সরকারের ভূমিকা ও আমাদের সমাজ

আপডেট: ২০১৭-০৪-০৪ ১৬:৫৩:০৩


12935355_1734788640078188_861199802_nসরকার মধ্যরাতে ফেসবুক ও কার্টুন নেটওয়ার্ক চ্যানেল বন্ধ করতে চায়। অভিযোগ এসময় ফেসবুকে শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ ফেসবুকে আসক্ত হচ্ছে। ফলে পড়াশোনায় বিঘ্ন ঘটছে। এবং ২৪ ঘন্টা কার্টুন নেটওয়ার্ক চালু থাকার কারনে শিশুরা রাত জেগে কার্টুন দেখছে। তাদের দেখে রাখার দায়িত্ব তাদের মা বাবার। অথচ যেসব মায়েরা তাদের সন্তানের দেখাশোনা করবে করবে তার বড় একটি অংশ এখন ব্যস্ত থাকে ভারতীয় চ্যানেলে প্রচারিত সিরিয়াল নিয়ে। স্টার জলসা, জি বাংলা, কালারস বাংলা নামের চ্যানেলে বিভিন্ন ভারতীয় সিরিয়াল প্রচার করা হয়। তাছাড়া, স্টার জলসায় প্রচারিত কিরণমালা নাটকের নায়িকার পরিহিত পাখি ড্রেস কিনে না দেওয়ায় আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটেছে আমাদের দেশে। ২০১৪ সালে পাখি ড্রেসের জন্য আত্মহত্যা করে ১০ জনের মতো। এছাড়া কিরণমালা পোষাকের জন্য আরো ৫ জন আত্মহত্যা করে। তালাক দেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে। বর্তমানে সংসারে অশান্তির বড় কারণ এই সিরিয়ালগুলো। দেশের সাধারণ মানুষ ভারতীয় চ্যানেলগুলো বন্ধের দাবি করলেও সরকার এখন পর্যন্ত সেগুলো বন্ধ করেনি। ভারতীয় চ্যানেলগুলো বন্ধ হলেই মায়েরা তার সন্তানের দিকে নজর দেওয়ার সময় পাবেন। তারা তাদের সন্তানদের প্রতি যত্নবান হবেন বলে আশা করি।

সরকার চাইছে ফেসবুক বন্ধ করে দিতে। কিন্ত ফেসবুক বন্ধ করলেই যে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে এমন না। ফেসবুকের মাধ্যমে এখন অনেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে থাকেন। ফলে এটা হবে তাদের জন্য একটা বড় বাঁধা। তাছাড়া বিভিন্ন প্রক্সি সাইট ব্যবহার করেও অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহার করবেন। ফেসবুক বন্ধ করে না, বরং সামাজিক মাধ্যমে নজরদারি করে অসামাজিক কাজে যারা যুক্ত থাকে তাদের শাস্তির আওতায় আনলেই সমস্যার সমাধান করা যায়।

স্বাধীনতার ৪৫ বছর অতিক্রান্ত হলেও আশ্চর্যজনকভাবে বাড়ছে মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা। বর্তমানে দেশে মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা দুই লাখের বেশি। এছাড়াও নতুন আবেদন পড়েছে ১ লাখ ৩৬ হাজার। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাসংশ্লিষ্ট বিশিষ্টজন ও গবেষকদের মতে মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা দেড় লাখের বেশি নয়। এই সুযোগে যে অনেকে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হবে না তার নিশ্চয়তা কে দেবে? আজ (৪ এপ্রিল, ২০১৭) আবুল মকসুদ আহমেদ এক কলামে লিখেছেন যে মন্ত্রণালয়ের লিফটে, সিঁড়িতে অনেককে দেখেছেন যারা এসেছে মুক্তিযোদ্ধার সনদের জন্য আবেদন করতে। তাদের বয়স ৫০ এর মতো। তাহলে স্বাধীনতার ৪৫ বছর পরে এসে কিভাবে একজন ৫০ বছর বয়স্ক মানুষ মুক্তিযোদ্ধা হতে পারে? সরকারের উচিত ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের শাস্তির আওতায় আনা। মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের দেশের জাতীয় বীর। কতিপয় ভুয়া সনদধারিদের জন্য যেন তাদের সম্পর্কে দেশের তরুণ সমাজের নেতিবাচক ধারণা না জন্মে সেদিকে সরকারকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

বাংলাদেশে বর্তমানে বেকার সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। বিবিএস এর এক হিসেবে প্রতি বছর ২৭ লাখ কর্মক্ষম মানুষ শ্রমবাজারে প্রবেশ করছে। অথচ সরকারি ও বেসরকারি মিলে মাত্র ১ লাখ ৮৯ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হচ্ছে। সরকারি ক্ষেত্রে কোটা সুবিধার প্রচলন থাকায় অনেক মেধাবীরা চাকরি থেকে্ বঞ্চিত হচ্ছে। শুধু তাই নয়, কোটাধারিদের মধ্যে যোগ্য প্রার্থীর অভাব থাকা সত্বেও সাধারণ মেধাবীদের থেকে সেই শূন্যস্থান পূরণ করা হচ্ছে না। ফলে একদিকে যেমন বাড়ছে বেকারত্ব তেমনি ফাঁকা পড়ে থাকে পদ। দেশের বেকারদের একটা বড় অংশ উচ্চশিক্ষিত। ফলে তাদের মধ্যে হতাশা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং তাদের অনেকেই বিপথগামী হচ্ছে। এসব সমস্যা থেকে সমাধানের জন্য সরকারকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। দেশের উন্নয়নে যে তরুণরা অগ্রনী ভূমিকা পালন করে সেই তরুণদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেশকে আরো উন্নত করার পথে এগিয়ে নিতে এখনই সরকারকে সচেতন হতে হবে।

সানবিডি/ঢাকা/আহো