উত্তর প্রদেশে বিশাল জয় মোদীর বিজেপির, পাঞ্জাবে কংগ্রেসের

প্রকাশ: ২০১৭-০৩-১২ ১১:০৪:২১


Modiভারতের রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উত্তর প্রদেশের বিধানসভা নির্বাচনে বিপুল জয় পেয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দল ভারতীয় জনতা পার্টি-বিজেপি। ৪০৩ আসনের মধ্যে বিজেপি জোট পেয়েছে ৩২৫টি। উত্তরাখণ্ড রাজ্যেও বিজেপি বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে। অন্যদিকে পাঞ্জাবে জয় পেয়েছে কংগ্রেস। গোয়া ও মনিপুর রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে বেশি আসন পেয়েছে কংগ্রেস তবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি তারা।
ভারতের সবচেয়ে জনবহুল উত্তর প্রদেশ রাজ্যের নির্বাচনকে নরেন্দ্র মোদীর সরকারের জন্য বড় পরীক্ষা হিসেবে দেখা হচ্ছিলো। কারণ নভেম্বর মাসে দেশের চালু নোটের ৮৬ শতাংশ বাতিল বলে ঘোষণা করেছিলেন মোদী। পাঁচশো আর এক হাজার টাকার নোট বাতিলের পর সারা দেশের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে ব্যাপক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিলেন। কিন্তু উত্তর প্রদেশে অভাবনীয় জয় পেয়েছে বিজেপি।
উত্তরপ্রদেশের ভোটের ফলাফল জাতীয় রাজনীতিতে যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনই সংসদীয় রাজনীতিতেও বিজেপি-কে সুবিধাজনক অবস্থানে নিয়ে এসেছে। সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় বিজেপি এখনো সংখ্যাগরিষ্ঠ দল নয়। তাই মোদীর নেতৃত্বাধীন সরকারের আনা অনেক বিলই সেখানে আটকে যায়। কিন্তু রাজ্য বিধানসভাগুলিতে নবনির্বাচিত বিজেপি সদস্যদের ভোটে যতজন সংসদ সদস্য রাজ্যসভায় পাঠাতে সক্ষম হবে বিজেপি, তার ফলে উচ্চকক্ষের সেই সংখ্যার ভারসাম্য বিজেপির অনুকূলে অনেকটাই চলে যাবে।
কয়েক ধাপে অনুষ্ঠিত পাঁচ রাজ্যের নির্বাচনের ফল গতকাল শনিবার আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়। ফল অনুযায়ী উত্তর প্রদেশের ৪০৩ টি আসনের মধ্যে বিজেপি জোট পেয়েছে, ৩২৫টি আসন। ক্ষমতাসীন সমাজবাদী পার্টি ও কংগ্রেস জোট পেয়েছে ৫৬টি আসন। বহুজন সমাজবাদী পার্টি পেয়েছে ১৯টি আর বাকিরা পেয়েছে ৩টি আসন। এই রাজ্যে বিদায়ী সরকার সমাজবাদী পার্টি কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বেঁধে ভোটে নেমেছিল। তারা মুখ থুবড়ে পড়েছে। জোটের জোটের প্রচারে প্রধান মুখ ছিলেন দুই দলের দুই যুব নেতা বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব ও কংগ্রেসের সহ-সভাপতি রাহুল গান্ধী। আর বিজেপির পক্ষে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজে ব্যাপক প্রচারাভিযানে নেমেছিলেন। মোদী যেমন তাঁর উন্নয়নের এজেন্ডা নিয়েই এগিয়েছিলেন প্রচারে, তেমনই রাজ্য সরকারের ব্যাপক দুর্নীতির বিরুদ্ধেও সরব হয়েছিলেন।
নিরঙ্কুশ জয়ের মাধ্যমে ১৫ বছর পর আবার বিজেপি উত্তর প্রদেশের ক্ষমতায় এসেছে। ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে এই উত্তর প্রদেশে মোদী ম্যাজিক কাজ করায় সহজে কেন্দ্রের ক্ষমতা দখলে আসে বিজেপির। বলা হচ্ছে, এই জয় নরেন্দ্র মোদীকে দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথকে সুগম করবে। ইতিমধ্যে বিজেপির সভাপতি অমিত শাহ্ দাবি করেছেন, ভারতের স্বাধীনতার পর সবচেয়ে জনপ্রিয় ও প্রভাবশালী নেতা নরেন্দ্র মোদী।
