সুষমা স্বরাজ আজ ঢাকায় আসছেন

প্রকাশ: ২০১৭-১০-২২ ১০:০৩:১৭


ssভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ যৌথ পরামর্শক কমিশনের (জেসিসি) বৈঠকে যোগ দিতে আজ রোববার দুপুরে ঢাকায় আসছেন। বিকেলে তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে বৈঠক করবেন। সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন তিনি।

এ ছাড়া সুষমা স্বরাজের বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠকের কথা রয়েছে।

ঢাকা ও দিল্লির কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, সুষমা স্বরাজের সফরের সময় দুই দেশের সম্পর্কের পর্যালোচনার পাশাপাশি রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে আলোচনা হবে। প্রায় দুই মাস ধরে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা ঢল অব্যাহত থাকায় খুব স্বাভাবিকভাবেই দুই পক্ষের আলোচনায় বিষয়টি গুরুত্ব পাবে।

বাংলাদেশের কর্মকর্তারা বলছেন, রাখাইন থেকে রোহিঙ্গারা এখনো বিপুল সংখ্যায় বাংলাদেশে আসছে। তাই রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আন্তর্জাতিক সমর্থনের পাশাপাশি মিয়ানমারকে চাপ দিতে ভারতের রাজনৈতিক সমর্থন বাংলাদেশের জন্য জরুরি। সুষমা স্বরাজের সফরের সময় এ বিষয়টিই বাংলাদেশ আবার বলবে।

বাংলাদেশ-ভারত জেসিসির বিষয়বস্তু সম্পর্কে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রসচিব মো. শহীদুল হক গত শুক্রবার বলেন, এপ্রিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে যেসব সিদ্ধান্ত হয়েছিল, তা জেসিসিতে পর্যালোচনা করা হবে। এ ছাড়া আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সহযোগিতার বিষয়েও দুই দেশ আলোচনা করবে।

রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে আলোচনা হবে কি না জানতে চাইলে শহীদুল হক বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে আলোচনা হবে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সুষমা স্বরাজের ঢাকা সফরের সময় দুই দেশ জ্বালানি ও তথ্য সম্প্রচারের বিষয়ে সহযোগিতার 
জন্য দুটি সমঝোতা স্মারক সই করতে পারে। এর একটি হচ্ছে ভারতের নুমালিগড় তেল শোধনাগার থেকে ডিজেল কেনার জন্য সমঝোতা স্মারক। অন্যটি হচ্ছে, বাংলাদেশ বেতারের সঙ্গে ভারতের অল ইন্ডিয়া রেডিওর সমঝোতা স্মারক।

কর্মকর্তারা জানান, দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তিসহ অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন, সংযোগ, প্রতিরক্ষা, নিরাপত্তা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, অর্থনৈতিক সহযোগিতাসহ সম্পর্কের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শীর্ষ নেতাদের বৈঠকের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন নিয়ে আলোচনা হবে।

প্রায় সাড়ে তিন বছর পর এবার ঢাকায় আসছেন সুষমা স্বরাজ। ২০১৪ সালের মে মাসে বিজেপি ক্ষমতায় আসার এক মাস পর ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে তিনি ঢাকায় এসেছিলেন। কংগ্রেস-আওয়ামী লীগ সম্পর্কের বিশেষ মাত্রা আর ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনের কারণে তাঁর সেই সফরটি নিয়ে যথেষ্ট কৌতূহল ছিল বাংলাদেশের রাজনৈতিক মহলে। বিশেষ করে ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে পরের ৫ বছর বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ‘বিশেষ মাত্রা’য় কোনো খাদ সৃষ্টি হবে কি না, তা নিয়ে সরকারি মহলে কিছুটা হলেও সংশয় ছিল। আর বিজেপি ক্ষমতায় আসায় উৎসাহিত হয়েছিল বিএনপি। তবে ঢাকা সফরের সময় সুষমা স্বরাজ বলে গেছেন, কংগ্রেস শাসনামলে দুই প্রতিবেশীর সম্পর্কে যে অগ্রগতি হয়েছে, সেটি ধরেই সম্পর্কটা এগিয়ে নেবে বিজেপি।

