বিদেশে বিনিয়োগের বাধা দূর হচ্ছে

প্রকাশ: ২০১৭-১০-২৫ ০৯:১৩:৪১


mnal-2017দেশি বিনিয়োগকারীদের বিদেশে বিনিয়োগের বাধা দূর হচ্ছে। এই প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের একটি শিল্পগ্রুপকে বিদেশে বিনিয়োগের অনুমতি দেয়ার কাজ চূড়ান্ত করা হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আজ (বুধবার) সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ কক্ষে অনুষ্ঠিতব্য অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় এটির চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সভায় সভাপতিত্ব করবেন কমিটির আহ্বায়ক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশি বিনিয়োগকারীরা বিদেশে বিনিয়োগের সুযোগ চেয়ে সরকারের কাছে আবেদন করে আসছিল। বেশ কয়েকবছর আগে দেশের শীর্ষস্থানীয় তিন শিল্প প্রতিষ্ঠান আকিজ গ্রুপ, হা-মীম গ্রুপ ও নিটোল-নিলয় গ্রুপ বিদেশে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করে সরকারের কাছে আবেদন করে। তাদের যুক্তি ছিল বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে পারলে বাংলাদেশের বিনিয়োগকারীরা কেন বিদেশে পারবে না।

অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় উপস্থাপনের জন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (সচিবের রুটিন দায়িত্বে) কামরুন নাহার আহমেদ স্বাক্ষরিত প্রস্তাবনায় বলা হয়, বিষয়টি নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতামত চাওয়া হয়। এ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক-১ আহমেদ জামালকে প্রধান করে ‘বাংলাদেশি উদ্যোক্তা কর্তৃক বিদেশে বিনিয়োগ সংক্রান্ত প্রস্তাব মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি)’ গঠন করা হয়।

ওই কমিটি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন দিক যাচাই-বাছাই করে সম্প্রতি আকিজ গ্রুপ কর্তৃক মালয়েশিয়ায় বিনিয়োগের আবেদনে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে। তবে এর সঙ্গে ১৩টি শর্ত জুড়ে দেয়া হয়েছে। এই শর্তে উল্লেখ রয়েছে, বিনিয়োগকৃত অর্থের হিসাব সুষ্ঠুভাবে সংরক্ষণ করতে হবে, শতভাগ লভ্যাংশ দেশে ফেরত আনতে হবে এবং মালয়েশিয়ায় স্থাপিত শিল্পপ্রতিষ্ঠানে বাংলাদেশিদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ দিতে হবে।

সূত্র জানায়, শিল্পপ্রতিষ্ঠানটির প্রস্তাবে বলা হয়, আকিজ জুট মিলস লিমিটেড মালয়েশিয়ায় আকিজ রিসোর্স এসডিএন বিএইচডি নামে কোম্পানি গঠন করবে। ওই কোম্পানির মাধ্যমে মালয়েশিয়ার কোম্পানি রবিন রিসোর্সেস (মালয়েশিয়া) এসডিএন বিএইচডি (যার শতভাগ মালিকানাধীন সাবসিডিয়ারি রবিন ফ্লোরিং এসডিএন বিএইচডিসহ) অধিগ্রহণ করা হবে।

এটি আকিজ জুট মিলস লিমিটেডের নামে পরিচালিত এক্সপোর্টার্স রিটেনশন কোটা হিসেবে স্থিতি থাকা সাপেক্ষে তা থেকে প্রস্তাবিত অনিবাসী সাবসিডিয়ারি আকিজ রিসোর্সেস এসডিএন বিএইচডির অনুকূলে মালয়েশিয়ায় ইকুইটি ইনভেস্টমেন্ট বাবদ ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (যা বাংলাদেশি টাকায় ১৬০ কোটি টাকা) পাঠানো হবে। পিইসির বৈঠকে এই প্রস্তাবটি উপস্থাপন করা হয়। তবে রবিন রিসোর্সেস (মালয়েশিয়া) এসডিএনের সাবসিডিয়ারি কোম্পানি রবিন প্ল্যানটেশন এসডিএন বিএইচডিকে আকিজ রিসোর্সেস এসডিএন বিএইচডি কর্তৃক অধিগ্রহণ করা হবে না। কমিটি এ বিষয়ে কয়েকটি পর্যবেক্ষণ ও মতামত গ্রহণ করে।

