তিস্তার পানি আসবেই: প্রধানমন্ত্রী
প্রকাশ: ২০১৭-০৪-১২ ১২:৪৩:৪৭
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের দেশ নিচের দিকে। তাই তিস্তা দিয়ে পানি আসবেই। কেউ তা আটকে রাখতে পারবে না। তিস্তা প্রসঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আমাকে বলেছেন, তার সরকার ও আমাদের সরকার ক্ষমতায় থাকতেই তিস্তা চুক্তি হবে। শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও স্বার্থ রক্ষা আমরা করতে জানি। আমার জীবন থাকতে দেশের স্বার্থবিরোধী কোন কিছুই হতে দেইনি, হতে দেবোও না। শেখ হাসিনা কখনো দেশ বেঁচে না; বরং যারা রাজনীতিতে উড়ে এসে জুড়ে বসেছে তারাই দেশ বেঁচে।’
‘আরো ৫ বছর ক্ষমতায় থাকতেই শেখ হাসিনা ভারতের কাছে দেশ বিক্রি করেছেন’ মর্মে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বক্তব্যের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি নেত্রীকে ধন্যবাদ। আরো ৫ বছর সময় পাওয়া গেল। উনি ধরেই নিয়েছেন আমরা আরো ৫ বছর ক্ষমতায় থাকবো। আসলে যারা যেভাবে ক্ষমতায় আসে তারা সেভাবেই কথা বলে।’
গতকাল মঙ্গলবার বিকালে গণভবনে এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। নিজের সদ্যসমাপ্ত ভারত সফরের অভিজ্ঞতা জানাতে ডাকা এই সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যের পর প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।
শেখ হাসিনা বলেন, মাটি ও মানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলনের মধ্য দিয়েই আওয়ামী লীগের জন্ম। আর বিএনপির জন্ম বন্দুকের নল দিয়ে সংবিধান লঙ্ঘন করে অবৈধ ক্ষমতা দখলের মাধ্যমে। তিনি বলেন, ‘ক্ষমতার জন্য আমরা রাজনীতি করি না। দেশ ও জনগণের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছি।’ ভারত সফরের তৃপ্তি-অতৃপ্তি নিয়ে করা প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারত সফর অত্যন্ত সফল হয়েছে। বাংলাদেশ আয়তনে ছোট হলেও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আমরা সমান। সেই সম্মান ভারত আমাদের দিয়েছে। কোন অতৃপ্তির জায়গা নেই। বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশী দেশ হিসেবে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বিশেষ তাত্পর্যপূর্ণ এবং বর্তমানে তা বিশেষ উচ্চতায় উন্নীত হয়েছে। এই সফরে দুই দেশের পারস্পরিক সহযোগিতা, বিশ্বস্ততা, বন্ধুত্বের বহুমুখি সম্পর্ক আরো সুসংহত হয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সফরকালে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি কথা দিয়েছিলেন পানি দিবেন। কিন্তু দিদিমনি আমাদের খালি হাতে ফেরাননি। পানির বদলে বিদ্যুত্ দিয়েছেন। এবার দেখি মমতা কত বিদ্যুত্ দেন। আমরা সেই বিদ্যুত্ কিনে নেব। শেখ হাসিনা বলেন, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী অন্য ৫টি নদীর কথা বলেছেন। আমি তাকে পাল্টা প্রস্তাব দিয়েছি ওই ৫টি নদীর পানি তিস্তাতে এনে আমাদের পানি দিন।
তিস্তা নিয়ে অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর দীর্ঘ ২১টি বছর জিয়াউর রহমন-এইচএম এরশাদ-খালেদা জিয়ারা ক্ষমতায় ছিলেন। ক্ষমতায় থাকতে তারা স্থল সীমানা নির্ধারণ, গঙ্গার পানি চুক্তি ও সমুদ্রসীমায় হিস্যা আদায়ে ভারতের কাছে কোন কথা বলতে সাহস পায়নি কেন? কেন কোন সমস্যার সমাধান করেননি? দেশের জনগণের কাছে এর জবাব একদিন তাদের দিতে হবে। শেখ হাসিনা বলেন, পৃথিবীর বহু দেশে ছিটমহল নিয়ে যুদ্ধ বেঁধে আছে। কিন্তু আমরা আনন্দঘন পরিবেশে দু’দেশ ছিটমহল বিনিময় করেছি, যা নিয়ে কোথাও কিছু হয়নি। শান্তিপূর্ণভাবে ছিটমহল বিনিময় করে বাংলাদেশ সারাবিশ্বে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। এছাড়া ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অটুট রেখেও আন্তর্জাতিক আদালতে মামলার মাধ্যমে আমরা সমুদ্রসীমা অর্জন করেছি। ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়’—বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত এ পথেই সবার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখেই আমরা সমস্যাগুলো সমাধান করে যাচ্ছি। এটাই আমাদের কূটনৈতিক সাফল্য।
ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত ১৪টি এমওইউ ও ১১টি চুক্তি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চুক্তি নিয়ে আমাদের কোন লুকোচুরি বা রাখঢাক নেই। দেশের স্বার্থ বজায় রেখেই আমরা সবকিছু করেছি। এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় গঙ্গা ব্যারেজ নির্মাণের যে সমীক্ষা ও নকশা করেছে সেটা সম্পূর্ণ ভুল। আমি তা নাকচ করে দিয়েছি। এই নকশা অনুযায়ী গঙ্গা ব্যারেজ হলে তা আমাদের জন্য হবে আত্মঘাতী। যেমনটি হয়েছে তিস্তা ব্যারেজের ক্ষেত্রে। তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে আমরা ক্ষমতায় আসার পর যখন ভারতের সঙ্গে গঙ্গার পানি চুক্তি করি, তখনই আমি বলেছিলাম আমরা গঙ্গা ব্যারেজ নামে একটা ব্যারেজ করবো। সেই ব্যারেজ হবে ভারত ও বাংলাদেশ যৌথ উদ্যোগে। এমনভাবে এটা তৈরি করা হবে যেন দুটি দেশের মানুষ এটা ব্যবহার করতে পারে।
দিল্লি সফরকালে মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে তার বৈঠকের বিষয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি তো পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে বলেছি, আপনি জায়গা দেখেন, আমরাও জায়গা দেখি। তিনি বলেন, আমাদের শাখা নদী ও দুই দেশ মিলে ওয়াটার রিজার্ভার হিসেবে ব্যারেজ তৈরি করি। যাতে বর্ষা মৌসুমে পানি সংরক্ষণ করে রেখে শুস্ক মৌসুমে তা ব্যবহার করতে পারি। আর এটা করাই হবে যুক্তিযুক্ত। তিনি বলেন, ব্যারেজ বা রিজার্ভার যাই হোক তা ভারতের সঙ্গে যৌথভাবে করতে হবে। এর খরচও উভয় দেশ বহন করবে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী বিমানবন্দরে আসবেন তা আমি আগে থেকে জানতাম না। তাকে বহনকারী বিমান নয়াদিল্লির পালাম ঘাঁটিতে অবতরণের পর তিনি বিষয়টি জানতে পারেন। তিনি বলেন, ‘সত্যি বলতে কি, এতে আমি আশ্চর্য হই।’