এবার বাড্ডায় খুন বাবা-মেয়ে, স্ত্রী আটক

প্রকাশ: ২০১৭-১১-০৩ ১১:৪৩:২৭


jamilকাকরাইলে মা-ছেলে খুন হওয়ার ১২ ঘণ্টা না পেরোতে রাজধানীতে ফের জোড়া খুন। এবার বাড্ডায় হত্যার শিকার হলেন বাবা ও মেয়ে। বুধবার গভীর রাতে বাড্ডা হোসেন মার্কেটের পেছনে ময়নারটেক এলাকার একটি বাসায় নৃশংস এ খুনের ঘটনা ঘটে।

বৃহস্পতিবার সকালে স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে পুলিশ বাবা জামিল শেখ (৪১) ও তার স্কুল পড়–য়া মেয়ে নুসরাতের (৯) লাশ উদ্ধার করে। পুলিশের সন্দেহ, স্ত্রীর পরকীয়াকে কেন্দ্র করে এ খুনের ঘটনা ঘটেছে। এজন্য জামিল শেখের স্ত্রী আরজিনা বেগমকে আটক করেছে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আরজিনা বেগমের দাবি, ডাকাতরা তার স্বামী ও মেয়েকে খুন করেছে। এমনকি তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি। তবে পুলিশ তার এসব দাবি বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে করছে না।

নিহত জামিল শেখ প্রাইভেটকার চালক ছিলেন। পুলিশের ধারণা, পরকীয়ার জের ধরেই তিনি ও তার মেয়ে নুসরাত খুন হয়েছেন। এর সঙ্গে ওই বাড়ির বাসিন্দা ও নিহত জামিল শেখের প্রতিবেশীসহ (সাবলেট) তিন থেকে চারজন জড়িত রয়েছে। বুধবার সকালে বাবা-মেয়ের লাশ উদ্ধারের পর পুলিশ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা

মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে। রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত হত্যার ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা না হলেও পুলিশ সন্দেহভাজন খুনিদের গ্রেফতারে অভিযান শুরু করেছে।

বাড়ির মালিক দুলাল পাঠান জানান, বৃহস্পতিবার ভোরে ফজরের নামাজ আদায় করতে তিনি সবে ঘুম থেকে উঠেছেন। ঠিক ওই মুহূর্তে তিনি এক নারীকণ্ঠের আওয়াজ পান। কোনো এক নারী চিৎকার করে বলছিলেন, ‘বাড়িতে ডাকাত পড়েছে, ওরা আমার স্বামী ও মেয়েকে মেরে ফেলেছে।’ কিন্তু তখনও তিনি বুঝতে পারছিলেন না আওয়াজটা কোথা থেকে আসছে।

দুলাল পাঠান জানান, কিছুক্ষণ পর তিনি বুঝতে পারেন তার বাড়ির ছাদ থেকেই চিৎকারের শব্দ আসছে। এরপর তিনি তার স্ত্রী নাসিমাকে ঘুম থেকে ডেকে তোলেন। স্ত্রীকে নিয়ে ছাদে গিয়ে আরজিনা বেগমকে চিৎকার করতে দেখেন।

তিনি আরও জানান, কী হয়েছে জানতে চাইলে আরজিনা বেগম তাদের বলেন, ‘বাড়িতে ডাকাত পড়েছে।’ এরপর তিনি চিলেকোঠার ওই ঘরের দিকে তাকিয়ে রক্ত দেখতে পান। ঘরে গিয়ে মেঝেতে জামিল শেখকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। পাশেই নিথর অবস্থায় পড়েছিল তাদের মেয়ে নুসরাত।

বাড়ির মালিক দুলাল পাঠান জানান, ততক্ষণে বাড্ডার ময়নারটেক কবরস্থান রোডের ৩০৬ নম্বর বাসার বাসিন্দাদের অনেকেই ঘুম থেকে উঠেছেন। অনেকেই ছাদে এসে এমন দৃশ্য দেখে হতবিহ্বল হয়ে পড়েন।

দুলাল পাঠান বলেন, মাসখানেক আগে বাড়ির ছাদে চিলেকোঠায় টিনশেডের দুই রুম ভাড়া নিয়ে দুই সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস শুরু করেন প্রাইভেটকার চালক জামিল শেখ। তবে একটি রুম জামিল শেখ পরিচিত এক যুবককে সাবলেট হিসেবে ভাড়া দেন।

