ব্রি-২৮ ধানে ব্লাস্ট রোগের মহামারি
প্রকাশ: ২০১৭-০৫-০৩ ১৯:২০:০৮
রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) উদ্ভিদ রোগতত্ত¦ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আবু নোমান ফারুক আহম্মেদ আজ বুধবার জানান, দেশের বিভিন্ন এলাকায় ধানের ব্লাস্ট রোগ মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে।
গত ১৫-১৮ই এপ্রিল ধানের ব্লাস্ট রোগের নমুনা সংগ্রহ ও মাঠের বাস্তব অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালযের এর ৪ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, যশোর ও খুলনা জেলা পরিদর্শণ করে। ঐ অঞ্চলে ব্লাস্ট রোগে সবচেয়ে বেশী আক্রান্ত হয়েছে ব্রি-২৮ এবং ব্রি-২৯ ধান। ব্রি-২৮ ধানের প্রায় ১৫-২০ শতাংশ এবং ব্রি-২৯ ধানের ১০ শতাংশ আক্রান্ত হয়েছে বলে ধারনা করা হয়েছে। এছাড়াও দেশের উত্তরাঞ্চলের বগুড়া, দিনাজপুর, রংপুরের বিভিন্ন এলাকায় এ রোগের আক্রমণ পরিলক্ষিত হয়েছে।
আবু নোমান ফারুক আহম্মেদ জানান, লিফ ব্লাস্ট, নোড ব্লাস্ট এবং নেক ব্লাস্ট এই তিন ধরনের ব্লাস্ট রোগের মধ্যে নেক ব্লাস্ট ও নোড ব্লাস্ট বেশী ক্ষতিকর। চুৎরপঁষধৎরধ ড়ৎুুধব নামক ছত্রাকের আক্রমনে এই রোগ হয়ে থাকে বলে জানান তিনি। এ বছরে ধানের ব্লাস্ট রোগের মহামারির জন্য ঐ ছত্রাকের অনুকূল আবহাওয়াকে দায়ী করেন। আগাম বৃষ্টিপাত, দিনে অধিক তাপমাত্রা, রাতের নিম্ন তাপমাত্রা, সকালের কুয়াশা ও শিশির এবং অধিক আদ্রতার কারনে ঐ ছত্রাকের প্রকোপ বেড়েছে বলে জানান তিনি। আক্রমণের তীব্রতার কারনে একই উদ্ভিদে লিফ ব্লাস্ট, নোড ব্লাস্ট এবং নেক ব্লাস্টের আক্রমণ হয়েছে। লিফ ব্লাস্টের আক্রমণে পাতায় খাদ্য তৈরি ব্যহত হয়, নোড ব্লাস্টের আক্রমণে উদ্ভিদ মাটি থেকে কোন খাদ্য উপাদান ও পানি শোষণ করতে পারে না এবং নেক ব্লাস্টের আক্রমনে ধানের শীষের গোড়া পঁচে যায়। এ কারনে এ বছর ধানের ফলনের ব্যাপক ক্ষতির আশংকা করা হচ্ছে।
এই রোগ প্রতিরোধে পরামর্শ:
১) বছরে একই ফসলের বারবার চাষ (সড়হড়পঁষঃঁৎব) না করা।
২) শোধিত বীজ ব্যবহার করা।
৩) জমিতে সবসময় পানি ধরে রাখা।
৪) আক্রান্ত ক্ষেত থেকে বীজ সংগ্রহ না করা।
৫) ধান কাটার পর শুকিয়ে নিয়ে নাড়া জমিতেই পুড়িয়ে ফেলা।
৬) অতিরিক্ত পরিমান ইউরিয়া ব্যবহার না করা।
৭) জৈব সার ব্যবহার করা।
৮) পটাশ সার পরিমান মতো ব্যবহার করা।
রোগের প্রতিকারে যা যা করনীয়:
১) কুশি অবস্থায় রোগ দেখা দিলে বিঘা প্রতি প্রায় ৫ কেজি পটাশ সার উপরি প্রয়োগ করে সেঁচ দেওয়া।
২) প্রতি লিটার পানিতে ( টেবুকোনাজল ৫০% + ট্রাইফ্লুক্সিট্রোবিন ২৫%) জাতীয় ছত্রাকনাশক যেমন: নাটিভো ৭৫ ডব্লিউপি ০.৬০ গ্রাম মিশিয়ে বিকেলে স্প্রে করা। অথবা প্রতি লিটার পানিতে ট্রাইসাইকাজল গ্রুপের ছত্রাকনাশক যেমন: ট্রপার ৭৫ ডব্লিউপি বা জিল ৭৫ ডব্লিউপি ০.৮১ গ্রাম বা অন্যান্য নামের এ রোগের জন্য অনুমোদিত ছত্রাকনাশক স্প্রে করা।
এছাড়াও আবু নোমান পারুক আহম্মেদ আগামী বছর ব্রি-২৮ এর পরিবর্তে ব্রি-৫৮, ব্রি-৩২ সহ অন্যান্য ব্লাস্ট প্রতিরোধী জাতের ধান চাষের পরামর্শ দেন। তিনি বলেন আমরা উন্নত গবেষণার জন্য এ রোগের প্যাথোজেন সংগ্রহ করেছি। ব্লাস্ট প্রতিরোধী ধানের জাত উদ্ভাবনে উন্নত গবেষণা দরকার বলে জানান তিনি।
সানবিডি/শেকৃিব/শাদাত/এসএস