যেকোন বিপদে ডায়াল করুন ‘৯৯৯’ নম্বরে
প্রকাশ: ২০১৭-০৪-০৬ ১৪:০৫:৪১
‘৯৯৯’। তিন ডিজিটের একটি ইমার্জেন্সি ফোন নম্বর। বিদেশে নয়, নম্বরটি বাংলাদেশ সরকারের ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি সার্ভিসের। যে কোন বিপদে এই নম্বরটি হয়ে উঠতে পারে আপনার সবচেয়ে কাছের বন্ধু। এরই মধ্যে অনেকের কাছে সময়ে-অসময়ে বিপদের সহায় হয়ে উঠছে ৯৯৯ জরুরি সেবা। আবার অনেকে হয়তো বিষয়টি জানেন না এখনো।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের উদ্যোগে গত বছরের ১ অক্টোবর পরীক্ষামূলকভাবে চালু হওয়া ৯৯৯ কল সেন্টারটি ২৪ ঘণ্টা খোলা থেকে বিপদে মানুষকে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। চলমান গবেষণার মাধ্যমে মানুষের জরুরি সময়ের সেবা নিয়ে আরো একটি উন্নত ৯৯৯ সেবার ডিজাইন করছে আইসিটি ডিভিশন।
গত ২২ ফেব্রুয়ারি রাত ১২টা ২৯ মিনিটে ৯৯৯ হেল্প ডেস্ক নম্বরে ফোন করে সাবিউর রহমান ঢাকার টিকাটুলীর কামরুন্নেছা স্কুলের সামনে গ্যাস পাইপলাইন লিক হয়ে প্রচুর গ্যাস বের হচ্ছে জানিয়ে তাৎক্ষণিক সহযোগিতা চান। কল সেন্টার এজেন্ট নাইমুর নাইম ফোনটি কাছের ফায়ার সার্ভিসে ট্রান্সফার করে দেন। ফায়ার সার্ভিস অফিস বিষয়টি গ্যাস নিয়ন্ত্রণ কক্ষে জানাতে বলে। পরে কলটি তিতাস গ্যাস কন্ট্রোল সেন্টারে ট্রান্সফার করা হয়। সেই রাতে তিতাস গ্যাসের কর্মকর্তারা সাবিউরের ঠিকানা নিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে গ্যাস লিকেজ বন্ধ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেন।
জরুরি মুহূর্তে ৯৯৯-এর মাধ্যমে সেবা পেয়ে সন্তুষ্ট জানিয়ে সাবিউর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশে এমন একটি সেবা পাওয়া যাবে এটা ভাবতেই অবাক লাগছিল। মাত্র আধঘণ্টার মধ্যে তিতাসের লোকজন এসে গ্যাসের লিকেজ বন্ধ করেন। এজন্য কোনো টাকা-পয়সা খরচ হয়নি। ’
৯৯৯-এর কল সেন্টার এজেন্ট রানী আক্তারকে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি দুপুর ১টা ৫০ মিনিটে ঢাকার উত্তরা ৭ নম্বর সেক্টর থেকে ফোন করে এক নারী জানান, তার স্বামী তাকে প্রায়ই শারীরিক নির্যাতন করে। আজ কিছুক্ষণ আগে তাকে এবং তার তিন বছরের বাচ্চাকে মারধর করে একটি ঘরে আটকে রেখেছে। তিনি পুলিশের সহায়তা চান। কল সেন্টার এজেন্ট তার অভিযোগটি উত্তরা পশ্চিম থানায় ট্রান্সফার করলে কর্তব্যরত অফিসার ফোর্স পাঠাচ্ছেন বলে আশ্বস্ত করেন। ঘণ্টাখানেক পর ওই বাসা থেকে পুলিশ তাদের উদ্ধার করে। তিনি বলেন, ‘পুলিশের সহায়তায় তাৎক্ষণিক নির্যাতনের হাত থেকে মুক্তি পেয়েছি। তবে সংসারে শান্তি ফেরেনি। এখন আমি ঢাকায় আমার বাবা-মায়ের বাসায় বসবাস করছি। সন্তান ছোট থাকায় এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি। ’
