মিয়ানমারের জেনারেলদের জন্য ইউরোপের দুয়ার বন্ধ
আপডেট: ২০১৭-১০-১৭ ১০:১৭:৪৪
মিয়ানমারের জেনারেলদের নিষিদ্ধ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়নকারীদের বিচার করার আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি। সোমবার ব্রাসেলসে ইইউ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক শেষে এক বিবৃতিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী অসামঞ্জস্যপূর্ণ শক্তি প্রয়োগ করেছে। এ কারণে ইইউ এবং তার সদস্য দেশগুলো মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনীপ্রধান এবং ঊর্ধ্বতন সেনা কর্তাদের সফরের আমন্ত্রণ বাতিল করল।’
পাশাপাশি নেপিদোর সঙ্গে ‘চলমান সব ধরনের সামরিক সহযোগিতা পর্যালোচনা’ করে দেখবে ইউরোপ। কূটনৈতিক ভাষায় যার অর্থ হলÑ এসব সহযোগিতা বাতিল করা হতে পারে। বিবৃতিতে বলা হয়, পদক্ষেপগুলো নেয়ার পরও পরিস্থিতির উন্নতি না হলে মিয়ানমারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে।
রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়নের তথ্য অস্বীকার করে আসছে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ। তবে ২৮ দেশভুক্ত ইইউ তা মেনে নেয়নি। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘রোহিঙ্গাদের ওপর ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘন, নিপীড়ন ও বর্বর হামলার বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ রয়েছে। এগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্ত করতে হবে।’
বিবৃতিতে বলা হয়, রাখাইনে মানবাধিকার পরিস্থিতি ভয়াবহ। এখনও সেখানে অগ্নিসংযোগ, জনগণের বিরুদ্ধে সহিংসতা ও ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে। নির্বিচারে গুলি করা হচ্ছে, বসানো হয়েছে স্থলমাইন। নারীদের ওপর নিপীড়ন চলছে। এটা মেনে নেয়া হবে না এবং অবিলম্বে অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। স্বল্পতম সময়ের মধ্যে ৫ লাখের বেশি মানুষের দেশত্যাগ দৃঢ়ভাবে এ ইঙ্গিত দেয়, সংখ্যালঘুদের বিতাড়নের জন্য উদ্দেশ্যমূলকভাবে এসব করা হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, শরণার্থীদের নিরাপদে ও মর্যাদার সঙ্গে ফিরিয়ে নিতে হবে। রাখাইনে জাতিসংঘ, রেডক্রসসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাকে অবাধে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। কফি আনান কমিশনের সুপারিশ পূর্ণ বাস্তবায় তথা দেশহীন রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দেয়ার আহ্বান জানিয়ে ইইউ বলেছে, এ কাজে তারা মিয়ানমার সরকারকে সহায়তা দিতে প্রস্তুত।
বিবৃতিতে অং সান সু চির বক্তব্য উদ্ধৃত করে বলা হয়, তিনি বলেছেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের বিচার করা হবে এবং রাখাইনে আন্তর্জাতিক নজরদারিকে তার সরকার ভয় পায় না। ইইউ বলেছে, রাখাইনে শিশুদের ওপর বর্বর হামলাসহ ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ আছে। এগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করতে হবে। এর অংশ হিসেবে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের তথ্যানুসন্ধান মিশনকে অবাধে অবিলম্বে রাখাইনে তদন্তের সুযোগ দিতে হবে।
বিবৃতিতে রোহিঙ্গাদের তাদের আদি নিবাসে ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশের সঙ্গে সংলাপে বসার জন্য মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। এতে ঢাকার সঙ্গে সুপ্রতিবেশীসুলভ সম্পর্ক তৈরির জন্য নেপিদোকে পরামর্শ দেয়া হয়। কঠিন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ গঠনমূলক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে বলে এ দেশের প্রশংসা করা হয় বিবৃতিতে।
নেতৃত্ব দিতে হবে ইইউকে : রাখাইনে নিধনযজ্ঞের বিরুদ্ধে সরব ইউরোপীয় ইউনিয়ন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাখাইনে হত্যাযজ্ঞ বন্ধে ইইউকে নেতৃত্ব দিতে হবে। ইইউ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকের প্রাক্কালে এক বিবৃতিতে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, মিয়ানমারে মানবতাবিরোধী অপরাধ, চলমান জাতিগত নিধন ও অন্যান্য নিপীড়নের মুখে ইইউ সদস্যরা যেন নিজেদের মধ্যে মতবিরোধের কারণে নীরব না থাকে।
বিবৃতিতে বলা হয়, মিয়ানমারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়ানোর এটা একটা সুযোগ ইইউর সামনে। অন্যথায় মানবিক সংকট আরও প্রকট হবে।
বিবৃবিতে বলা হয়, মিয়ানমারের নিপীড়নকারী কর্মকর্তাদের ওপর আর্থিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে। মিয়ানমারে নিপীড়নের বিরুদ্ধে ঐতিহাসিকভাবে নেতৃত্ব দিয়েছে ইইউ। এখন সেখানে পোড়ামাটি নীতি চলছে। এ অবস্থায় সংস্থাটি নীরব হলে তা বিশ্বের নজর এড়াবে না।
আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞ আহমেদ জিয়াউদ্দিন বিবিসিকে বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এরই মধ্যে বিভিন্ন ধরনের নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে রেখেছে মিয়ানমারের ওপর। আগে আরও বেশি নিষেধাজ্ঞা ছিল। এখন তাদের নতুন নিষেধাজ্ঞার চিন্তা করতে হবে।
তিনি বলেন, ইইউকে এক্ষেত্রে নেতৃত্ব নিতে হবে। ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা, সম্পদ জব্দ করাসহ মিয়ানমারের সেনা নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ইইউর অনেক ধরনের ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ আছে।
জিয়াউদ্দিন আহমেদ বলেন, রাখাইন থেকে অধিকাংশ রোহিঙ্গা বের করে দেয়া হয়েছে। কাজেই ওখানে গিয়ে ইইউকে দেখতে হবে সেখানে কী ঘটেছে। তাদের ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিশন যেন সেখানে যেতে পারে। মিয়ানমারের সরকারের ওপর ব্যাপক চাপ দিতে হবে, যাতে রোহিঙ্গা নিধন কর্মসূচি তারা বন্ধ করে। পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার পরিবেশ মিয়ানমারকে তৈরি করতে হবে এবং এক্ষেত্রে ইউরোপ ছাড়া বাংলাদেশের এ মুহূর্তে আশার জায়গা নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।