দেশেই এলজিপি-এলডিপি তৈরি করতে যাচ্ছে ওয়ালটন

প্রকাশ: ২০১৭-০৯-১৫ ১৯:২৪:৫৯


Extrusion Line-part-3ধারাবাহিকভাবে টেলিভিশন প্রযুক্তি খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনছে ওয়ালটন। এবার দেশেই তৈরি হতে যাচ্ছে এলজিপি (লাইট গাইড প্লেট) এবং এলডিপি (লাইট ডিফিউজার প্লেট)। এগুলো এলইডি ডিসপ্লের অন্যতম প্রধান উপাদান; ব্যবহৃত হবে এলইডি টেলিভিশন, ডিজিটাল সাইনেজ ও বিজ্ঞাপন বোর্ড এবং এলইডি প্যানেল লাইটসহ গুরুত্বপূর্ণ ভবন নির্মাণ ও অলংকরণে। ফলে টিভিসহ সংশ্লিষ্ট পণ্যের মান বাড়বে, দাম কমবে।
এ দুটি প্রযুক্তি পণ্য রপ্তানিরও প্রস্তুতি নিচ্ছে ওয়ালটন। ইতিমধ্যে বিভিন্ন দেশে এসব পণ্যের স্যাম্পল বা নমুনা পাঠানো হয়েছে। আশা করা হচ্ছে উৎপাদন শুরু হলেই মিলবে রপ্তানি আদেশ। সেইসঙ্গে এগুলোর দেশীয় চাহিদাও মেটাতে সক্ষম হবে ওয়ালটন।
জানা গেছে, এলজিপি-এলডিপি প্লেট এবং শিট তৈরি হয় এক্সট্রুশন প্রক্রিয়ায়, বহুবিধ ধাপে। গত বছর জার্মানি থেকে আনা হয়েছে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির অপটিক্যাল গ্রেড এক্সট্রুশন লাইন। যা স্থাপন করা হয়েছে গাজীপুরের চন্দ্রায় ওয়ালটন মাইক্রো-টেক করপোরেশনে। বসানো হয়েছে অত্যাধুনিক সিএনসি পোলিশিং এবং দ্রুতগতির প্রিন্টিং মেশিন। স্থাপন করা হয়েছে টেস্টিং মেশিনসহ আনুসাঙ্গিক যন্ত্রপাতিও। রাখা হয়েছে উন্নত কাঁচামালের পর্যাপ্ত মজুদ। জার্মানি থেকে এসেছেন অভিজ্ঞ প্রকৌশলী এবং টেকনিশিয়ান। সব রকমের প্রস্তুতি সম্পন্ন। আগামি মাস থেকে দেশেই বিশ্বমানের এলজিপি-এলডিপি উৎপাদনে যাচ্ছে ওয়ালটন।
ওয়ালটনের এলইডি টিভি সোর্সিং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সিনিয়র ডেপুটি ডিরেক্টর তাওসীফ আল মাহমুদ জানান, এলজিপি এবং এলডিপি হলো একধরনের অপটিক্যাল শিট। যা এলইডি টেলিভিশনের মনিটর, ল্যাপটপ, ট্যাব, মোবাইল ফোন ইত্যাদি পণ্যের ডিসপ্লে তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া এলইডি প্যানেল লাইট, ডিজিটাল সাইনবোর্ড, বিজ্ঞাপনী বা তথ্যমূলক বোর্ড এবং ভবন নির্মাণ ও অংলকরণেও এটি ব্যবহৃত হয়।
এলজিপি একধরনের স্বচ্ছ এক্রেলিক শিট। এটি ইএলইডি টেলিভিশনের লাইট গাইড প্লেট হিসেবে কাজ করে। এছাড়া এলজিপি বা এক্রেলিক শিট ব্যবহৃত হয় উন্নতমানের একুরিয়াম এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার সৌন্দর্য বর্ধনে, গ্লাস শিট হিসেবে। আর এলডিপি হলো সাদা রঙের পাতলা পিএস শিট। যা ডিএলইডি টিভির লাইট ডিফিউজার প্লেট হিসেবে কাজ করে। এছাড়া, এলইডি প্যানেল লাইটসহ এর বহুবিধ ব্যবহার রয়েছে।
ওয়ালটন সূত্র আরো জানায়, এক্সট্রুশন সিস্টেম থেকে ঘন্টায় ৫০০ কেজি এলজিপি-এলডিপি শিট তৈরি করা যায়। সিএনসি পোলিশিং ও কাটিং মেশিনে প্রয়োজনমতো সাইজ করে সরাসরি ডিজিটাল বোর্ড এবং এলইডি প্যানেল লাইটে ব্যবহার করা যায়। তবে এলইডি টেলিভিশন, ল্যাপটপ, ট্যাব, মোবাইল ইত্যাদির পর্দায় ব্যবহার করতে হলে এ্যাডভান্স প্রসেসিং করে এলজিপি-এলডিপির গায়ে ডট প্রিন্ট করে নিতে হয়।
ওয়ালটন টেলিভিশন সোর্সিং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের এ্যাডিশনাল ডিরেক্টর মোস্তফা নাহিদ হোসেন বলেন, দেশে উচ্চমানের এলজিপি-এলডিপি তৈরি হলে এলইডি টিভির পিকচার কোয়ালিটি আরো উন্নত হবে। টিভির পর্দা হবে আরো স্লিম কিন্তু টেকসই ও মজবুত। কমে আসবে এলইডি টেলিভিশনের উৎপাদন ব্যয়। ফলে উপকৃত হবেন ক্রেতারা। তারা আরো সাশ্রয়ী মূল্যে উচ্চমানের এলইডি টিভি কিনতে পারবেন।
ওয়ালটনের সোর্সিং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান আশরাফুল আম্বিয়া বলেন, বর্তমানে বিজ্ঞাপনী বা তথ্যমূলক ডিজিটাল বোর্ড এবং এলইডি প্যানেল লাইট তৈরিতে যে এলজিপি-এলডিপি ব্যবহৃত হয়, কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে তা আনতে হয় বিদেশ থেকে। উৎপাদন ব্যয় কমাতে এবং বেশি লাভের আশায় অনেক ব্যবসায়ীই নি¤œমানের এলজিপি-এলডিপি আমদানি করেন। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হন ক্রেতারা। কিন্তু ওয়ালটনের কারখানায় উৎপাদিত এসব পণ্য হবে সর্বোচ্চ মানসম্পন্ন। কারণ ওয়ালটন ব্যবহার করছে বিশ্বখ্যাত জার্মান প্রযুক্তি। তিনি জানান, আগামি মাস থেকেই ওয়ালটনের নিজস্ব কারখানায় উৎপাদন শুরু হবে। প্রাথমিকভাবে প্রতি ঘন্টায় উৎপাদিত হবে ৫০০ কেজি।