‘ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি সার্ভিস’ নামে চালু হওয়া এই পাইলট প্রকল্পটি থেকে নাগরিকরা তাৎক্ষণিক প্রয়োজনে ২৪ ঘণ্টা ‘৯৯৯’ নম্বরে ফোন করে সহায়তা পাচ্ছে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, বাংলাদেশ পুলিশের সঙ্গে অংশীদারির ভিত্তিতে পরিচালিত ৯৯৯ জরুরি সেবা হচ্ছে সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ পরিচালিত একটি উদ্যোগ, যেখানে দেশের যে কেউ জরুরি প্রয়োজনে ফায়ার সার্ভিস, পুলিশি সাহায্য, অ্যাম্বুলেন্স সহায়তা পেতে পারে। যেকোনো মোবাইল নম্বর থেকে সম্পূর্ণ টোল ফ্রি কল করে এজেন্টের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট সরকারি বিভাগের কাছ থেকে এই সেবা পাওয়া যাচ্ছে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহেমদ পলক বলেন, ‘জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দিতে সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন করছে। এরই অংশ হিসেবে সরকারিভাবে নাগরিকদের জরুরি প্রয়োজনে ৯৯৯ সেবা চালু করা হয়েছে। স্বল্প সময়ের মধ্যে যে পরিমাণ সাড়া পেয়েছি তাতে আমরা অভিভূত। ’
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ সূত্র জানায়, গত বছরের ১ অক্টোবর থেকে চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১৬ লাখ ৮৪ হাজার ৭৪৬ জন ৯৯৯ জরুরি সেবা নম্বরে ফোন করেছে। এর মধ্যে সাত লাখ ৬১ হাজার ৬০৫টি জরুরি ও অন্যান্য সেবা নিয়েছে। এর মধ্যে ফায়ার সার্ভিস-সংক্রান্ত সহায়তার পরিমাণ ছিল ৩০ শতাংশ, পুলিশ সহায়তার পরিমাণ ছিল ৬৩ শতাংশ এবং অ্যাম্বুল্যান্স সহায়তার পরিমাণ ছিল ৬ শতাংশ। এছাড়া গ্যাস সমস্যাজনিত অভিযোগের পরিমাণ ছিল ১ শতাংশ। এরই মধ্যে ৯৯৯ জরুরি সেবার মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ৪৬ হাজার ৪৭৩ বার ডাউনলোড হয়েছে। চ্যাট করেছে ৯৬ হাজার ২৬৬ জন।
জুনাইদ আহেমদ পলক বলেন, এই সেবায় নিত্যনতুন বিষয় সংযোজন করা হচ্ছে। এমনকি এই সেবায় প্রতিবন্ধীদেরও সম্পৃক্ত করতে ৯৯৯ অ্যাপে বাংলায় ভয়েস সুবিধা চালুর পাশাপাশি চ্যাট বট চালু করা হয়েছে। সেবাটি দেশব্যাপী ছড়িয়ে দিতে প্রয়োজনীয় আইনকানুন সংশোধন এবং পৃথক নীতিমালা তৈরির পরিকল্পনাও সরকারের রয়েছে।
তথ্য-প্রযুক্তি বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে এই কল সেন্টারে মোট ৮৬ জনের একটি দল কাজ করছে। প্রতি শিফটে ২৫ জনের দক্ষ ইমার্জেন্সি কল টেকার কাজ করেন। তবে কলের চাপ সামাল দিতে কল সেন্টারের সম্প্রসারণ প্রয়োজন। সারা দেশের সব থানা, ফায়ার সার্ভিস, অ্যাম্বুলেন্সকে একটি প্রযুক্তিগত নেটওয়ার্কের আওতায় নিয়ে এসে ৯৯৯-এর সঙ্গে যুক্ত করার কাজ চলছে। এ ছাড়া ভবিষ্যতে কেন্দ্রীয়ভাবে মনিটরিং সিস্টেম চালু করা হবে, যাতে একসঙ্গে সব অভিযোগ তদারকি এবং যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া যায়। সৌজন্য: কালেরকণ্ঠ।