সূত্র জানায়, আকিজ গ্রুপের বিনিয়োগ প্রস্তাবে কমিটি দেখতে পায় যে, স্থানীয় প্রতিষ্ঠান আকিজ জুট মিলস লিমিটেডের শতভাগ মালিকানাধীনে মালয়েশিয়ায় দুই কোটি ডলার সমমূল্যের পরিশোধিত মূলধনে আকিজ রিসোর্স এসডিএন বিএইচডি নামের একটি কোম্পানি গঠন করবে। ওই কোম্পানি তার পরিশোধিত মূলধনের দুই কোটি ডলার এবং বিদেশ থেকে ছয় কোটি ডলার ঋণ নিয়ে মোট আট কোটি ডলার মালয়েশিয়ায় অবস্থিত রবিন রিসোর্সেস (মালয়েশিয়া) এসডিএন বিএইচডি নামের কোম্পানিকে সিঙ্গাপুরের হোল্ডিং কোম্পানি রবিনা রিসোর্স পিটিই লিমিটেড থেকে ক্রয় করবে।

কমিটি এখানে দেখতে পায় যে, মালয়েশিয়ায় প্রস্তাবিত সাবসিডিয়ারি আকিজ রিসোর্সেস এসডিএন বিএইডি এবং এ সাবসিডিয়ারি কর্তৃক অধিগ্রহণতব্য রবিন রিসোর্সেস (মালয়েশিয়া) এসডিএন বিএইচডি (যার শতভাগ মালিকানাধীন সাবসিডিয়ারি রবিন ফ্লোরিং এসডিএন বিএইচডিসহ) উভয়ের ওপর স্থানীয় আকিজ জুট মিলস লিমিটেডের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

প্রস্তাবিত বিনিয়োগ থেকে আগামী ১০ বছরে ৮ কোটি ৩ লাখ ডলার মুনাফা অর্জন করতে সক্ষম হবে। এ মুনাফা থেকে লভ্যাংশবাবদ আগামী ১০ বছরে ২ কোটি ৯৯ লাখ ডলার দেশে প্রত্যাবাসনের বিষয়ে বিনিয়োগকারী প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে বিনিয়োগকারী কর্তৃক আগামী বছরগুলোতে যে পরিমাণ করোত্তর মুনাফা অর্জনের প্রাক্কলন করা হয়েছে তার সম্পূর্ণ অংশ লভ্যাংশ আকারে দেশে প্রত্যাবাসন করা হলে আবেদনকৃত দুই কোটি ডলার আগামী তিন বছরে দেশে ফেরত আসবে। বিনিয়োগের গন্তব্যস্থল মালয়েশিয়ার বৈদেশিক মুদ্রানীতির বিধান অনুসারে ওই দেশ থেকে বিনিয়োগকারী অর্থ ও মুনাফা অবাধে প্রত্যাবাসনযোগ্য।

কমিটি মতামত দিয়েছে, স্থানীয় প্রতিষ্ঠান আকিজ জুট মিলস কর্তৃক তাদের হিসাব থেকে বিনিয়োগের অর্থ প্রেরণ করবে বিধায় দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর প্রভাব ফেলবে না। কারণ গ্রাহকের বৈদেশিক মুদ্রা হিসাবের স্থিতি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে অন্তর্ভুক্ত থাকে না। এছাড়া প্রস্তাবিত বিনিয়োগতব্য কোম্পানিটির বিদ্যমান মুনাফার ধারা অব্যাহত থাকলে অথবা উন্নতি হলে এবং মুনাফা নিয়মিতভাবে লভ্যাংশ আকারে দেশে প্রত্যাবাসন করলে ভবিষ্যতে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।