৭ ব্যাংককে জরিমানা

প্রকাশ: ২০১৭-১০-০৯ ১০:৪৭:৫০


bbশেয়ারবাজারে নির্ধারিত সীমার অতিরিক্ত বিনিয়োগ অব্যাহত রাখায় সরকারি-বেসরকারি খাতের ৭ ব্যাংককে বড় অঙ্কের জরিমানা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের উচ্চপর্যায়ের সিদ্ধান্তের পর গত বৃহস্পতিবার ব্যাংকগুলোকে জরিমানার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে চিঠি দেওয়া হয়। গতকাল রোববার বেশির ভাগ ব্যাংক এ চিঠি পেয়েছে। একই চিঠিতে ব্যাংকগুলোকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগসীমার মধ্যে না আনলে জরিমানা অব্যাহত রাখা হবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানায়, বেশির ভাগ ব্যাংককেই ১৭ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানার টাকা পত্র দেওয়ার ১৪ দিনের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিসের ‘সাধারণ হিসাব-প্রধান কার্যালয়’ খাতে জমা দিতে বলা হয়েছে। ব্যাংক কোম্পানি আইনের ১০৯ (১১) ধারা অনুযায়ী এ জরিমানা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র শুভংকর সাহা বলেন, সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে তাঁকে এ বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, শেয়ারবাজারের অতিরিক্ত বিনিয়োগ সমন্বয় করতে ২০১৬ সালের ২১ জুলাই ব্যাংকগুলোকে বিশেষ সুযোগ দেওয়া হয়। ওই সময়ে ঋণকে সহযোগী প্রতিষ্ঠানের মূলধনে রূপান্তর করে শেয়ারবাজারে অতিরিক্ত ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের সুযোগ পায় ১৩ ব্যাংক। এসব ব্যাংকের ১ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকার ঋণ হয়ে যায় সহযোগী প্রতিষ্ঠানের মূলধন, ফলে কমে যায় শেয়ারবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ। এতে একদিকে ব্যাংকগুলোর ঋণের চাপ কমে যায়, অন্যদিকে নতুন করে বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি হয়। পাশাপাশি ওই বছরের ২১ জুলাইয়ের মধ্যে ব্যাংক কোম্পানি আইন মানার যে বাধ্যবাধকতা ছিল, তা-ও পরিপালিত হয়।

ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী, শেয়ারবাজারে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ ওই ব্যাংকের আদায়কৃত মূলধন, শেয়ার প্রিমিয়াম, বিধিবদ্ধ সঞ্চিতি ও রিটেইন আর্নিংসের ২৫ শতাংশের বেশি হতে পারবে না। যেসব ব্যাংকের বিনিয়োগ এই সীমার বেশি ছিল, সেসব ব্যাংককে গত বছরের ২১ জুলাইয়ের মধ্যে অতিরিক্ত বিনিয়োগ সমন্বয় করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। তবে ১৩ ব্যাংকের বিনিয়োগ আইনি সীমার ওপরে থাকায় তাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠানের ঋণ ও ব্যাংকের শেয়ার সহযোগী প্রতিষ্ঠানের মূলধনে রূপান্তর করে বিনিয়োগ সমন্বয়ের সুযোগ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই সময়ে সুযোগ পাওয়া ব্যাংকগুলো হলো এবি, আইএফআইসি, জনতা, মিউচুয়াল ট্রাস্ট, ন্যাশনাল, ওয়ান, পূবালী, সাউথইস্ট, শাহজালাল ইসলামী, দ্য সিটি, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ও প্রিমিয়ার।

এরপরও কয়েকটি ব্যাংক আইন লঙ্ঘন করে বিনিয়োগ অব্যাহত রাখে। এ কারণেই গতকাল ৭ ব্যাংককে জরিমানা করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তে আরও বেরিয়ে এসেছে, জরিমানা করা ৭ ব্যাংকের বাইরে আরও ৮ ব্যাংক একইভাবে সীমার ওপরে বিনিয়োগ করেছে। তাদেরও শিগগির জরিমানার আওতায় আনা হবে। এ ছাড়া আরও ৬ ব্যাংকের অতিরিক্ত বিনিয়োগ নিয়ে তদন্ত চলছে বলে সূত্র জানিয়েছে।

এদিকে, বেশ কয়েক মাস ধরে দেশের শেয়ারবাজারে বড় ধরনের উত্থান দেখা যাচ্ছে। গত ১ জুন দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ছিল ৫ হাজার ৪৩৯ পয়েন্টে। আর লেনদেন ছিল ৫২৬ কোটি টাকা। তবে গতকাল রোববার দিন শেষে ডিএসইএক্স সূচকটি বেড়ে দাঁড়ায় ৬ হাজার ২০৬ পয়েন্টে। লেনদেন হয় ১ হাজার ৫৪ কোটি টাকা। সেই হিসাবে, প্রায় চার মাসের ব্যবধানে সূচক বেড়েছে ৭৬৭ পয়েন্ট আর লেনদেন বেড়ে হয় দ্বিগুণ। এদিকে প্রায় দেড় মাস ধরে ব্যাংকের শেয়ারেও বড় উল্লম্ফন ঘটে। অনেক ব্যাংকের শেয়ারের দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে গেছে। এতে ব্যাংকগুলোর সীমার অতিরিক্ত বিনিয়োগ বড় ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।