের যিনি মালিক, ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে তিনি সবকিছু করেন। যদিও আমাদের বলেন, প্রতিষ্ঠান সবার। সবাই যেন নিজের মনে করে কাজটা করে, তিনি তা-ই চান।
পাঠকের দিক দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি যখন এগিয়ে তখন তিনি সবাইকে চায়নিজ খাওয়াতে ভুলেননি। ঈদে অন্যদের যে হারে বেতন-বোনাস দেন, নিম্নস্তরের কর্মঠদের সে হারে না-দিয়ে দেন দুহাত খুলে। অফিসে কর্মরত নেই- এমন বেকার সহকর্মীদেরও তিনি ভুলেন না, ঈদ-পার্বণে।
দুদিন ধরে মনটা খুব খারাপ। খারাপ এ জন্য যে, ছোট ভাইটা কথিত ইজতিমায় গেছে জুমার নামাজ পড়তে। নামাজ পড়া ভালো, তাই বলে ওখানে! ও যদি তার বাসায় থাকা অসুস্থ বাবাকে নিয়ে জুমার নামাজটা পাশের মসজিদে পড়ত, কতই না বেশি পুণ্য হতো। আর…
ইসলামে বৈরাগ্য নেই। অথচ ঘর-সংসার, স্ত্রী-পরিজন ছেড়ে ইসলামের নামে একটি মহল যা করে, হক্কানী আলেম সমাজের কাছে সেটা প্রশ্নবিদ্ধ বৈকি। এরা ইসলাম প্রচার করে, সেটা কার কাছে? মুসলমানদের কাছে ইসলাম প্রচারের দরকার আছে কি? করলে তা করতে হবে বিধর্মীদের কাছে।
আমাদের এলাকায় একটা প্রবাদ আছে, আর সেটা এরকম- ‘ভাই গেছে তাবলিগে, ভাবিকে দেখে পাবলিকে!’ ভাবিকে না হয় পাবলিক দেখল, রোগ-শোকসহ আকস্মিক নানা সমস্যায় পারিবারের অন্যদের কে দেখবে! ঘর-সংসারের কর্তা যখন বাইরে তখন নানা ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হওয়াই তো স্বাভাবিক।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অনেক সরকারি অফিসের লোকজন তাবলিগে, তাদের বেশির ভাগই নাকি অসত্য তথ্য উপস্থাপন করে ছুটি নেয়! শুধু কি তা-ই, ঘুষের চর্চায় এরা নাকি অন্যদের চেয়ে অনেক এগিয়ে। তাবলিগে যায়- এমন অফিসের সহকর্মীরা এসব তথ্য জানান।
আমাদের এলাকায় অনেকে দলবেঁধে তাবলিগে যায়। তবে আমাদের গ্রামে সেটা করতে দেয়া হয় না। এমনকি এ ধরনের কেউ সমজিদে এলে মসজিদ পানি দিয়ে ধোয়া হয়। কথা সেটা নয়, আমাদের উপজেলা সদর বাজারে এ আকিদার যারা চাল ব্যবসা করেন, তারা নাকি ওজনে কম দেন!
কালেমা, নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত ইসলামের এই পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এর একটার প্রতি গুরুত্ব দিয়ে আমাদের অফিসে যে হাজার টাকা করে জনপ্রতি বেতন বৃদ্ধি করা হয়েছে, সেটা শুনে মনটা ভরে গেছে। এ জন্য মহান আল্লাহ নিশ্চয় উত্তম বিনিময় দান করবেন উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত সবাইকে।
আমাদের দেশে একশ্রেণীর পীর রয়েছে। ভণ্ড হিসেবে যাদের অবস্থান শীর্ষে। ওইসব ভণ্ড পীর বেকুব মুরিদদের বেহেস্তের টিকিট দেখিয়ে নিজের কাছে ভুলিয়ে রাখে। ভুলেও তারা মা-বাবার খেদমতের কথা বলে না। পীর আর শয়তানের মধ্যে পার্থক্য খোঁজার সহজ পথ হলো, যে পীর মা-বাবার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব পালনের শিক্ষা দেন, পীর হিসেবে তিনি প্রথম ধাপ উত্তীর্ণ।
আমার ছোট ভাইটা যদি সেদিন নিজে দূরবর্তী স্থান টঙ্গীতে জুমার নামাজে না-গিয়ে বৃদ্ধ বাবাকে নিয়ে নিকটবর্তী মসজিদে নামাজ আদায় করত, বিনিময়টা আরো বেশি বৈ কম হতো না। আল্লাহ সব সন্তানকে বাবা-মা এবং সব মালিকপক্ষকে অধীনদের জন্য পুণ্যময় কাজগুলো করার মানসিকতায় উদ্ধুদ্ধ করুন। আমিন।
লেখক : সাধারণ সম্পাদক- ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন
ই-মেইল : jalam_prodhan72@yahoo.com