ইবিতে ৩৭ বছরে ৩ সমাবর্তন

প্রকাশ: ২০১৭-০১-২৬ ১৫:৫১:৫৫


Islamic-University(IU)স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে খ্যাত কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। পুরোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঝে অন্যতম বিশ্ববিদ্যালয় হলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে নতুন প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর পরিসংখ্যানের সাথে মিলে যায়। তার মধ্যে অন্যতম একটি হলো সমাবর্তন। হাটি হাটি পা পা করে গত ২২শে নভেম্বর ৩৭বছরে পদার্পন করে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার ৩৭ বছরে সমাবর্তন হয়েছে মাত্র তিনবার। সর্বশেষ সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছিল এক যুগ আগে অর্থাৎ ২০০৩ সালে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য প্রকাশনা ও জনসংযোগ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী বছরে একবার সমাবর্তন হওয়ার কথা থাকলেও গত একযুগ ধরে তা হচ্ছেনা। ১৯৭৯ সালে প্রতিষ্ঠার পর ১৪ বছর পর ১৯৯৩ সালের ২৭ এপ্রিল প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য বেগম খালেদা জিয়া এবং তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইনামুল হকের সময়ে প্রথম বারের মত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। সমাবর্তনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয় মুঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামছুল হক। প্রথম সমাবর্তনের সাত বছর পর ১৯৯৯ সালের ৫ ডিসেম্বর দ্বিতীয় সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। উপাচার্য অধ্যাপক ড.কায়েস উদ্দীনের সময়ে দ্বিতীয় সমাবর্তনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জআমান। পরবর্তীতে এর তিন বছর পর ২০০২ সালের ২৮ মার্চ তৃতীয় সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম রফিকুল ইসলামের সময়ে তৃতীয় এবং সর্বশেষ সমাবর্তনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড: মোহাম্মদ শমশের আলী। তৃতীয় সমাবর্তনে স্নাতক পর্যায়ে ৫৫ জন শিক্ষাথী, স্নাতকোত্বর পর্যায়ে ৬০ জন শিক্ষার্থী, স্নাতক- স্নাতকোত্বরের ১৪৩ জন শিক্ষার্থী, এমফিলে ৬ জন শিক্ষার্থী এবং পিএইচডি ডিগ্রিধারী ১৭ জনসহ মোট ২১৮ জনকে মূল সনদপত্র প্রদান করো হয়। তৃতীয় এবং সর্বশেষ সমাবর্তনের পর দীঘ ১৩ বছর পেরিয়ে গেলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের পরবর্তীতে আর কোনো সমাবর্তন করার উদ্যেগ নেয়া হয়নি।

এদিকে দীর্ঘ একযুগেরও বেশি অতিবিাহিত সময় ধরে সমাবর্তন অনিুষ্ঠত না হওয়ায় সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে। শিক্ষাথীর্দের অভিযোগ উচ্চ শিক্ষা শেষ হওয়ার পর সবার আশা থাকে মুল সনদ পত্র পাওয়ার। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে গত এক যুগের ও বেশি সময় ধরে সমাবর্তন অনুষ্ঠিত না হওয়ায় তারা মূল সনদ পত্র হাতে পাচ্ছেনা। শিক্ষার্থীরা আরো অভিযোগ দেন যে, নতুন প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে যেখানে প্রতিষ্ঠার দশ বছরে তিনটি সমাবর্তন অনুষ্টিত হয়েছে। সেখানে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠর ৩৭ বছর পেরিয়ে মাত্র তিনটি সমাবর্তন কোনো ভাবেই কাম্য নয়। সমাবর্তনের জন্য শিক্ষার্থীরা অধীর আগ্রহ থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এদিকে কোনো খেয়াল নেই। মূূল সনদপত্র হাতে না পাওয়ায় শিক্ষাজীবন শেষে চাকরী জীবনে তাদের বেশ বিরম্বনার শিকার হতে হয়। বিভিন্ন প্রতিযোগীতামূলক পরীক্ষায় সাময়িক সনদ প্রদান করায় পরীক্ষকরা সাময়িক সনদের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিষ্ট্রার এস এম আব্দুল লতিফ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তা ব্যাক্তিদের সাথে সমন্ময়হীনতার অভাব ই দীর্ঘদিন যাবৎ সমাবর্তন অনুষ্ঠিত না হওয়ার প্রধান কারণ। এছাড়া ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুকুল পরিবেশ না থাকার কারণে গত দেড় যুগ ধরে সমাবর্তনার মতো বিশাল অনুষ্ঠান আয়োজন করা সম্ভব হচ্ছেনা। তবে বর্তমান প্রশাসন সমাবর্তন করার ব্যাপারে বদ্ধ পরিপক্কর।’

এ নিয়ে ২০০৭-০৭ শিক্ষাবর্ষের রাাষ্ট্র নীতি ও লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী আখতারুজ্জামান বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাস জীবনে বিশ্ববিদ্যালয়ের কতৃপক্ষ সমাবর্তনের মাধ্যমে সবচেয়ে বড় অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে। দীর্ঘ দিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সমাবর্তন আয়োজন করতে কোনো ব্যাবস্থা নেয়নি। যথাযথ উদ্যোগের অভাবেই শিক্ষার্থীরা এত বড় অনুষ্ঠান থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা তাদের মূল সনদপত্র হাতে পাচ্ছে না। শিক্ষাজীবন্ শেষে চাকরী জীবন পার করছেন মুল সনদ পত্র ছাড়াই। এতে করে শিক্ষার্থীদের চাকরির ক্ষেত্রে বিভিন্ন ভাবে বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে।’

২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আবির মাহমুদ বলেন, ‘উচ্চ শিক্ষা শেষে প্রতিটি শিক্ষার্থীর জন্য সামবর্তনা একটি গর্বের বিষয়। প্রতিটি সমাবর্তনায় বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্বের দরবারে নতুন করে পরিচিত হয়। নতুন প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববদ্যিালয় গুলো যেখানে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার দশ বছরের মাথায় তিনটি সমাবর্তনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে পুরোনো বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৭ বছরে তিনটির বেশি সমাবর্তনের অনুষ্ঠিত না হওয়ায় প্রশাসন অনেকটা ব্যার্থতার পরিচয় দিয়েছে।’

্এবিষয়ে বিশ্বকিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন-উর রশিদ আশকারীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি আজকের আলোকে বলেন, বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের হাতে সমাবর্তন করার পরিকল্পনা রয়েছে। আমাদের প্রাথমিক কাজ গুলো সমাধান করে খুব তাড়াতাড়ি সমাবর্তনার বিষয়টি হাতে নেব।’

সানবিডি/ইবি/তারিক/এসএস/এমজেড