পশ্চিমবঙ্গের মাদ্রাসায় মুসলিমের চেয়ে অমুসলিম শিক্ষার্থীই বেশি

আপডেট: ২০১৭-০৪-০৩ ১২:৩৫:৪০


Madrasha. Hugliমাদ্রাসা মানে শুধু মুসলিম শিক্ষার্থী নয়। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের অন্তত পাঁচ মাদ্রাসায় তাকালেই এমনটায় মনে হবে। যেখানে মুসলিম শিক্ষার্থীর তুলনায় অমুসলিম শিক্ষার্থীর সংখ্যায় বেশি। খবর আনন্দবাজার পত্রিকার।

মাদ্রাসা পরিষদ সূত্রের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানের ওড়গ্রাম চতুষ্পল্লি হাইমাদ্রাসা, হুগলির দাবরা হাইমাদ্রাসা, পুরুলিয়ার হুড়া মুজাফফর আহমেদ অ্যাকাডেমি হাইমাদ্রাসা, পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনা ইসলামিয়া হাইমাদ্রাসা এবং উত্তর দিনাজপুরের কসবা এম এম হাইমাদ্রাসায় অমুসলিম শিক্ষার্থীরা সংখ্যাগুরু।

এদের মধ্যে ওড়গ্রামে মোট ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ১২৩০ জন। এর মধ্যে অ-মুসলিম ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ৮০০। দাবড়ায় ২৫৬ জন ছাত্রছাত্রীর মধ্যে অমুসলিম শিক্ষার্থী ১৫৭ জন। পুরুলিয়ার হুড়ায় ১৩৬০ জন ছাত্রছাত্রীর মধ্যে ৭২০ জন অমুসলিম। চন্দ্রকোনায় ৩৮৩ জন ছাত্রছাত্রীর মধ্যে ২২৫ জন আর উত্তর দিনাজপুরের কসবায় ৫৯৫ জন ছাত্রছাত্রীর মধ্যে ৩২০ জন শিক্ষার্থী অমুসলিম সম্প্রদায়ভুক্ত।

ওড়গ্রাম হাইমাদ্রাসার সাবেক ছাত্র, বর্তমানে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠরত সায়ন বন্দোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মাদ্রাসা মানেই কেবল মুসলিম শিক্ষার্থীরা পড়বে, সাধারণ মানুষের মনে এটা একটা ভুল ধারণা রয়েছে। ওড়গ্রাম চতুষ্পল্লি হাইমাদ্রাসার সাবেক ছাত্র হিসেবে আমি গর্বিত। ওই মাদ্রাসার স্যারেদের জন্যই আমি এত দূর পৌঁছতে পেরেছি। ’’

পুরুলিয়ার হুড়া মুজাফফর আহমেদ অ্যাকাডেমি হাইমাদ্রাসার সাবেক ছাত্রী মিতালি মাহাতো বর্তমানে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে নার্সিং-এ স্নাতক পড়ছেন। তাঁর কথায়, ‘‘হুড়ার মাদ্রাসায় পড়াশোনার সময় কখনোই জাতপাতের কথা মনে হয়নি। আরবি পড়ে ক্লাসে ভালে নম্বরও পেয়েছি। বর্তমান সময়ে সাম্প্রদায়িকতা যখন মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে তখন এমন মাদ্রাসা সম্প্রীতির মডেল হওয়া উচিত। ’’

ঠিক একই কথা বললেন পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল মাদ্রাসা শিক্ষা সংগঠনের সভাপতি এ কে এম ফারহাদ-ও। তাঁর কথায়, ‘‘মাদ্রাসা সম্পর্কে প্রচলিত ধারণার বদল হওয়া দরকার। মাদ্রাসার সার্বিক উন্নয়নে এই পাঁচটি মাদ্রাসা সারা রাজ্যে মডেল হওয়া উচিত। ’’

পশ্চিমবঙ্গে বর্তমানে মাদ্রাসা পরিষদ পরিচালিত ৬১৪টি মাদ্রাসা রয়েছে। মধ্যশিক্ষা পরিষদের সঙ্গে মাদ্রাসা পরিষদের সিলেবাসে তফাৎ একটাই। মাদ্রাসা পরিষদে বাড়তি বলতে ১০০ নম্বরের আরবি সাহিত্য। হুড়া মুজাফফর আহমেদ অ্যাকাডেমি হাইমাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক আহমাদুল্লাহ আনসারি বলেন, ‘‘আমাদের মাদ্রাসার সাবেক ছাত্র অনন্ত টুডু আরবিতে সর্বাধিক নম্বর পেয়ে বর্তমানে আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে আরবি অনার্স নিয়ে পড়়াশোনা করছে। ’’

পাঁচটি মাদ্রাসাতেই অ-মুসলিম ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে তফসিলি জাতি ও উপজাতি সম্প্রদায়ের ছাত্রছাত্রীরা সংখ্যায় বেশি। মাদ্রাসা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবিদ হোসেন বলেন, ‘‘পাঁচটি মাদ্রাসার এক কিলোমিটারের মধ্যেই মধ্যশিক্ষা পরিষদ পরিচালিত বিদ্যালয়ও রয়েছে। তা সত্ত্বেও অমুসলিম শিক্ষার্থীরা মাদ্রাসায় ভর্তি হয়েছে। ’’

অর্থাৎ? মাদ্রাসা পরিষদ সচিব রেজওয়ানুল করিম তরফদার বলেন, ‘‘সমাজের বড় অংশের মধ্যে আসলে মাদ্রাসা সম্পর্কে ভুল ধারণা রয়েছে। রাজ্যের পাঁচটি মাদ্রাসায় অমুসলিম শিক্ষার্থীদের সংখ্যাধিক্য সেই ভুলটাই ভেঙে দিল। ’’ সূত্র: আনন্দবাজার