জিএসপি পর্যালোচনার দাবি জানিয়েছে ৫ ট্রেড ইউনিয়ন
আপডেট: ২০১৭-১০-২০ ১১:৩৫:০৫
বাংলাদেশের পোশাকশিল্পে অব্যাহতভাবে শ্রম অধিকার লঙ্ঘিত হওয়ার অভিযোগ এনেছে শ্রম অধিকার নিয়ে কাজ করা পাঁচটি আন্তর্জাতিক জোট। এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তারা পণ্য রপ্তানিতে অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধা বা জিএসপি পুনর্বিবেচনার জন্য বাংলাদেশে একটি তদন্ত দল প্রেরণ করতে ইউরোপীয় কমিশনের (ইসি) কাছে দাবি করেছে।
বাংলাদেশের জিএসপি পুনর্বিবেচনার দাবি করা পাঁচ জোট হচ্ছে ক্লিন ক্লথ ক্যাম্পেইন, ইন্ডাস্ট্রিঅল গ্লোবাল ইউনিয়ন, দ্য ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড ইউনিয়ন কনফেডারেশন, দ্য ইউরোপিয়ান ট্রেড ইউনিয়ন কনফেডারেশন ও ইউএনআই গ্লোবাল ইউনিয়ন। তারা শ্রম অধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ প্রমাণ করতে গতকাল বুধবার ‘ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং বাংলাদেশের পোশাকশিল্প: সাসটেইনেবল কমপ্যাক্টের ব্যর্থতা’ নামে একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করেছে।
শ্বেতপত্রে শ্রম আইন সংশোধন, রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (ইপিজেড) ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার, ইউনিয়ন নিবন্ধনের উন্নতি এবং ইউনিয়নবিরোধী কার্যক্রম বন্ধ না হওয়াকে গুরুত্ব সহকারে তুলে ধরে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ এসব ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছে। শ্বেতপত্রে কয়েকটি কারখানার শ্রমিক নির্যাতনের তথ্যও তুলে ধরা হয়। শ্বেতপত্রটি ইউরোপিয়ান কমিশনে পাঠিয়েছে পাঁচ জোট। বিবৃতি দিয়ে তারা বলেছে, বাংলাদেশ সরকার সাসটেইনটেবল কমপ্যাক্ট অমান্য করছে।
ক্লিন ক্লথ ক্যাম্পেইনের বেন ভ্যানপিপিরাস্ট্রিই এক বিবৃতিতে বলেছেন, শ্রম আইন সংশোধনে সামান্যতম অগ্রগতি হয়নি। ইপিজেডে শ্রম সংঘ নিশ্চিত করার বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে সেটি পরিষ্কার না। ইউনিয়ন করতে গিয়ে অনেক কারখানার শ্রমিকেরা নির্যাতিত হওয়ার তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে। কিন্তু শ্রম অধিকার নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশ চার বছর সময় পেয়েছে।
২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধসের পর পোশাকশিল্পের কর্মপরিবেশ উন্নতি ও শ্রমিক অধিকার নিশ্চিতে চারপক্ষীয় উদ্যোগ নেওয়া হয়। ওই বছরের জুলাই মাসে জেনেভায় বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্র, ইইউ ও আইএলওর উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিরা এক বৈঠকে যোগ দিয়ে ‘স্টেইং এনগেইজড অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি কমপ্যাক্ট উইথ বাংলাদেশ’ নামের উদ্যোগের ঘোষণা দেয়। সংক্ষেপে এটি কমপ্যাক্ট নামে পরিচিত। পরে এই উদ্যোগের সঙ্গে কানাডা যুক্ত হয়।
গত মে মাসে ঢাকায় কমপ্যাক্টের তৃতীয় পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। শ্রমিকের স্বার্থ সুরক্ষায় যৌথ দর-কষাকষির অভিন্ন অধিকার চালু করতে দেশের ইপিজেড আইন সংশোধনের জন্য বাড়তি সময় পায় বাংলাদেশ। দুই-তিন সপ্তাহের মধ্যে দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখতে চেয়েছিল ইইউসহ বাংলাদেশের উন্নয়ন অংশীদারেরা। তবে পরিস্থিতির উন্নতি না হলে ইইউ জিএসপি অব্যাহত রাখা নিয়ে তদন্ত দলও গঠন করা হতে পারে বলে জানিয়েছিলেন কমপ্যাক্ট প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তারা।
এদিকে, গত বছরের জুনে আন্তর্জাতিক লেবার কনফারেন্সে (আইএলসি) বাংলাদেশ-সম্পর্কিত বিশেষ অনুচ্ছেদ যুক্ত হয়। এতে বলা হয়, শ্রমিক অধিকার নিশ্চিত করতে সরকারের পক্ষ থেকে পদক্ষেপের ঘাটতি ও ব্যর্থতা অত্যন্ত উদ্বেগের। এ ক্ষেত্রে শ্রম আইন, ২০১৩তে সংশোধনী আনা, ইপিজেড আইনে সংগঠিত হওয়ার অধিকার পুরোপুরি নিশ্চিত করা, ট্রেড ইউনিয়নবিরোধী বৈষম্যের তদন্ত করা এবং ইউনিয়নের নিবন্ধন স্বচ্ছতা ও দ্রুততার সঙ্গে করার মতো চারটি প্রসঙ্গ ওই অনুচ্ছেদে এসেছে। এসব কারণেই বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা অব্যাহত রাখার বিষয়টি যাচাই করতে চাইছে ইইউ।
অবশ্য গত জুনে জেনেভায় আইএলসিতে শ্রমিকদের সংগঠিত হওয়ার অধিকার নিশ্চিত করার পাশাপাশি ট্রেড ইউনিয়নবিরোধী বৈষম্যমূলক আচরণ ও সহিংসতা বন্ধের জন্য আগামী নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশকে সময় বেঁধে দেওয়া হয়।
জানতে চাইলে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, শ্রম অধিকার নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক জোটগুলোর অভিযোগ বানোয়াট। রানা প্লাজা ধসের পরপরই শ্রম আইন সংশোধন করা হয়েছে। পরের বছর শ্রম বিধিমালা করা হয়। তারপর আবারও শ্রম ও ইপিজেড আইন সংশোধনে সরকার কাজ করছে। এ জন্য নভেম্বর পর্যন্ত সময় আছে। তিনি আরও বলেন, ‘আইএলওর কনভেনশন অনুযায়ী আমরা শ্রম অধিকার নিশ্চিতে করছি।’