তনু হত্যার ১ বছর পরও ধরাছোঁয়ার বাইরে ঘাতকরা
প্রকাশ: ২০১৭-০৩-২০ ১১:০১:৩৯
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনু হত্যার এক বছর আজ। মাসের পর মাস পেরিয়ে আজ সোমবার একটি বছর চলে গেল। কিন্তু তনুর ঘাতকরা আজও শনাক্ত কিংবা গ্রেফতার হয়নি। যতই দিন যাচ্ছে সুষ্ঠু তদন্ত আর বিচার পাওয়া নিয়ে স্বজনদের মাঝে সংশয় আর হতাশা ততই বাড়ছে। গতকাল রবিবার মামলার ভবিষ্যত্ নিয়ে গভীর হতাশা প্রকাশ করে সাংবাদিকদের কাছে তনুর মা ও পরিবারের লোকজন বলেন, ‘স্পর্শকাতর একটি এলাকা থেকে তনুর লাশ উদ্ধার করা হলো, অথচ এখনো কাউকে শনাক্ত করা গেল না। এখনো সিআইডি বলছে- ঘাতকরা ধরা পড়বে, বিচার হবে। কিন্তু এভাবে আর কতদিন যাবে। আমরা ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি, জানি না বিচার পাব কি না। যদি সম্ভব হয় প্রধানমন্ত্রী এবং সেনাবাহিনী প্রধানের সঙ্গে দেখা করে মেয়ে হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চাইব।’ এসময় তাদের চোখ পানিতে ভিজে যায়। তবে তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে সাংবাদিকদের কাছে মুখ খুলছেন না মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এদিকে তনুর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আজ সোমবার মুরাদনগর উপজেলার মির্জাপুর গ্রামের বাড়িতে দোয়া ও মিলাদের আয়োজন করা হবে বলে জানিয়েছেন তনুর মা।
কুমিল্লা সেনানিবাসের ভেতরের একটি জঙ্গল থেকে গত বছরের ২০ মার্চ রাতে কলেজছাত্রী সোহাগী জাহান তনুর লাশ উদ্ধার করা হয়। পরদিন তার বাবা কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অফিস সহায়ক ইয়ার হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে কোতয়ালী মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। থানা পুলিশ ও ডিবি’র পর গত বছরের ১ এপ্রিল থেকে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি। ওই বছরের মে মাসে তদন্তকারী সংস্থা সিআইডি তনুর জামা-কাপড় থেকে নেওয়া নমুনার ডিএনএ পরীক্ষা করে ৩ জনের শুক্রাণু পাওয়ার কথা গণমাধ্যমকে জানিয়েছিল এবং হত্যার আগে তনুকে ধর্ষণ করা হয়েছিল বলে তারা নিশ্চিত হয়েছিল। তবে কেন-কোথায় এবং কীভাবে তনুকে হত্যা করা হয়েছে, তা নিয়ে এখনো সকল মহলে নানা গুঞ্জন চলছে। তনুর স্বজনরা জানান, ঘটনার পর পর ঘাতকদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে দেশব্যাপী প্রতিবাদের ঝড় উঠলেও ধীরে ধীরে সবই থেমে গেছে। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ ছাড়াও দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, সাংস্কৃতিক, সামাজিক সংগঠন, গণজাগরণ মঞ্চ ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো একসময় সরব থাকলেও এ নৃশংস হত্যাকাণ্ড নিয়ে এখন কেউ কথা বলছে না। মামলার অগ্রগতিও জিজ্ঞাসাবাদেই আটকে আছে।
তনুর লাশের দুই দফা ময়নাতদন্ত, মামলার তদন্তকারী সংস্থা ও কর্মকর্তা পরিবর্তন হলেও এ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি তনু হত্যা মামলা। এদিকে দীর্ঘ এক বছরেও দেশব্যাপী আলোচিত তনু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত বা গ্রেফতার করতে না পারা, বিভিন্ন সময়ে সামরিক-বেসামরিক ৭০ জনের অধিক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা, দুই দফা ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে মৃত্যুর কারণ অস্পষ্ট থাকা, এমনকি ডিএনএ পরীক্ষায় ৩ ধর্ষণকারীর শুক্রাণু পেলেও এ পর্যন্ত ডিএনএ ম্যাচ করে ঘাতকদের শনাক্ত করতে না পারায় এ মামলার ভবিষ্যত্ কিংবা বিচার পাওয়া নিয়ে তনুর পরিবার, মানবাধিকার সংগঠনসহ বিভিন্ন মহল সংশয় প্রকাশ করেছে।
তবে সিআইডি’র একটি সূত্র জানায়, এরই মধ্যে মামলার তদন্ত সহায়ক দলের প্রধান, তদন্ত তদারক কর্মকর্তা ও তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের বৈঠক হয়েছে এবং বৈঠকে মামলার অগ্রগতি ও তদন্তের কৌশল নির্ধারণ করে কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) কুমিল্লার সাবেক সভাপতি বদরুল হুদা জেনু বলেন, দীর্ঘ এক বছরেও হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন হয়নি। এটা তদন্ত সংস্থার দীর্ঘসূত্রিতা, যা বিচারহীনতার সংস্কৃতি।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সিআইডি-কুমিল্লার সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার জালাল উদ্দীন আহমেদ বলেন, মামলাটির তদন্ত নিজস্ব গতিতে চলছে, তাই তদন্তাধীন বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না।