উত্তরাখণ্ডে অপ্রত্যাশিত ধাক্কা খেয়েছে কংগ্রেস। এখানেও নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছে বিজেপি। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পূর্বাভাস ভুল প্রমাণ হয়েছে। কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রী হরীশ রাওয়াত নিজেই দুইটি কেন্দ্রেই পরাজিত হয়েছেন। ৭০ আসনের উত্তরাখণ্ড বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজন ৩৬টি আসন। এর মধ্যে বিজেপি পেয়েছে ৫৭টি আসন। ক্ষমতাসীন কংগ্রেস পেয়েছে ১১। আর অন্যান্যরা পেয়েছে ২ আসন। ২০১২ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপিকে সামান্য ব্যবধানে পিছনে ফেলে এই রাজ্যের দখল নিয়েছিল কংগ্রেস।
পাঞ্জাবে জয় পেয়েছে কংগ্রেস। এই রাজ্যে বিজয়রথ থেমেছে বিজেপির। পর পর দুই বার পঞ্জাবের সরকারে থাকা অকালি-বিজেপি জোটকে ব্যাকফুটে পাঠিয়ে জয় ছিনিয়ে নিয়েছে কংগ্রেস। পঞ্জাবে সাধারণত পাঁচ বছর অন্তর অন্তর ক্ষমতার বদল হয়। কিন্তু গত ২০১২ সালে সব হিসাব-নিকাশ বদলে দ্বিতীয়বারের জন্য মসনদে বসে ক্ষমতাসীন শিরোমণি অকালি দল ও বিজেপি জোট। পঞ্জাবের ড্রাগ সমস্যা নিয়ে জোরদার প্রচার চালিয়ে বড় মুখ হিসেবে উঠে আসেন আম আদমি পার্টির নেতা ও দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিবাল। যার জেরে এ রাজ্যে ভোটের লড়াই হয়েছে ত্রিমুখী। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জয় কংগ্রেসের।
১১৭ আসনের পঞ্জাব বিধানসভায় কংগ্রেস পেয়েছে সংখ্যাগরিষ্ঠ ৭৭টি আসন। আম আদমি পার্টির জোট পেয়েছে ২২টি, ক্ষমতাসীন আকালি দল ও বিজেপি জোট পেয়েছে ১৮টি আসন।
ইতিমধ্যেই ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিংহ সাংবাদিক সম্মেলনে কংগ্রেসের এই জয়কে পঞ্জাবের সাধারণ মানুষের উদ্দেশে উত্সর্গ করেছেন। তাঁর হাত ধরেই ১০ বছর পর পঞ্জাবে ক্ষমতায় ফিরল কংগ্রেস। বিজেপি-অকালি জোটের এই ভরাডুবিকে উন্নাসিকতার হার বলেও উল্লেখ করেছেন কংগ্রেসের টিকিটে জেতা সাবেক ক্রিকেটার নভজ্যোত সিং সিধু।
গোয়া ও মনিপুরে এগিয়ে রয়েছে কংগ্রেস। তারা এই দুই রাজ্যে সরকার গঠন করতে পারে। এই দুই রাজ্যে ঝুলন্ত পার্লামেন্ট। কোনো দল এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পায়নি। ৪০ আসনের গোয়ায় কংগ্রেস জোট পেয়েছে ১৮টি আসন। বিজেপি জোট পেয়েছে ১৪টি আসন। আর বাকিরা পেয়েছে ৮টি আসন। এখানে কংগ্রেসের সরকার গঠনের সম্ভাবনা বেশি। তবে বিজেপি সভাপতি ঘোষণা দিয়েছেন তারা পাঞ্জাব ছাড়া বাকি চার রাজ্যেই সরকার গঠন করবে। অন্যদিকে মনিপুরে ৬০ আসনের মধ্যে কংগ্রেস পেয়েছে ২৮টি আসন। বিজেপি পেয়েছে ২১টি। বামরা পেয়েছে একটি। আর অন্যান্য দল পেয়েছে ১০টি আসন পেয়েছে। এই দুই রাজ্যে সরকার গড়তে হলে বাকিদের সঙ্গে বড় দুই দলকে জোট করা ছাড়া উপায় নেই। ফলে যদি সরকার হয় সে সরকার অনেকটাই নড়বড়ে হবে।