বিচারপতি সিনহার বিরুদ্ধে ১১ অভিযোগ
প্রকাশ: ২০১৭-১০-১৪ ১৯:৪৯:২২
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, আর্থিক অনিয়ম ও নৈতিক স্খলনসহ সুনির্দিষ্ট ১১টি অভিযোগ উঠেছে, যার গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা তিনি দিতে পারেননি। প্রধান বিচারপতি সিনহা ছুটি নিয়ে বিদেশ যাওয়ার পর সুপ্রিম কোর্টের এক বিবৃতিতে একথা জানানো হয়। সিনহা অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার আগে যে বিবৃতি দিয়েছেন তা বিভ্রান্তিমূলক বলে সুপ্রিমকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল স্বাক্ষরিত এই বিবৃতিতে বলা হয়েছে।
শনিবার বিকালে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল সৈয়দ আমিনুল ইসলামের স্বাক্ষরে এই বিবৃতি সুপ্রিম কোর্টের প্রকাশিত হয়। এর আগে দায়িত্বরত প্রধান বিচারপতি আব্দুল ওয়াহহাব মিঞা আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিদের নিয়ে বৈঠক করেন।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ছুটি ভোগরত প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা ১৩ অক্টোবর বিদেশ যাওয়ার প্রাক্কালে একটি লিখিত বিবৃতি উপস্থিত গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে হস্তান্তর করেন। উক্ত লিখিত বিবৃতি সুপ্রিম কোর্টের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। তার ওই লিখিত বিবৃতি বিভ্রান্তিমূলক।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্টের বিবৃতি নিম্নরূপ- গত ৩০ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা ব্যতিত আপিল বিভাগের অপর পাঁচ বিচারপতিকে বঙ্গভবনে আমন্ত্রণ জানান। বিচারপতি মো. ইমান আলী দেশের বাইরে থাকায় ওই আমন্ত্রণে তিনি উপস্থিত থাকতে পারেননি। অপর চারজন অর্থাৎ, বিচারপতি মো, আবদুল ওয়াহহাব মিয়া, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মির্জা হোসেন হায়দার রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাত করেন। দীর্ঘ আলোচনার এক পর্যায়ে রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার বিরুদ্ধে ১১টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ সম্বলিত দালিলিক তথ্যাদি হস্তান্তর করেন। তারমধ্যে বিদেশে অর্থপাচার, আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতি, নৈতিক স্খলনসহ আরও সুনির্দিষ্ট গুরুতর অভিযোগ রয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বিচারপতি মো. ইমান আলী ঢাকায় প্রত্যাবর্তনের পর ১ অক্টোবর আপিল বিভাগের উল্লিখিত পাঁচ বিচারপতি এক বৈঠকে বসেন। বৈঠকে ওই ১১টি অভিযোগ বিষদভাবে পর্যালোচনার পর এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন ওই সকল গুরুতর অভিযোগসমূহ প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহাকে অবহিত করা হবে। তিনি যদি ওই সকল অভিযোগের ব্যাপারে কোনো সন্তোষজনক জবাব বা সদুত্তর দিতে ব্যর্থ হন তাহলে তার সঙ্গে বিচারালয়ে বসে বিচারকাজ করা পরিচালনা করা সম্ভব হবে না।
এ সিদ্ধান্তের পর ওইদিন (১ অক্টোবর) সাড়ে ১১টায় প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার অনুমতি নিয়ে পাঁচ বিচারপতি প্রধান বিচারপতির হেয়ার রোডের বাসভবনে সাক্ষাত করে অভিযোগসমূহ নিয়ে আলোচনা করেন। দীর্ঘ আলোচনার পরে তার নিকট হতে কোনো প্রকার গ্রহণযোগ্য ব্যাখা বা সদুত্তর না পেয়ে আপিল বিভাগের উল্লিখিত পাঁচ বিচারপতি তাকে সুষ্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন যে, এমতাবস্থায় ওই অভিযোগসমূহের সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত তার সঙ্গে একই বেঞ্চে বসে তাদের পক্ষে বিচারকাজ পরিচালনা করা সম্ভব হবে না।
এ পর্যায়ে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা সুষ্পষ্টভাবে বলেন যে, সেক্ষেত্রে তিনি পদত্যাগ করবেন। তবে এ ব্যাপারে পরের দিন ২ অক্টোবর তিনি তার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবেন। ২ অক্টোবর তিনি উল্লিখিত বিচারপতিদের কোনো কিছু অবহিত না করে রাষ্ট্রপতির কাছে এক মাসের ছুটির দরখাস্ত প্রদান করলে রাষ্ট্রপতি তা অনুমোদন করেন। এ অবস্থায় রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ৯৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, প্রধান বিচারপতির অনুপস্থিতিতে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠতম বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিয়াকে দেশের প্রধান বিচারপতির অনুপস্থিতিতে প্রধান বিচারপতির অনুরূপ কার্যভার পালনের দায়িত্ব প্রদান করেন।
বিবৃতির শেষাংশে বলা হয়, প্রধান বিচারপতির পদটি একটি প্রতিষ্ঠান। সেই পদের ও বিচারবিভাগের মর্যাদা সমুন্নত রাখার স্বার্থে ইতিমধ্যে সুপ্রিম কোর্টের তরফ হতে কোনো প্রকার বক্তব্য বা বিবৃতি প্রদান করা হয় নাই। কিন্তু উদ্ভূত পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে নির্দেশক্রমে উপরোক্ত বিবৃতি প্রদান করা হল।