বাংলায় নির্বাচনী আইন, সায় আছে আ.লীগেরও!
প্রকাশ: ২০১৭-০৯-২২ ১৮:৩২:৫৩
নির্বাচন পরিচালনার জন্য সংশ্লিষ্ট আইনগুলো ইংরেজি থেকে বাংলায় করার উদ্যোগ নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। কমিশনের পথনকশায় এটিকে অন্যতম কাজ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ২০০৮ সালে সেই সময়ের নির্বাচন কমিশনও নির্বাচনী আইন বাংলায় করার উদ্যোগ নিয়েছিল। কিন্তু তখন আওয়ামী লীগের বিরোধিতার কারণে সেই উদ্যোগ ভেস্তে যায়। তবে এবার বাংলায় নির্বাচনী আইন করার ব্যাপারে সায় রয়েছে দলটির নেতাদের।
জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনার জন্য বিদ্যমান আইনের নাম ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ আইন বা আরপিও’ ১৯৭২ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতির আদেশে এই আইনটি করা হয়। ইংরেজি ভাষায় করা আইনটি এরপর ১১ বার সংশোধন আনা হলেও এটি আর বাংলায় করা হয়নি। বিগত এ টি এম শামসুল হুদা কমিশন আইনটির বাংলা খসড়াও চূড়ান্ত করেছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সময়ে হওয়া আইনটির একটি ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে এমন যুক্তিতে কমিশনের এই উদ্যোগের বিরোধিতা করে আওয়ামী লীগ। অবশ্য বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল নির্বাচনী আইন বাংলায় করার পক্ষেই ছিল।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান বলেন, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ বাংলায় করলে কোনো সমস্যা দেখি না। এটা বাংলায় করা যেতেই পারে। তবে আরপিওতে কোনো পরিবর্তন আনতে হলে নির্বাচন কমিশনের উচিত বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে কথা বলা। পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও আলোচনা করা। আওয়ামী লীগের এই সাংসদ বলেন, ‘দলীয়ভাবে আমরা এখনো কোনো কিছু জানি না। এ বিষয়ে দলীয়ভাবে আলোচনা করা হবে।’
দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরীও মনে করেন, রাষ্ট্রের সব ক্ষেত্রে বাংলা ভাষা প্রচলন করার চেষ্টা অনেক আগে থেকে করা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ বাংলায় হলে জনগণ বেশি উপকৃত হবে।
আরপিও ও সীমানা পুনর্নির্ধারণ আইন ইংরেজি হওয়ার কারণে বেশির ভাগ মানুষই সেটা বুঝতে পারে না। কিন্তু এই আইনটি বোঝা সব শ্রেণির মানুষের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। এই বিষয়টি প্রাধান্য দিয়ে এবারও বাংলায় করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আইন সংশোধন বিষয়ে কমিশেনর মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা যেসব সুপারিশ পাঠিয়েছিলেন তার মধ্যে নির্বাচনী আইন বাংলায় করার প্রস্তাব রয়েছে। জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ বলেন, কমিশন বেশ কিছু কাজ করছে। এর মধ্যে এটিও আছে। তবে এখন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ হচ্ছে। অংশীজনদের সংলাপের পর কতটা করা যাবে কতটা করা যাবে না সে ব্যাপারে কমিশন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) উদ্যোগে ২০০৮ সালে আরপিও বাংলা করে ভোটার ও প্রার্থীদের মধ্যে বিতরণও করা হয়। সহজ পাঠযোগ্য হওয়ায় ওই সয়ম বিভিন্ন টেলিভিশন বিতর্কে ভোটাররা আইনের বিভিন্ন দিক নিয়ে প্রশ্নও করেন। বিচারপতি এবাদুল হক আইনটি বাংলায় করার ব্যাপারে মূল ভূমিকা পালন করেন।
সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নির্বাচনী সব আইনই বাংলায় থাকা উচিত। এতে সবার কাছে বোধগম্য হয়। ভোটার ও প্রার্থীদের সচেতনতাও বাড়ে। ইংরেজি পড়ে সেটা বোঝা অনেক সময়ই সম্ভব হয় না।