ডিএসইর সার্ভিল্যান্স থেকে তথ্য ফাঁস!
প্রকাশ: ২০১৭-০১-২৭ ১৩:৫৯:৩৬
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সার্ভিল্যান্স থেকে লেনদেনের স্পর্শকাতর তথ্য ফাঁস হয়ে যাচ্ছে। ব্যক্তি বা প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা কে কোন কোম্পানির শেয়ার কিনছে, তা সহজেই জেনে যাচ্ছে সংঘবদ্ধ একটি চক্র। ডিএসইর বিরুদ্ধে এভাবে তথ্য পাচারের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। যদিও তারা বিষয়টি অস্বীকার করে আসছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বিনিয়োগকারীদের তথ্য অন্যত্র পাচারের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেয়ে বৃহস্পতিবার একটি কমিটি করা হয়েছে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক কায়কোবাদের নেতৃত্বে উচ্চপর্যায়ের কমিটিকে দ্রুত রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। ডিএসই সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
জানতে চাইলে অধ্যাপক কায়কোবাদ বৃহস্পতিবার বলেন, আমার নেতৃত্বে কমিটি গঠনের বিষয়টি শুনেছি। কিন্তু এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি। তিনি বলেন, বর্তমানে বাজার বড় হচ্ছে। আর ডিএসইর বোর্ড অত্যন্ত সচেতন। ফলে কোনো অভিযোগ এলে তারা তদন্ত কমিটি করতেই পারে। জানা গেছে, শেয়ারবাজারে সবচেয়ে স্পর্শকাতর হল স্টক এক্সচেঞ্জের সার্ভিল্যান্স। কারণ দৈনন্দিন লেনদেনের সব তথ্য এখানে থাকে। এ জন্য সর্বোচ্চ গোপনীয়তা অবলম্বন করা হয়, যাতে বাইরে তথ্য ফাঁস না হয়।
কোনো বড় ব্রোকারেজ হাউস, মিউচুয়াল ফান্ডসহ কোন বিনিয়োগকারী কোন কোম্পানির শেয়ার কী মূল্যে কিনছে, তার সব তথ্য মুহূর্তেই এখান থেকে জানা যায়। এসব কারণে সার্ভিল্যান্স রুমে স্টক এক্সচেঞ্জের বোর্ড সদস্যদেরও প্রবেশের অনুমতি নেই। সব সময় সিসিটিভি দিয়ে সংরক্ষিত সার্ভিল্যান্স রুমটি চিফ রেগুলেটর অফিসারের মাধ্যমে পরিচালিত হয়।
এ টিম সরাসরি সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাছে দায়বদ্ধ। টিমে যেসব কর্মকর্তা কাজ করছেন, তারা লেনদেনের সময় মোবাইল ফোনও ব্যবহার করতে পারেন না। কিন্তু সর্ষের মধ্যেও ভূত আছে। এত সতর্কতা সত্ত্বেও সাম্প্রতিক সময়ে সার্ভিল্যান্স থেকে বিনিয়োগকারীদের তথ্য ফাঁস হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। যদিও সাধারণ কারও পক্ষে তা অসম্ভব। কিন্তু ধারণা করা হচ্ছে ভেতরের কেউ না কেউ তথ্য ফাঁসের সঙ্গে জড়িত। এর আগে ২০১১ সালে খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্টেও বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছিল। কিন্তু তাতে খুব বেশি পরিবর্তন আসেনি।
সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে সংবাদ ছাপা হলে ডিএসই বোর্ডের নজরে আসে। এরপর গত রোববার অনুষ্ঠিত ডিএসইর বোর্ড সভায় অভিযোগটি উপস্থাপন করা হলে তদন্তের সিদ্ধান্ত হয়। তবে এ বিষয় জানতে ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক কেএএম মাজেদুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাড়া দেননি। তবে ডিএসইর পরিচালক রকিবুর রহমান বলেন, বিষয়টি ম্যানেজমেন্টের। এ ব্যাপারে তারা ভালো বলতে পারবেন। তবে অধ্যাপক কায়কোবাদের নেতৃত্বে যে কমিটি গঠন করা হয়েছে তাতেও স্বতন্ত্র পরিচালক রয়েছেন।
শেয়ারধারী পরিচালকদের এখানে কোনো ভূমিকা নেই। এদিকে ডিএসইর কাজে গতি আনতে ম্যানেজমেন্টে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হয়েছে। কোম্পানি সেক্রেটারি শেখ মোহাম্মদ উল্লাহকে ইন্টারন্যাল অডিটের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আর কোম্পানির উপ-মহাব্যবস্থাপক আসাদুর রহমানকে কোম্পানির সেক্রেটারির দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।