সুষমা স্বরাজের সর্বশেষ ঢাকা সফরের উল্লেখ করে কূটনৈতিক সূত্রগুলো গতকাল আভাস দিয়েছে, এবারের সফরেও তিনি বিশেষ কোনো বার্তা দিতে পারেন। এখন সেই বার্তা কি রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে হবে, নাকি রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে সেটা বলা মুশকিল। তাঁর ঢাকা সফরের পরই সেটি স্পষ্ট হবে।

বাংলাদেশের কর্মকর্তারা বলছেন, সুষমা স্বরাজের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আলোচনার সময় রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধানে ভারতের জোরালো সমর্থন পাওয়ার বিষয়টিতে বাংলাদেশ গুরুত্ব দেবে। এ মাসের শুরুতে দিল্লি সফরের সময় পররাষ্ট্রসচিব মো. শহীদুল হক ভারতের স্বরাষ্ট্রসচিব এস জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠকেও বিষয়টি তুলে ধরেন। ভারত এই সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশের পাশে থাকার অঙ্গীকার করেছে। এই মুহূর্তে ভারত মানবিক সহায়তায় অগ্রাধিকার দিচ্ছে। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে মিয়ানমারকে নেপথ্যে ভারত রাজি করানোর জন্য কথা বলছে। তবে এই মুহূর্তে মিয়ানমারকে রাজি করাতে ভারত একা কিছু করতে রাজি নয়। মিয়ানমারকে রাজি করাতে কিংবা চাপ দিতে একটা সম্মিলিত আন্তর্জাতিক উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলছে ভারত।

খসড়া সূচি অনুযায়ী, ভারতীয় বিমানবাহিনীর একটি বিশেষ ফ্লাইটে আজ বেলা দুইটার দিকে ঢাকায় আসবেন সুষমা স্বরাজ। বিকেল চারটার পর তিনি সোনারগাঁও হোটেলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে যৌথ পরামর্শক কমিশনের (জেসিসি) সভায় যোগ দেবেন। সন্ধ্যায় তিনি গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। রাতে তাঁর সম্মানে মাহমুদ আলীর দেওয়া নৈশভোজে যোগ দেবেন সুষমা স্বরাজ।

কাল সোমবার বারিধারায় ভারতীয় হাইকমিশনের নতুন চ্যান্সেরি ভবনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন সুষমা স্বরাজ। সেখানে ভারতের আর্থিক সহযোগিতায় ১৫টি প্রকল্পের উদ্বোধন করার কথা রয়েছে। ওই দিন দুপুরেই দিল্লি ফিরে যাওয়ার আগে সুষমা স্বরাজের বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠকের কথা রয়েছে।

ভারতের কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, দুই প্রতিবেশী দেশের সম্পর্কের উত্তরণের ক্ষেত্রে জেসিসি একটি গুরুত্বপূর্ণ ফোরাম। পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের নেতৃত্বাধীন জেসিসি থেকে সম্পর্ককে রাজনৈতিক মাত্রা যুক্ত করে। এখানে একটি নির্দিষ্ট মেয়াদের পরপর সম্পর্কের পর্যালোচনা হয়। শীর্ষ নেতাদের সিদ্ধান্তে পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকের সুপারিশের প্রতিফলন হয়ে থাকে।

এদিকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গতকাল সন্ধ্যায় এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, বাংলাদেশের নেতৃত্বের পাশাপাশি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গবেষণা সংস্থা, বণিক সংগঠন এবং সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মত বিনিময় করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই সফরে দুই দেশের চমৎকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক পর্যালোচনার পাশাপাশি সম্পর্ককে আরও জোরদার করার সুযোগ তৈরি করে দেবে বলে আশা করা যায়।