রামপালে এক্সিম ব্যাংকের অর্থায়ন আমানতের খেয়ানত

প্রকাশ: ২০১৭-০৪-১৯ ১৮:১৫:৫০


rampalসুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক সুলতানা কামাল বলেছেন, ভারতের এক্সিম ব্যাংক কোনো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্পে অর্থায়ন করছে। এই টাকা তারা নিজেদের পকেট থেকে দিচ্ছে না, এই অর্থ সেই দেশে জনগণের আমানতের টাকা। আর এ অর্থ দিয়ে সুন্দরবন ধ্বংস করা হচ্ছে। এটা আমানতের খেয়ানত।

রামপাল প্রকল্প বিষয়ে ভারতের এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশের যে চুক্তি তা নিয়ে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ মতামত তুলে ধরতে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির মিলনায়তনে আজ বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটি। সেখানেই সুলতানা কামাল এসব কথা বলেন।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এই উপদেষ্টা বলেন, রামপাল নিয়ে সরকার দেশে-বিদেশে অসত্য তথ্য দিয়ে যাচ্ছে। এবং ভারতের এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে যে চুক্তি হয়েছে, সে বিষয়ে কোনো তথ্য দিচ্ছে না। সরকারের কথা শুনে মনে হচ্ছে তারা আমাদের শরীরে বিষ ঢোকাবে এবং সেই বিষ যাতে আমাদের ক্ষতি না করে সেই ব্যবস্থাও করবে।

সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ভারতীয় বংশোদ্ভূত জ্বালানি ও কয়লা বিশেষজ্ঞ রণজিৎ সাহু স্কাইপে যুক্ত হন। তিনি ৫০টি কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পে তার কাজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে পরিবেশের কোনো ক্ষতি হবে না—এ কথা যারা বলে তারা ভুল বলে। রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে পরিবেশ সুরক্ষা বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা আইএফসি ও ডব্লিউএইচও-র যে নীতিমালা আছে তা-ও মানা হচ্ছে না। রামপাল প্রকল্পের দূষণ নিয়ন্ত্রণে যেসব যন্ত্র ও প্রযুক্তি ব্যবহৃত হবে তা বিশ্লেষণ করে দেখা যায় তা একটি নিম্নমানের প্রকল্প হতে যাচ্ছে। ভারত তার নিজ দেশেও এর চেয়ে উন্নতমানের কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণ করছে। কিন্তু সুন্দরবনের মতো সংবেদনশীল জায়গার পাশে এ ধরনের কোনো প্রকল্পের অনুমোদন দিচ্ছে না।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক বদরুল ইমাম রামপাল প্রকল্প বিষয়ে বিশ্বের সাতজন খ্যাতনামা বিশেষজ্ঞের মূল্যায়ন ও গবেষণার সার সংক্ষেপ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, রামপালের কারণে সুন্দরবনের যে ক্ষতি হবে তা সরকারের কাছে বিভিন্ন সময় তুলে ধো হয়েছে। সরকার বলছে এটা বিজ্ঞানসম্মত নয়। ইউনেসকোর বিশেজ্ঞরা একই মতামত তুলে ধরেছে। সরকার সেটাকেও বিজ্ঞানসম্মত নয় বলে উড়িয়ে দিয়েছে। কোথায় বিজ্ঞানসম্মত নয় তা নিয়ে কোনো যুক্তিতর্ক নেই। বিশ্বের খ্যাতনামা ১০ জন বিশেষজ্ঞ এ রামপাল প্রকল্পের সমস্ত নথি পর্যালোচনা করে দেখেছেন এর মাধ্যম সুন্দরবনের ক্ষতি হবে। এতগুলো স্তরের বিজ্ঞানীদের মতামত জানান পরও সরকার যদি বিজ্ঞান না বুঝে তাহলে বিজ্ঞান কী সেটা আমাদের বোঝাতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, এ প্রকল্পে বিদ্যুতের প্রতি ইউনিটের যে দাম ধরা হয়ে তা প্রকল্প শেষ হওয়ার পর তিনগুন হবে। ফলে সুন্দরবন ধ্বংস করে বেশি দামে আমাদের বিদ্যুৎ কিনতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় কমিটির সদস্যসচিব আবদুল মতিন ও সদস্য শরিফ জামিল।