মৃত ভোটারের নামে স্মার্টকার্ড
প্রকাশ: ২০১৭-০৩-১৮ ১৩:৩৮:৫০
বেশকিছু মৃত ভোটারের নামে স্মার্টকার্ড ছাপিয়ে ফেলেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে কত সংখ্যক মৃত ভোটারের নামে স্মার্টকার্ড ছাপানো হয়েছে তার সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও এই ইস্যুতে উদ্বিগ্ন নির্বাচন কমিশন (ইসি)। জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগ (এনআইডি) বলছে, তথ্যগত ভুলের কারণে অনিচ্ছাকৃতভাবে মৃত ভোটারের নামে স্মার্টকার্ড ছাপানো হয়েছে। এজন্য ভোটারদের সঠিক তথ্য চেয়ে সম্প্রতি মাঠ পর্যায়ে নির্দেশনা পাঠিয়েছে এনআইডি। এনআইডি উইংয়ের পরিচালক (অপারেশন) মো. আবদুল বাতেন স্বাক্ষরিত মাঠ পর্যায়ে পাঠানো নির্দেশনায় এ সব তথ্য পাওয়া গেছে।
উপজেলা/থানা নির্বাচন অফিসে পাঠানো ওই নির্দেশনায় বলা হয়, রেজিস্ট্রেশন অফিসার কর্তৃক নিয়মিত মৃত ভোটারের নাম কর্তন না করায়, ডাটাবেজে প্রচুর সংখ্যক মৃত ভোটারের নাম থেকে যাওয়ায় তাদের স্মার্ট আইডি কার্ড প্রিন্ট করতে হচ্ছে। মৃত ভোটারের নামে স্মার্ট কার্ড মুদ্রণ করা যেমন অপ্রয়োজনীয় তেমনি তা সময়, শ্রম ছাড়াও সরকারের প্রচুর অর্থের অপচয় হচ্ছে। এ জন্য নিয়মিত মৃত ভোটারের নাম কর্তন করতে হবে। নির্দেশনায় বলা হয়, এক্ষেত্রে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, সকল সদস্য, সংরক্ষিত মহিলা সদস্য, গ্রাম পুলিশ, দফাদারদের সমন্বয়ে কমপক্ষে মাসে একবার সভা করে মৃত ভোটারের তথ্য সংগ্রহ করে হালনাগাদ করতে হবে। পৌরসভা বা সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলরদের সমন্বয়েও অনুরূপ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এক্ষেত্রে ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যরা প্রয়োজনে চকিদার, দফাদারদের সহায়তা নিয়ে মৃত ভোটারের তালিকা সংগ্রহ করে উপজেলা নির্বাচন অফিসে পাঠাবেন। জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগ হতে প্রয়োজনীয়
ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার বিভাগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট পুলিশ প্রশাসন ও আনসার ও ভিডিপির সহায়তার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা প্রতিমাসে মৃত ভোটার কর্তনের রিপোর্ট জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে আর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা একীভূত রিপোর্ট জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগে পাঠাবেন।
নির্দেশনায় আরো বলা হয়, ভুলক্রমে কোনো ভোটারের নাম কর্তন হয়ে গেলে তার নাম পুনরায় সংযোজনের জন্য এনআইডি উইংয়ে পত্র পাঠানোর সময় তদন্ত প্রতিবেদন সংযুক্ত করতে হবে এবং উক্ত প্রতিবেদনে বর্ণিত ভুলের কারণ এবং দায়ী ব্যক্তিকে চিহ্নিত করতে হবে। জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা দায়ী ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন এবং গৃহীত ব্যবস্থা সম্পর্কে এনআইডি উইংকে অবহিত করবেন।
এছাড়া নির্দেশনায় বলা হয়, উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা কর্তৃক সেবা সম্পর্কিত বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতি অনুসরণ করায় জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে। জটিলতা এড়ানোর জন্য সারাদেশে একই নিয়ম ও পদ্ধতি অনুসরণ করার কথাও উল্লেখ করা হয়।
গত বছরের ৩ অক্টোবর থেকে নাগরিকদের হাতে স্মার্টকার্ড বিতরণ কার্যক্রম শুরু করে নির্বাচন কমিশন। ইতিমধ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে এই কার্ড বিতরণের কাজ চলছে। প্রায় ১০ লাখের মতো ভোটারের হাতে স্মার্টকার্ড তুলে দেয়া হয়েছে। এছাড়া প্রায় এককোটির মত ভোটারের স্মার্টকার্ড প্রিন্ট করেছে কমিশন। ইসির তথ্য মতে, প্রতিবছর প্রায় ৭ লাখের মতো মৃত ভোটারের নাম ভোটার তালিকা থেকে কর্তন করার কথা। কিন্তু সেই অনুযায়ী মৃত ভোটারের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ যাচ্ছে না। ফলে যাদের নাম ভোটার তালিকায় বিদ্যমান থাকছে তাদের নামে স্মার্টকার্ড প্রিন্ট করছে কমিশন। প্রতিটি কার্ড প্রিন্টের জন্য কমিশনের খরচ হচ্ছে ৮০ টাকা।
২০১৫ সালের ১৪ জানুয়ারি ১৮ মাসের মধ্যে ৯০ মিলিয়ন (৯ কোটি) স্মার্টকার্ড তৈরি করে দেয়ার জন্য ফ্রান্সের ‘অবার্থার টেকনোলজিস’ নামের একটি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করে ইসি। চুক্তি অনুযায়ী ২০১৬ সালের জুনে নাগরিকের হাতে স্মার্টকার্ড দেয়ার কথা ছিল ইসির। কিন্তু সময়মতো তা দিতে পারেনি ইসি। পরে ব্যয় না বাড়ানোর শর্তে এ প্রকল্পে আরো ১৮ মাস সময় বাড়িয়ে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়। তবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ৯ কোটি ভোটারের হাতে স্মার্টকার্ড তুলে দেয়া সম্ভব নয় বলে সম্প্রতি জানিয়েছেন ইসি সচিব মোহাম্মদ আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, যে হারে কার্ড দেয়া হচ্ছে তাতে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে কার্ড প্রদান সম্ভব হবে না। আশা করছি আগামী বছরের জুনের মধ্যে ৯ কোটি ভোটারের হাতে স্মার্টকার্ড তুলে দিতে পারবো। বাকি ১ কোটি ১৭ লাখ ভোটারকে পরে সরকারের অর্থায়নে কার্ড দেয়া হবে।