উল্লেখ্য, ওয়ালটন মাইক্রো-টেক করপোরেশনে গড়ে তোলা হয়েছে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ টেলিভিশন গবেষণা ও উন্নয়ন বিভাগ। যেখানে প্রযুক্তি নিয়ে নিয়মিত গবেষণা করছেন বাংলাদেশের দক্ষ ও অভিজ্ঞ প্রকৌশলীরা। ইলেকট্রনিক্স, অপটিক্যাল এবং মেকানিক্যাল ডিজাইনিংসহ সকল ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করছে ওয়ালটন। এরই ধারাবাহিকতায় ওয়ালটন স্থাপন করেছে জার্মান প্রযুক্তির এলজিপি-এলডিপি তৈরির মেশিন।
এছাড়াও, টেলিভিশন গবেষণায় ওয়ালটন কাজ করছে কোয়ান্টাম ডট প্লাস প্রযুক্তির আগামী প্রজম্মের স্পেকট্রাকিউ টিভি নিয়ে। এছাড়া বিশ্বের লেটেস্ট প্রযুক্তির জিরো বেজেল ডিসপ্লে’র মতো যুগান্তকারী ধারণা নিয়ে কাজ করছেন ওয়ালটনের গবেষণা ও উন্নয়ন বিভাগের প্রকৌশলীরা। ওই প্রযুক্তির টিভি আগামি বছরই উৎপাদন এবং বাজারজাত করবে ওয়ালটন।