জমি, অবকাঠামো ও জ্বালানি সংকট দূর করতে হবে

আপডেট: ২০১৭-০৩-১৬ ১৭:১৮:০২


beza-logoবিনিয়োগ সংস্কৃতির উন্নতি না হলে বিদেশি বিনিয়োগ আসবে না। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে অপেক্ষাকৃত ভালো গন্তব্যে যাওয়ার সুযোগ আছে; তাঁরা সেখানে চলে যাবেন। বাংলাদেশের আইনগুলো ভালো, কিন্তু সমস্যার সমাধান পাওয়া যায় না। এ ছাড়া বিনিয়োগের জন্য রাজনৈতিক পরিবেশ চমৎকার হলেও জমি, অবকাঠামো, জ্বালানির সংকট দূর করতে হবে।

গতকাল বুধবার বিনিয়োগ নিয়ে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) আয়োজিত সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। রেডিসন হোটেলে এই সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। উদ্বোধনী অধিবেশনের পাশাপাশি একটি কর্ম অধিবেশন হয়। উভয় অধিবেশনের বক্তারা ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠনের উদ্যোগকে স্বাগত জানান।

কর্ম অধিবেশনে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ২০১৮ সাল থেকে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হলেও ২০২৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের বাজার-সুবিধা পাবে। আগামী ১০ বছর এই সুবিধা থাকবে। একদিকে অর্থনীতির তুলনামূলক ভালো অবস্থান, অন্যদিকে স্বল্পোন্নত দেশের বাজার-সুবিধা—এ দুটিই বাংলাদেশের বিনিয়োগ বাড়ানোর বড় সুযোগ।

মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে দক্ষ মানবসম্পদ লাগবে। দক্ষ মানবসম্পদ ছাড়া উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করা যাবে না। তিনি বলেন, এ দেশে রাজনৈতিক পরিবেশ চমৎকার। তবে জমি, অবকাঠামো, জ্বালানির সংকট দূর করে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আনতে হবে।

কর্ম অধিবেশনের প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের পরিবর্তনগুলো দ্রুত দৃশ্যমান হচ্ছে। উন্নয়ন টেকসই করতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশে দীর্ঘ মেয়াদে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। যেমন ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে উন্নীত হওয়া। এমনকি ২১০০ সালে বাংলাদেশের জন্য একটি বদ্বীপ পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

জাপান ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান সুচি কুবায়েশী বলেন, ২০৩০ সালে বাংলাদেশ ২৮তম এবং ২০৫০ সালে ২৩তম অর্থনীতির দেশ হবে। এটাই বাংলাদেশের সম্ভাবনা; এই সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হবে।

এই অধিবেশনে পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) চেয়ারম্যান কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ সভাপতিত্ব করেন। তিনি বলেন, দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে শিল্পায়ন করতে হবে। কর্মসংস্থানের জন্য শিল্পায়ন লাগবে।

এদিকে সকালের উদ্বোধনী অধিবেশনে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা দিয়েছেন। সুদের হারও নিম্ন পর্যায়ে আছে। তবু কেন বিনিয়োগ হচ্ছে না? মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অনুপাতে এখনো ব্যক্তি বিনিয়োগ বেশ কম। তাঁর মতে, ব্যবসা সহজ করার ক্ষেত্রে আমলাতান্ত্রিক মনোভাব পরিবর্তন করতে হবে।

তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানের মতে, বাংলাদেশ এখন বিনিয়োগের জন্য বেশ ভালো জায়গা। এক দশক ধরে ৬ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। মূল্যস্ফীতি ৫ শতাংশের নিচে আছে। জ্বালানি ও জমির সমস্যার সমাধানে অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠন করা হচ্ছে।

নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সুরাইয়া বেগম বলেন, সম্প্রতি এক সফরের সময় মেক্সিকোর ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে বেশ আগ্রহ দেখিয়েছেন। মেক্সিকোর ৩৫ লাখ বিনিয়োগকারী যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগ করেছেন। এর একটি অংশ বাংলাদেশে আনা যেতে পারে। এমন ধরনের সুযোগগুলো খুঁজে বের করতে হবে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান মনে করেন, ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠনের উদ্যোগই ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার বার্তা দিচ্ছে। বাজেট প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় বিনিয়োগকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে।

একজন মার্কিন গবেষকের উদ্ধৃতি দিয়ে বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে চমৎকার আইন আছে; কিন্তু সমাধান পাওয়া যায় না। আবার বিনিয়োগ সংস্কৃতি উন্নতি না করলে বিদেশি বিনিয়োগ আসবে না। তাঁদের কাছে অপেক্ষাকৃত ভালো সুযোগ থাকলে সেখানে চলে যাবেন।