স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দিতে গিয়ে ওসির সঙ্গে সম্পর্ক

প্রকাশ: ২০১৭-০৪-০৬ ১৭:২০:৩৬


Mituতিনি থানায় গিয়েছিলেন প্রথম স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দিতে। আর তাতে পরিচয় হয় ওসি হাসানের সঙ্গে। এরপর পরিচয়ের গভীরতা বাড়তে থাকে দিন দিন। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে চলে অবাধ মেলামেশা। তারপর বিয়ে। কিছুদিন সংসার করতে না করতে আবার তালাক।

বগুড়ার গাবতলী থানার ওসি আবদুল্লাহ আল হাসানের আত্মহত্যার প্ররোচনা মামলায় তার দ্বিতীয় স্ত্রী রুমানা আক্তার মিতু সম্পর্কে এমনই নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে তার প্রতিবেশীরা।

ওসি আবদুল্লাহ আল হাসানের আত্মহত্যার প্ররোচনা মামলায় মিতুকে পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে বুধবার আদালতে হাজির করে আরো পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। আদালত আগামী রোববার রিমান্ড শুনানির দিন ধার্য করে মিতুকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

কে এই মিতু
পাবনার স্থানীয় বাসিন্দা ও সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাবেক সেনাসদস্য মোকছেদ আলীর মেয়ে মিতুর সঙ্গে ২০১১ সালের ২৩ ডিসেম্বর সিঙ্গাপুর প্রবাসী মোনায়েম হোসেন সাগর নামের এক যুবকের বিয়ে হয় পারিবারিকভাবে। তখন মিতু পাবনা এডওয়ার্ড কলেজে হিসাববিজ্ঞানে অনার্সে পড়ছিলেন। বিয়ের এক বছর পর মিতু স্বামীর সঙ্গে সিঙ্গাপুরে চলে যান। কয়েক মাস পর আবার দেশে ফিরে আসেন তিনি।  অবস্থান করেন স্বামীর পাবনার সুজানগরের বাসায়।

২০১৩ সালের ১৪ মার্চ তার একটি ছেলেসন্তান জন্ম নেয়। সন্তান ও তার হাতখরচের টাকা ঠিকমতো না দেয়ার অভিযোগে মিতু সুজানগর থানায় স্বামী সাগরের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দাখিল করেন। এ-সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে যোগাযোগের সময় পরিচয় ও পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে ওঠে পাবনা সদর থানার তৎকালীন ওসি আবদুল্লাহ আল হাসানের সঙ্গে। ২০১৬ সালের ৩০ মার্চ মিতু তার স্বামীকে একতরফা তালাক দেন। এর কয়েক মাস পর ৩ জুলাই ৬ লাখ টাকা দেনমোহরে ওসি হাসানের সঙ্গে বিয়ে হয় মিতুর। এটি ওসি হাসানেরও দ্বিতীয় বিয়ে।

এই বিয়ের কথা পরে ওসি হাসানের প্রথম স্ত্রী সুলতানা রাজিয়া জানতে পারেন। তিনি এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে রাজশাহীতে থাকেন। মিতুর সঙ্গে বিয়ের পর ওসি হাসান পাবনা থেকে জয়পুরহাট ও পরে বগুড়ার গাবতলী থানায় বদলি হয়ে আসেন। এই সময়ে তাদের মধ্যেও সম্পর্কের অবনতি হয়। চলতি বছরের ১৭ জানুয়ারি হাসান মিতুকে নোটারি পাবলিকে অ্যাফিডেভিটের মাধ্যমে ২০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের মাধ্যমে তালাক দেন।

এর পরও মিতু আরো টাকার জন্য হাসানকে চাপ দিতেন। এতে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন তিনি। মিতু গত ১১ মার্চ বগুড়ায় এলে হাসান তাকে কিছু টাকা-পয়সা দিয়ে বিদায় করেন। হাসানের প্রথম স্ত্রী বগুড়ায় একেবারে চলে আসার কথা জানতে পেরে মিতু হাসানকে জানা, তিনিও ২৯ মার্চ বগুড়ায় আসবেন। সেদিনই পুলিশের কোয়ার্টারে গলায় দড়ির ফাঁস দিয়ে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আত্মহত্যা করেন হাসান।

ঘটনার দিন হাসানের প্রথম স্ত্রী সুলতানা রাজিয়া দুই সন্তানকে নিয়ে রাজশাহী থেকে গাবতলীর উদ্দেশে রওনা দেন। সকাল ১০টার দিকে নাটোরের সিংড়ায় আসার পর হাসানের সঙ্গে তার মোবাইল ফোনে শেষ কথা হয়। এরপর হাসানের ফোন বন্ধ পাওয়া গেলে গাবতলী থানায় যোগাযোগ করে তিনি জানতে পারেন তার স্বামীর আত্মহত্যার কথা।

পরে ওসি হাসানের প্রথম স্ত্রী সুলতানা রাজিয়া বাদী হয়ে ২৯ মার্চ আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলাটি করেন। এ মামলায় গাবতলী থানার পুলিশ পরদিন পাবনা জেলা পুলিশের সহযোগিতায় মিতুর বাবা ও তাকে তাদের ভাড়া বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে।

আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পরদিন বগুড়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শরিফুল ইসলামের আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডের প্রার্থনা করলে আদালত শুধু মিতুর পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।