অর্থমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি
প্রকাশ: ২০১৭-০৬-২১ ১৩:০০:৩৯
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের পদত্যাগ দাবি করেছেন সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির (জাপা) জ্যেষ্ঠ সংসদ সদস্য জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু। একই সঙ্গে অর্থমন্ত্রীকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন তিনি। গতকাল মঙ্গলবার সংসদে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ দাবি জানান। বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে জাপার আরেক জ্যেষ্ঠ সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘অর্থমন্ত্রী বলেছেন এটা নাকি তার শ্রেষ্ঠ বাজেট। এটা আসলে জনগণের সঙ্গে শ্রেষ্ঠ তামাশা। অর্থমন্ত্রী, আপনার কাছে ক্ষমা চাই, মাপ করবেন—আমরা আর আপনার কাছে বাজেট চাই না।’
‘অর্থমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ক্রিমিনাল চার্জ আনা উচিত’: জিয়াউদ্দিন বাবলু বলেন, ট্যাক্স পেয়ারের দুই হাজার কোটি টাকা উনি (অর্থমন্ত্রী) রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকিং খাতের ঘাটতি পূরণে দিচ্ছেন। মানুষের টাকা দিয়ে লুটপাটের টাকা পূরণ করছেন। এটা কোনো নৈতিকতার মধ্যে পড়ে না। এটা অনৈতিক কাজ। উনি নৈতিকতা ও আইনবিরোধী প্রস্তাব কীভাবে করেন? এর জন্য তো উনাকে (অর্থমন্ত্রীকে) আইনের আওতায় আনতে হবে। অর্থমন্ত্রীকে এজন্য আইনের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে, উনার বিরুদ্ধে ক্রিমিনাল চার্জ আনা উচিত বলে আমি মনে করি।
ব্যাংক খাতে ব্যাপক লুটপাটের অভিযোগ এনে বাবলু বলেন, ব্যাংকগুলোকে ‘অক্সিজেন দিয়ে’ রাখা হয়েছে। ব্যাংকগুলোকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে আসা হয়েছে। খেলাপি ঋণে ব্যাংকগুলো দেউলিয়া হয়ে আছে। এর মধ্যে অবলোপন করা হয়েছে। কার টাকা অবলোপন করছেন? মানুষের টাকা লুট হচ্ছে, বিদেশে পাচার হচ্ছে। এসব নিয়ে অর্থমন্ত্রীর কোনো বক্তব্য নেই। খেলাপি ঋণ আদায় হলে ভ্যাট বাড়ানোর প্রয়োজন হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, লুটপাট কারা করছে? এরা কি আপনাদের চেয়ে, সরকারের চেয়ে শক্তিশালী? কেন তাদের আইনের আওতায় আনবেন না? বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান এখনো ঘুরে বেড়াচ্ছেন। দুদক (দুর্নীতি দমন কমিশন) নাকি তার বিরুদ্ধে কিছু পায়নি। সোনালী, রূপালী, জনতা সব ব্যাংকের করুণ অবস্থা। শেয়ার বাজার লুট হয়েছে, কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়নি।
‘বিচিত্র দেশের বিচিত্র মন্ত্রীর বিচিত্র বাজেট’ মন্তব্য করে অর্থমন্ত্রীর উদ্দেশে জিয়াউদ্দিন বাবলু বলেন, আপনি কি উন্নয়নের মহাসড়কে নাকি দুর্যোগের মহাসড়কে আছেন সেটা বিবেচনার বিষয়। ব্যাংক হিসাবে বাড়তি আবগারি শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ব্যাংক হিসাবে বাড়তি আবগারি শুল্ক ভুল বার্তা দিচ্ছে। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, এ শুল্কের নাম পরিবর্তন করবেন। কানা ছেলের নাম পদ্মলোচন রাখলেও কানা ছেলে ?কানাই থাকে।
চালের দাম বৃদ্ধির সমালোচনা করে বাবলু বলেন, এক বছরে মোটা চালের দা?ম ৪৭ শতাংশ বেড়েছে। মানুষের জীবন ওষ্ঠাগত। মানুষ চাল কিনতে পারছে না। শুধু প্রবৃদ্ধি উন্নয়নের একমাত্র মাপকাঠি নয় বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, অর্থমন্ত্রী মিথ্যার বেসাতি দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন। সুশাসন না থাকলে মানুষ উন্নয়নের সুফল পাবে না।
‘শ্রেষ্ঠ বাজেট নয়, শ্রেষ্ঠ তামাশা’: বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে অর্থমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, আগামী বছর তো ভোট। এটা কি ভোটের বাজেট দিলেন নাকি ভোট নষ্ট করার বাজেট দিলেন? ভোটারদের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করলেন, আর তারপর তাদের কাছে ভোট চান, দেশের মানুষ কি এতই পাগল? তিনি বলেন, অর্থমন্ত্রী বলেছেন, এটা তার জীবনের শ্রেষ্ঠ বাজেট। কিন্তু এটা মানুষের কাছে অবিশ্বাস্য মনে হয়েছে। আমার মতে এই বাজেট হচ্ছে ২০১৭ সালে জনগণের জন্য শ্রেষ্ঠ তামাশা। এটা কোনো বাজেট হয়নি। অর্থমন্ত্রীর কাছে আমরা ক্ষমা চাই। আপনার কাছে আমরা আর বাজেট চাই না।
অর্থমন্ত্রীর সমালোচনা করে তিনি বলেন, ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে আর অর্থমন্ত্রী তাদের প্রকেটশন দিয়ে যাচ্ছেন। উনাদের তিনি কেন প্রটেকশন দিচ্ছেন? অর্থমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ব্যাংক খাতের লুটপাটের সঙ্গে কারা জড়িত? আপনার যদি সৎসাহস থাকে সংসদে তাদের নাম প্রকাশ করুন। শেয়ার মার্কেট নিয়ে কেলেঙ্কারির পর ইব্রাহীম খালেদ একটি রিপোর্ট দিয়েছিলেন। তাতে সবই আপনার নিজেদের লোকের নাম এলো। প্রকাশ করলেন না কেন? ব্যবস্থা নিলেন না কেন? একদিন জনগণ কিন্তু ঠিকই ব্যবস্থা নেবে।
ব্যাংকের মালিকরা জনগণকে ঠকিয়ে সেই টাকার অংশ প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে দান করছেন উল্লেখ করে ফিরোজ রশীদ বলেন, ব্যাংকের মালিকরা প্রায়ই প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে মুক্ত হস্তে শত শত কোটি টাকা দান করেন। কিন্তু তারা যে টাকা দিচ্ছেন এটা তো তাদের নয়। এই টাকা জনগণের। এটা অনৈতিক। এটি তদন্ত করতে একটি টিম করা দরকার।