আমরা চিনলাম না, চিনলো বিশ্ব

আপডেট: ২০১৭-০৪-২৭ ২০:৫৮:১৯


Kashim Bin Abubakarআমরা একটা কথা সবাই জানি, “যে দেশে গুণীদের কদর নেই, সে দেশে গুণীর জন্ম হয় না”। আসলেই আমরা যদি সম্মানী ব্যক্তিদের সম্মান দিতে না পারি, তাহলে আমাদের দেশে সম্মানী ব্যক্তিদের জন্ম হবে না। আমরা নিজেরা নিজেদের প্রগতিশীল মনে করলেও আসলে আমাদের গতি একটা জায়গায় এসে থেমে যায়। তা হল আমরা অন্যের গতিকে সহ্য করতে পারি না। যদি অন্যের গতি সহ্যই করতে না পারি তাহলে আমরা কেমন প্রগতিশীল?

আবার আমরা অনেকই নিজে খুব মুক্তমনা বলে দাবি করি। আসলে কখনো কি ভেবে দেখেছি আসলেই আমরা কি মক্ত মনের অধিকারী। যদি মুক্ত মনের অধিকারী হই তাহলে অন্যে মত প্রকাশ আমাকে উত্তেজিত করতো না। মূল প্রগতিশীল সেই যে অন্যের গতিকে সামনে এগিয়ে নেয়ার জন্য তাকে  উৎসাহ দেয়। মুক্তমনাতো সেই যে অন্যের মন্তব্য বা মতকে সম্মান দেখায়। যেদিন আমরা এটা দেখাতে পাবরো সেদিন আমরা উন্নত ও সভ্য জাতি হিসেবে নিজেকে পরিচয় নিতে পারবো।

আজ একজন লেখকের কথা বিশ্ব মিডিয়ায় ব্যপক আলোচিত। তিনি একজন লেখক যে নিবরে লিখে গেছেন তার লেখা। আমরা হয়তো তাকে মূল্যায়ন করতে পারিনি। বিশ্ব গণমাধ্যম তাকে ঠিকই সম্মান জানাতে পেরেছে। এটা কি আমাদের ব্যর্থতা নয়। সে মোল্লা না মুন্সি সেটা বড় কথা নয়, সে আমার দেশের সাহিত্যের ভুবনের একটা সম্পদ। তাকে যথাযথ মূল্যায়ন আমাদের করতে হবে।

আমরা এমন একটা জাতি যারা তাদের নেতাদের সমালোচনার পাত্র বানিয়ে রেখেছি। আমরা আজও বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সম্মান দেখাতে পারি না। তাকে নিয়ে রাজনৈতিক কাদা ছোরা-ছুরি করি। আমরা সম্মান দেখাতে পারি না জিয়াউর রহমানের প্রতি। তারা আমাদের স্বাধীনতা জন্য যে ত্যাগ স্বীকার করেছেন তা আর দ্বিতীয় বার কেউ করতে পারবে না। আমরা যখন এই জাতীয় নেতাদের দলমত নির্বিশেষ সম্মান ও ভালবাসতে পারবো সেদিন আমরা দেশের অগ্রতি দূর্বার গতিতে এগিয়ে নিতে পারবো।

গতকাল ব্রিটেনের প্রভাবশালী দৈনিক মিরর, বার্তা সংস্থা এএফপি, ভারতের টাইমসনাওসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় তাকে নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে বাংলাদেশের মেইন স্ট্রিম পত্রিকাগুলো তাকে সেভাবে তুলে না আনলেও সাধারণ পাঠকরা তার বই একচেটিয়া কিনে থাকে। শুধু বাংলাদেশ নয় পশ্চিমবঙ্গেও তার বইয়ের ব্যাপক বাজার রয়েছে।

অনেকের দাবি, কাসেম বিন আবুবাকার বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ঔপন্যাসিক। তবে বাংলাদেশের মূলধারার গণমাধ্যমে বরাবরই আলোচনার বাইরে ছিলেন কাসেম বিন আবুবাকার। ঔপন্যাসিক হিসেবেও সাহিত্য সমাজে ‘স্বীকৃতি ও সমাদর’ পাননি তিনি। কিন্তু আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা এএফপি কাসেম বিন আবুবাকারকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশের তোলপাড় শুরু হয়েছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের আগ্রহের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছেন তিনি। যুক্তরাজ্যের শীর্ষ সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইল, মার্কিন সংবাদমাধ্যম ইয়াহু নিউজ, মধ্যপ্রাচ্যের আরব নিউজ, মালয়েশিয়ার দ্যা স্টার ও মালয়মেইল, পাকিস্তানের দ্য ডন, ফ্রান্সের ফ্রান্স টুয়েন্টি ফোর ও রেডিও ফ্রান্স ইন্টারন্যাশনাল, হাঙ্গেরির হাঙ্গেরি টুডেসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ফলাও করে কাসেমকে নিয়ে ওই প্রতিবেদন ছেপেছে।

এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কাসেম বিন আবুবাকার ১৯৭০ দশকের শেষের দিকে একজন বই বিক্রেতা হিসেবে প্রায় সব উপন্যাসের মধ্যে শুধু শহুরে অভিজাতদের জীবনযাত্রার কথা দেখতে পেয়ে নিজেই হাতে কলম তুলে নেন। এরপর ১৯৭৮ সালে কাসেম তার প্রথম উপন্যাস ‘ফুটন্ত গোলাপ’ লেখেন। তবে ‘মোল্লার উপন্যাস বিক্রি হবে না’ বলে এটি প্রকাশকের নজর কারতে প্রায় এক দশক সময় লাগে। ওই প্রকাশকের কাছে মাত্র এক হাজার টাকায় এটির সত্বও বিক্রিও করে দেন তিনি। এরপর ইসলামী মূল্যবোধকে সামনে রেখে কাসেমের লেখা একের পর এক প্রেমের উপন্যাস প্রকাশিত হতে থাকে। এসব উপন্যাস দ্রুতই তুমুল জনপ্রিয়তা অর্জন করে। লাখ লাখ পাঠকের হাতে হাতে ঘুরতে থাকে তার উপন্যাস।

এএফপিকে বাংলাদেশের সাংবাদিক কদরুদ্দিন শিশির বলেছেন, কাসেম বিন আবুবাকার এমন এক নতুন পাঠকগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছেছেন, তার আগে যাদের অস্তিত্বের কথা কেউ ভাবেইনি। তিনি আরও বলেন, গ্রাম এলাকায় তরুণ প্রেমিকরা তাদের প্রেমিকাকে সেরা উপহার হিসেবে কাসেমের উপন্যাস দিয়ে থাকে। কাসেমের উপন্যাস মাদ্রাসা বা ধর্মীয় আবাসিক স্কুলের ছাত্রদের কাছে তুমুল জনপ্রিয় হওয়ার একটি ব্যাখ্যা এএফপির কাছে তুলে ধরেন সৈয়দ মাজহারুল পারভেজ। তিনি বলেন, তারা কাসেমের গল্পের সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ত করতে পারে। আর এসবের কাহিনী বিন্যাস এবং ভাষাও তাদের কাছে আরামদায়ক মনে হয় বলে পারভেজের মত।

এএফপি বলছে, স্যেকুলার লেখকরা এমন এক দুনিয়ার গল্প বলেছে, যেখান থেকে বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের প্রধান অংশের গ্রামীণ ও ধর্মীয় জীবনের অস্তিত্ব মুছে ফেলা হয়েছে। কাসেম এই শূন্যতার বিষয়টি অনুধাবন করে তার উপন্যাসের বাজার গড়ে তুলেছেন।

এছাড়া কাসেমের এ প্রচেষ্টা থেকে নতুন প্রজন্মের অনেক বাংলাদেশী লেখক অনুপ্রাণিত হয়ে সমকালীন ‘ইসলামী উপন্যাস’ লিখে সাফল্যের পথ খুঁজে পেয়েছেন। এদের মধ্যে আবদুস সালাম মিতুল, কাউসার আহমেদ এবং আবদুল আলিমের মতো লেখক উল্লেখযোগ্য। (সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন)

কাশেম বিন আবু বকের উল্লেখিত উপন্যাস হল ফুটন্ত গোলাপ, বিদায় বেলা, কেউ ভোলে, কেউ ভোলে না, শরিফা, প্রতিবেশিনী, প্রতিক্ষা, বোরখা পরা সেই মেয়েটি।

বাংলাদেশের এক প্রবীন আইনজীবী রফিকুল হক বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট দেখে বলেছিলেন, আমরা কত বড় বেকুবের দেশে আছি, যেখানে গুনীদের সম্মান দিতে জানি না। গুণী জনকে সম্মান দিলে সম্মান কমে না, বাড়ে। (সূত্র: প্রথম আলো)

এ দেশে দল বা মতের কারণে অনেক মেধা অঙ্কুরে ধ্বংশ হয়ে যায়। আবার অনেকেই এদেশে মূল্যায়ন না পেয়ে বিদেশি সেলিব্রেটি হয়েছেন। আমরা আমাদের মেধাবীদের সম্মান দিতে শিখিনি। চাকরির ক্ষেত্রে এখন যারা পিছনের দিক থেকে প্রথম হয় তাদের চাকরিতে নিয়োগ দেয়া হয়। রাজনীতি তারা প্রথম সারির নেতা যারা দূর্নীতিবাজ।

আমরা সবাই যদি মেধার কদর করি, মেধাবীদের মূল্যয়ন করি, গুনীজনকে সম্মান করি তাহলে দেশ হবে সুখি-সমৃদ্ধ। জাতি পাবে মেধাবী ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, সাহিত্যিক-সাংবাদিক, উপন্যাসিক, বুদ্ধিজীবী। সব জায়গায় থাকবে মেধাবীরা।

সানবিডি/ঢাকা/এসএস