আরও প্রকট হবে বেকার সমস্যা
প্রকাশ: ২০১৭-১০-০৭ ১০:১৪:২৫
কাঙ্ক্ষিত বিনিয়োগ না হওয়ায় নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে না। ফলে বেকারত্ব বাড়ছেই। ভবিষ্যতে এটি দেশের অর্থনীতিতে ভয়াবহ চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে।
সম্প্রতি প্রকাশিত বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
সংস্থাটি বলছে, বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে বেকার সমস্যা সবসময়ই থাকে। কিন্তু নতুন বার্তা হল বাংলাদেশে এই সমস্যা আরও বেড়েছে। দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে তা আরও প্রকট হবে।
দেশের শীর্ষ পর্যায়ের ৮০ ব্যবসায়ীর মতামতের ভিত্তিতে এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে আন্তর্জাতিক এ সংস্থা।
সর্বশেষ হিসাবে দেশে বেকারের সংখ্যা চার কোটি ৬৬ লাখ। কিন্তু আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সংজ্ঞা ব্যবহার করে কৌশলে এ তথ্য গোপন করে সরকারি হিসাবে দেখানো হচ্ছে মাত্র ২৬ লাখ।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সরকারের তথ্য বিভ্রান্তিকর। তাদের মতে, বেকারত্ব নিরসনে সরকারকে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, দেশের অর্থনীতিতে প্রতিষ্ঠিত সত্য হল বিনিয়োগ বাড়েনি। ফলে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হওয়া কঠিন।
তিনি বলেন, বিনিয়োগের সঙ্গে অনেক বিষয় জড়িত। বিশেষ করে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি এবং মাথা পিছু আয় বিনিয়োগের মাধ্যমে নিশ্চিত হয়। ফলে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ ছাড়া অন্য সূচকগুলো বাড়লে, ওই বৃদ্ধির বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়।
মির্জ্জা আজিজুল বলেন, ৮০ শতাংশ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয় বেসরকারি বিনিয়োগের মাধ্যমে। ফলে এই খাতে বিনিয়োগ না বাড়লে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির কথা নয়।
আইএলও’র সংজ্ঞা অনুযায়ী চার সপ্তাহ কাজ খুঁজেছে অথচ পায়নি, কিন্তু আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে কাজ পেতে পারে বা আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যেই বিদ্যমান মজুরিতে কাজ শুরু করবে এমন মানুষ হচ্ছে বেকার।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) দেশের শ্রমশক্তির যে জরিপ করেছে, তা এই সংজ্ঞার ওপর ভিত্তি করেই।
চলতি বছর বেকারত্বের সংখ্যা প্রকাশ করেছে বিবিএস। এর প্রতিবেদনে দেখা গেছে ২০১৩ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত বছরে দেশে মোট কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা ১০ কোটি ৬১ লাখ। এর মধ্যে শ্রমশক্তিতে যোগ হয়েছে ছয় কোটি ২১ লাখ। তার মধ্যে আবার কাজ করছে পাঁচ কোটি ৯৫ লাখ। বেকার রয়েছে ২৬ লাখ।
কিন্তু বিবিএসই বলছে, চার কোটি ৪০ লাখ মানুষ কর্মক্ষম হলেও শ্রমশক্তিতে যোগ হয়নি। অথচ এদের বেকার দেখানো হয়নি।
এ প্রসঙ্গে বিবিএসের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুগান্তরকে বলেন, ‘আইএলও সংজ্ঞা অনুযায়ী এরা বেকারও নয়, আবার কর্মেও যুক্ত নয়। কিন্তু বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় এরাও বেকার।’
খোদ সংস্থাটির নিজস্ব হিসাব থেকেই বোঝা যাচ্ছে এই চার কোটি ৪০ লাখ বেকারের তথ্য গোপন করা হয়েছে। ফলে ২৬ লাখ একেবারেই বেকার যোগ করলে প্রকৃত বেকার সংখ্যা দাঁড়ায় চার কোটি ৬৬ লাখ।
বিবিএসের রিপোর্ট অনুসারে গত দেড় বছরে দেশে ১৪ লাখ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।
জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য যুগান্তরকে বলেন, ২৬ লাখ বেকারের হিসাব বিশ্বাসযোগ্য নয়। এর সংখ্যা আরও অনেক বেশি।
তিনি বলেন, আইএলও বেকারের যে সংজ্ঞা দেয়, সেটি উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশের জন্য প্রযোজ্য নয়। উন্নত দেশের জন্য। কারণ উন্নত দেশে বেকার ভাতা দেয়া হয়। তাই অনেকে ইচ্ছে করেই বেকার থাকে। কিন্তু বাংলাদেশে বেকারের সংখ্যা অনেক বেশি।
দেবপ্রিয়র প্রশ্ন, দেশে বেসরকারি বিনিয়োগ হচ্ছে না। এরপর দেড় বছরে ১৪ লাখ কর্মসংস্থানও হয় কীভাবে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, দেশে ২৬ লাখ বেকার এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। কেননা শ্রমিক পর্যায়ে কিছুটা কাজ থাকলেও মধ্যম পর্যায়ে কাজ কম। অর্থাৎ শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বেশি।
সরকারি হিসাব মতে, দেড় বছরে দেশে ৪০ লাখ জনশক্তি শ্রমবাজারে ছিল। সেখান থেকে ১৪ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। মোট বেকারের ৩৫ শতাংশের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যেখানে দেশে একটি পিয়ন পদের চাকরির জন্য কয়েক হাজার আবেদন জমা পড়ে, সেখানে এ তথ্য ভিত্তিহীন।