হ্যাকড সার্ভার নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে রিজার্ভ চুরি

আপডেট: ২০১৭-১০-২৭ ১১:৪৩:০৫


bangladesh_bankগত বছরের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় হ্যাকড হওয়া সার্ভার নেটওয়ার্ক ব্যবহার হয়েছে বলে জানিয়েছে সাইবার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান ক্যাসপারস্কি ল্যাব। এ ঘটনায় জড়িত সাইবার গ্রুফ ল্যাজারাসের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা হিসেবে এ হ্যাকড নেটওয়ার্ক ব্যবহৃত হয়েছে।

এর আগে গত এপ্রিলে রাশিয়াভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটি জানায়, বাংলাদেশের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় উত্তর কোরিয়ার একদল গবেষক জড়িত। দেশটির জড়িত থাকার ডিজিটাল প্রমাণ আছে বলে দাবি করেছে সাইবার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানটি। এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে অনেক হ্যাকড হওয়া সার্ভার শনাক্ত করেছে প্রতিষ্ঠানটি। যেগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরির ঘটনায় জড়িত বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।

রাশিয়ার সাইবার নিরাপত্তা সংস্থাটি বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, হ্যাকড হওয়া সার্ভারগুলো এ ঘটনায় জড়িত ল্যাজারাসের বৈশ্বিক নির্দেশনার এবং নিয়ন্ত্রণ কাঠামোর অংশ ছিল। ইন্দোনেশিয়া, ভারত, বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান ও থাইল্যান্ডের মতো দেশে এসব সার্ভার হ্যাকড হয়েছে বলে দাবি করেছে ক্যাসপারস্কি।

গত এপ্রিলে এ বিষয়ে ৫৮ পৃষ্ঠার এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ক্যাসপারস্কি ল্যাব। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, হ্যাকিং গ্রুপ ল্যাজারাসের হ্যাকাররা শুরুতেই উত্তর কোরিয়ার একটি আইপি অ্যাড্রেস থেকে ইউরোপের একটি সার্ভারের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ তৈরি করে। যে সার্ভার ল্যাজারাসের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।

ক্যাসপারস্কির গবেষক ভিটালি কামলুক রয়টার্সকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, শুরুতেই তারা উত্তর কোরিয়া ও ল্যাজারাসের মধ্যে যোগাযোগ ছিল, এ বিষয়টির প্রমাণ পান। তাদের কাছে প্রমাণ আছে, ২০০৯ সাল থেকেই এ হ্যাকিং গ্রুপ সক্রিয় আছে। তিনি আরও বলেন, উত্তর কোরিয়াই যে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তা একদম নিশ্চিত করে বলতে চাইছি না। উত্তর কোরিয়া থেকেই এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে- হ্যাকাররা এমনটা দেখানোরও চেষ্টা করে থাকতে পারে। হয়তো এ ঘটনা অন্য কেউ ঘটিয়েছে।

এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ চুরির জন্য উত্তর কোরিয়ার হ্যাকারদের দায়ী করছে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা (এনএসএ)। সংস্থাটির এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলছেন, ২০১৪ সালের সনির হলিউড স্টুডিও এবং ২০১৬ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরিতে পিয়ংইয়ং (উত্তর কোরিয়ার রাজধানী) জড়িত ছিল। একই ধরনের কোড ব্যবহার করা হয় বলে জানান গোয়েন্দারা।

সম্প্রতি ওয়াশিংটনে আসপেন ইন্সটিটিউটের উদ্যোগে এক গোলটেবিলে এ দাবি করেন এনএসএ’র উপপরিচালক রিক লেজেট। তিনি আরও বলেন, ২০১৪ সালের সনির হলিউড স্টুডিও ও বাংলাদেশ উভয় ঘটনায় পিয়ংইয়ংয়ের জড়িত থাকার খোঁজ পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সরকার। তার মতে, যদি সনির স্টুডিও থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের চুরির ঘটনায় উত্তর কোরিয়া জড়িত থাকার তথ্য সত্যি হয়, তাহলে প্রমাণ হচ্ছে, একটি রাষ্ট্র ব্যাংক ডাকাতিতে জড়িত। এটা একটা বড় ঘটনা।

এর আগে ব্লুমবার্গের এক খবরে বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ চুরির ঘটনায় তিনটি হ্যাকার গ্রুপের সম্পৃক্ততার তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে দুটি হ্যাকার গ্রুপকে শনাক্ত করা গেছে। যার একটি পাকিস্তানের, অপরটি উত্তর কোরিয়ার। তবে এ বিষয়ে অভিযোগ অস্বীকার করেছে উত্তর কোরিয়া।

গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে (নিউইয়র্ক ফেড) রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরির ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার চলে যায় ফিলিপাইনে আর ২ কোটি ডলার যায় শ্রীলংকায়। এ অর্থের কিছু অংশ ফেরত এসেছে।