তিনি আরও বলেন, আরজিনার কাছে কান্নার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, চারজন সন্ত্রাসী তার স্বামী ও মেয়েকে মেরে ফেলেছে। পরে বাড়ির মালিক পুলিশকে খবর দেন।

বাড্ডা থানার ওসি কাজী ওয়াজেদ আলী বলেন, ঘটনাটি রহস্যজনক। বিশেষ করে গৃহবধূ আরজিনার অসংলগ্ন কথাবার্তা সন্দেহ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। তিনি বাড়ির মালিককে প্রথমে চারজন সন্ত্রাসীর কথা বলেছিলেন। তবে ওই বাড়ির বাসিন্দাদের কেউ কিছুই দেখেননি। পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে প্রথমে তিনি (আরজিনা) ধর্ষণের শিকার হয়েছেন দাবি করলেও জেরার মুখে পরে সেখান থেকে সরে আসেন। পরকীয়া অথবা অন্য কোনো কারণে এ ঘটনা ঘটে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ওসি জানান, জামিল শেখের শরীরে শক্ত কিছু দিয়ে আঘাতের চিহ্ন ছাড়াও ধরালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। অন্যদিকে মেয়েটিকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে বলে তারা ধারণা করছেন।

বৃহস্পতিবার সরেজমিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, পাঠান ভিলা নামক ওই ভবনের সামনে শত শত লোক জড়ো হয়েছেন। তিনতলা ওই বাড়িতে ছোট ছোট অনেক রুম। তৃতীয়তলার চিলেকোঠায় ভাড়া নিয়ে থাকতেন গাড়িচালক জামিল। ওই বাড়ির বাসিন্দারা জানান, গত কোরবানির ঈদের পর স্ত্রী আরজিনা, মেয়ে নুসরাত ও ছেলে আলফিকে নিয়ে ওই বাসায় ওঠেন জামিল।

নিহত জামিল শেখের বড় ভাই দুলাল শেখ বৃহস্পতিবার বাড্ডা থানায় জানান, তিনি নিজেও একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে প্রাইভেটকার চালান। ডিউটি শেষে বুধবার বিকালে তিনি তার ভাই জামিল শেখকে গুলশানে নামিয়ে দেন।

তিনি জানান, তার ভাইয়ের সঙ্গে স্ত্রীর সম্পর্ক ভালো ছিল না। বিয়ের পর থেকেই তাদের পরিবারে অশান্তি লেগে ছিল। আরজিনা মোবাইলে বিভিন্ন লোকজনের সঙ্গে কথা বলত। এ নিয়ে তাদের ঝগড়াও হয়েছে অনেক। নতুন এই বাসায় ওঠার আগে আরজিনা রাগ করে সাভারের ইপিজেড এলাকায় তার মায়ের বাড়িতে গিয়ে দুই মাস অবস্থান করে। পরে গত মাসে তার (জামিল শেখ) ভগ্নিপতি মহসিন শিকদার সাভার গিয়ে আরজিনাকে বাড্ডায় তার স্বামীর কাছে ফিরেয়ে আনেন।

স্বজনরা জানান, জামিল শেখ গুলশান দুই নম্বরে এক ব্যক্তির ব্যক্তিগত গাড়ির চালক হিসেবে কাজ করতেন। এর আগে তিনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের গাড়িচালক ছিলেন। তার দুই সন্তানের মধ্যে আরেকজন আলফি। ছোট এই ছেলেটির বয়স পাঁচ বছর। বুধবার বাড্ডা থানার দ্বিতীয়তলায় ওসি ওয়াজেদ আলীর কক্ষে ঘোরাফেরা করছিল আলফি। এ সময় ওসির নির্দেশে পুলিশ সদস্যরা আলফিকে দেখভালসহ বিভিন্ন খাবার কিনে দিচ্ছিলেন।

নিহতের স্বজনরা জানান, জামিল শেখের বাবার নাম বেলায়েত শেখ। তাদের গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের বনগ্রামে। সাত ভাইয়ের মধ্যে জামিল শেখ ছিলেন মেঝো।

প্রসঙ্গত, এর আগে বুধবার সন্ধ্যায় কাকরাইল এলাকার একটি বাসা থেকে মা শামসুন্নাহার করিম ও ছেলে শাওনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা তাদের জবাই ও কুপিয়ে হত্যা করে। ঘটনাস্থল থেকে একটি রক্তমাখা ছুরিও উদ্ধার করা হয়েছে। যুগান্তর